শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫

শান্তি আলোচনার মধ্যেই পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে সংঘর্ষ, নিহত ৫

শুক্রবার, নভেম্বর ৭, ২০২৫
শান্তি আলোচনার মধ্যেই পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে সংঘর্ষ, নিহত ৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

তুরস্কে চলমান শান্তি আলোচনার মধ্যেই আবারো সংঘাতে জড়িয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) বিকেলের দিকে এই সংঘাতে আফগানিস্তানে কমপক্ষে পাঁচজন নিহত এবং  ছয়জন আহত হয়েছেন।

পাকিস্তান সীমান্তবর্তী আফগানিস্তানের কান্দাহার প্রদেশের জেলা স্পিন বোলদাকের জেলা হাসপাতালের এক চিকিৎসক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘আজকের ঘটনায় ৪ জন নারী এবং একজন পুরুষসহ মোট ৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৬ জন।’

অন্যদিকে পাকিস্তানি পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতের কোনও খবর পাওয়া যায়নি।

আফগান সামরিক বাহিনীর এক কর্মকর্তা এএফপিকে জানিয়েছেন, সংঘাতের স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিট এবং পাকিস্তান বাহিনী হালকা ও ভারী অস্ত্র ব্যবহার করেছে।

এদিকে নতুন করে এই সংঘাতের জন্য একে অপরকে দোষারোপ করছে আফগানিস্তান ও পাকিস্তান উভয়েই।

তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ এক এক্স বার্তা বলেন, ‘ইস্তাম্বুলে পাকিস্তানি পক্ষের সঙ্গে তৃতীয় দফার আলোচনা শুরু হলেও, দুর্ভাগ্যবশত পাকিস্তানি বাহিনী আবারও স্পিন বোলদাকে গুলি চালিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইসলামিক আমিরাতের বাহিনী, আলোচনা দলের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং বেসামরিক হতাহত রোধ করার জন্য, এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।’

তবে পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করে আফগানিস্তানের ওপর দোষ চাপিয়েছে।

পাকিস্তানের তথ্য মন্ত্রণালয় এক এক্স পোস্টে বলছে, ‘আমরা আফগানদের প্রচারিত দাবিগুলোকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করি। আফগান পক্ষ থেকেই আগে গুলি চালানো শুরু হয়েছিল, যার জবাবে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে পরিমাপিত এবং দায়িত্বশীলভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়।’ 

এদিতে বুধবার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ তালেবান সরকারকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ইস্তাম্বুলে শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হলে পাকিস্তান সম্ভাব্য সামরিক অভিযান চালাতে পারে। 

আফগানিস্তানে তালেবানকে মোকাবিলায় সামরিক সংঘাতই কি একমাত্র বিকল্প, এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে খাজা আসিফ বলেছেন, ‘‘যুদ্ধ হবেই।’’ 

খাজা আসিফ অভিযোগ করে বলেছেন, কাবুল জঙ্গিদের আশ্রয় দিচ্ছে এবং সীমান্তপারের হামলার ক্ষেত্রে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। 

অন্যদিকে আফগানিস্তান পাল্টা অভিযোগ করে বলেছে, পাকিস্তান বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে ‘‘ড্রোন যুদ্ধ’’ চালাচ্ছে এবং আইএস জঙ্গিদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে নীরব রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের আগস্টে তালেবান সরকার কাবুল দখল করার পর থেকে আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্ক নিম্নমুখি হওয়া শুরু করে। বর্তমানে তা তলানিতে ঠেকেছে। দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে তিক্ততার প্রধান কারণ,পাকিস্তানি তালেবানপন্থি রাজনৈতিক গোষ্ঠী তেহরিক-ই তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)। সন্ত্রাসী তৎপরতার কারণে বেশ কয়েক বছর আগে এই গোষ্ঠীটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে পাকিস্তান।

টিটিপির প্রধান ঘাঁটি পাকিস্তানের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়ায়। আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী এই প্রদেশটিতে নিয়মিতই টিটিপির সঙ্গে সংঘাত হচ্ছে পাকিস্তানের সেনা ও পুলিশ বাহিনীর। আর আফগানিস্তানের তালেবান সরকার টিটিপিকে মদত ও আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে— গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকবার কাবুলকে এ অভিযোগ আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে ইসলামাবাদ। তবে কাবুল প্রতিবারই এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

এরই ধারাবাহীকতায় গত ৯ অক্টোবর রাতে কাবুলে বিমান অভিযান চালায় পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। সেই অভিযানে নিহত হন টিটিপির শীর্ষ নেতা নূর ওয়ালি মেহসুদ. দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা ক্বারি সাইফুল্লাহ মেহসুদসহ টিটিপির বেশ কয়েক জন সম্মুখ সারির নেতা। এ অভিযানের ২ দিন পর ১১ অক্টোবর খাইবার পাখতুনখোয়ার সীমান্তবর্তী পাকিস্তানি সেনা চৌকিগুলো লক্ষ্য করে হামলা চালায় আফগান সেনাবাহিনী। পাকিস্তানও পাল্টা জবাব দেয়। ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত চলে এই সংঘাত। পাক সেনাবাহিনীর আন্ত:বিভাগ সংযোগ দপ্তর (আইএসপিআর)-এর তথ্য অনুসারে, সংঘাতে আফগান সেনাবাহিনীর ২ শতাধিক এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ২৩ জন যোদ্ধা নিহত হয়েছেন।

চার দিন সংঘাতের পর গত ১৫ অক্টোবর ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতিতে যায় পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। সেই যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আফগানিস্তানের কান্দাহার ও পাকতিকা প্রদেশে বিমান হামলা চালায় পাকিস্তানের সেনাবাহনী। হামলায় দুই প্রদেশে নিহত হয়েছেন ৬০ জনেরও বেশি এবং আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক। এরপর গত ৩০ অক্টোবর দোহায় আলোচনায় তীব্র বাগবিতণ্ডা হলেও যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বৃদ্ধি এবং সীমান্ত স্থিতিশীলতার জন্য পুনরায় বৈঠকে বসার অঙ্গীকার করেছিল কাবুল ও ইসলামাবাদ।

এমআই


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল