নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীর কাঁচাবাজারে নিত্যপণ্যের দামে কয়েক দিনের ধারাবাহিক ওঠানামার পর অবশেষে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। বিশেষ করে চাল, ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের বাজারে দাম কমতে শুরু করায় সাধারণ ক্রেতাদের চাপ কিছুটা লাঘব হয়েছে। তবে মাছ ও মাংসের বাজারে তেমন কোনো পরিবর্তন না আসায় সামগ্রিকভাবে ক্রেতাদের সন্তুষ্টি এখনও সীমিত।
আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া–সহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্থানে ঘুরে দেখা গেছে—সবজিসহ খাদ্যপণ্য সরবরাহ কিছুটা বাড়ায় বাজারে ক্রেতা–বিক্রেতাদের মধ্যে ভিন্ন রকম পরিবেশ তৈরি হয়েছে। অনেকে বলছেন, গত কয়েক সপ্তাহের তুলনায় বাজারে এখন স্বস্তির বাতাস বইছে।
চালে কমেছে ২–৪ টাকা, স্বস্তি মধ্যবিত্তের
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাঝারি মানের বিভিন্ন চাল—নাজিরশাইল, পোলাওর চাল, সোনামসুরী ও স্বর্ণা জাতের চাল—কেজিপ্রতি ২ থেকে ৪ টাকা কম দামে বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি পর্যায়ে আমদানি ও মিলগেট সরবরাহ বাড়ায় খুচরা বাজারে দাম কমার প্রভাব পড়েছে।
ব্রয়লার ও ডিমের বাজারে হালকা স্বস্তি
ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা কমেছে। গত সপ্তাহে যেখানে ব্রয়লার বিক্রি হয়েছে ১৭৫–১৮০ টাকায়, আজ অনেক জায়গায় তা ১৬৫–১৭০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। খামার পর্যায়ে উৎপাদন বাড়া এবং পরিবহন ব্যয় স্থিতিশীল হওয়ায় ব্রয়লার বাজারে এই পরিবর্তন এসেছে বলে বিক্রেতারা জানান।
ডিমের বাজারেও কিছুটা স্থিতিশীলতা দেখা গেছে। এক ডজন লাল ডিম ১১৮–১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কয়েক দিন আগেও একই ডিম ১৩৫–১৪০ টাকায় বিক্রি হতো।
খুচরা ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন বলেন, “সরবরাহ ভালো, চাপ নেই। তাই ডিমের দাম একটু কমতে পেরেছে। আশা করি সামনে আরও কমবে।”
মাছ ও মাংসের বাজারে স্থবিরতা—দাম অপরিবর্তিত
চালের মতো মাছ বা মাংসের বাজারে এখনো কোনো স্বস্তির খবর নেই। রুই, কাতলা, পাঙ্গাস, তেলাপিয়া—সব ধরণের মাছই আগের দামে বিক্রি হচ্ছে। রুই কেজি ৩৫০–৪৫০ টাকা, কাতলা ৩৮০–৫০০ টাকা এবং পাঙ্গাস ১৫০–২০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। মাংসের দামও অপরিবর্তিত রয়েছে—গরুর মাংস কেজি ৭৫০–৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১০৫০–১২০০ টাকা।
বাজার মনিটরিং জোরদারের কথা জানাল সংশ্লিষ্টরা
সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকার বাজার পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। চাল, ডিম ও ব্রয়লারের সরবরাহ বাড়ার কারণে দাম কমলেও অন্যান্য পণ্যে দাম কমাতে বাজার মনিটরিং আরও জোরদার করা হবে।
তিনি আরও বলেন, “মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত ক্রেতাদের চাপ কমাতে নিত্যপণ্যের বাজার আমরা সব সময় নজরদারিতে রাখছি।”
ক্রেতার আশা—সব নিত্যপণ্যে স্থিতিশীল দাম
স্বস্তির কিছু ছোঁয়া মিললেও ক্রেতারা মনে করছেন, মাছ, ডাল, তেল ও মাংসে দাম না কমলে তাদের কষ্ট প্রকৃত অর্থে কমবে না। মাসের বাজেট সামলাতে এখনও তাদের কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
তবে ক্রেতাদের অনেকেই মনে করছেন—চাল, ব্রয়লার ও ডিমের দাম কমার এই ধারাবাহিকতা যদি কয়েক সপ্তাহ ধরে রাখা যায়, তাহলে বাজারে সামগ্রিক স্থিতিশীলতা ফিরবে এবং নিত্যপণ্যের চাপ কিছুটা হলেও কমে আসবে।
এমআই