আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
রাতে মাত্র দুই থেকে চার ঘণ্টা ঘুমিয়েই কাজ চালিয়ে নেন বলে জানান জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি। তাকাইচির এ বক্তব্য তার 'ওয়ার্ক–লাইফ ব্যালেন্সের' প্রতিশ্রুতি নিয়ে দেশটির ক্লান্ত কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
চোখের নিচের ফোলাভাবের দিকে ইঙ্গিত করে তাকাইচি সংসদ সদস্যদের বলেন, তিনি অতি সামান্য ঘুমেই চলতে পারেন—এটি তার রাজনৈতিক আইডল মার্গারেট থ্যাচারের অভ্যাসের সঙ্গেও মেলে। জাপানের কুখ্যাত দীর্ঘ কর্মঘণ্টার সমস্যা তিনি কীভাবে মোকাবিলা করবেন, তা সংসদ সদস্যরা জানতে চাইলে, তখন তিনি এ কথাগুলো বলেন।
গত সপ্তাহে ভোর ৩টায় বাজেট কমিটি বৈঠকের প্রস্তুতি নিতে সহায়কদের তার দপ্তরে ডেকে পাঠিয়ে তাকাইচি হইচই ফেলে দেন। ছয় ঘণ্টা পর ওই বৈঠক শুরু হওয়ার কথা ছিল। এর কয়েক সপ্তাহ আগে জাপানের প্রথম নারী নেতা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন—'তিনি কাজ, কাজ, কাজ, কাজ আর কাজ' করবেন।
এই সপ্তাহে আইন প্রণয়ন কমিটির বৈঠকে তিনি সংসদ সদস্যদের বলেন, 'এখন আমি প্রায় দুই ঘণ্টা ঘুমাই, সর্বোচ্চ চার ঘণ্টা। এটা সম্ভবত আমার ত্বকের জন্য খারাপ।'
জাপান বহুদিন ধরে এমন এক করপোরেট সংস্কৃতি বদলাতে সংগ্রাম করছে, যেখানে কর্মীদের দীর্ঘ সময় কাজ করতে হয় এবং সন্ধ্যায় সহকর্মীদের সঙ্গে সামাজিক আড্ডাতেও অংশ নেওয়ার প্রত্যাশা থাকে।
অতিরিক্ত কর্মঘণ্টাকে 'কারোশি'—অতি-পরিশ্রমে মৃত্যু—বাড়ার জন্য দায়ী করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ক্লান্ত দম্পতিদের জন্য সন্তান লালন-পালন কঠিন হয়ে পড়ায় দেশের নিম্ন জন্মহারেও এর প্রভাব পড়ছে।
এদিকে তাকাইচি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে কর্মীদের কাছ থেকে আরও বেশি সময় কাজ করানোর চেষ্টা করতে পারেন—এমন উদ্বেগও রয়েছে। তার প্রশাসন বর্তমানে অতিরিক্ত কর্মঘণ্টার আইনগত সীমা বাড়ানোর সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করছে।
তিনি বলেছেন, কর্মপরিবেশে যেকোনো পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, 'যদি এমন এক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারি, যেখানে মানুষ তাদের ইচ্ছামতো সন্তান লালন-পালন ও পরিবারের সদস্যদের দেখভালের দায়িত্বের সঙ্গে কাজ, অবসর কাটানো এবং বিশ্রাম—সব কিছুর সঠিক ভারসাম্য রাখতে পারে, তবে সেটিই আদর্শ হবে।'
অক্টোবরের শুরুর দিকে লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর—যা পরে তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণে পথ করে দেয়—তাকাইচি বলেছিলেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে 'ওয়ার্ক–লাইফ ব্যালান্স' ধারণা ত্যাগ করবেন। তবে একই সঙ্গে তিনি এলডিপি সহকর্মীদেরও 'ঘোড়ার মতো পরিশ্রম' করার আহ্বান জানান।
তার অতিরিক্ত কর্মভার রাজনৈতিক বন্ধু এবং বিরোধী উভয়পক্ষের কাছেই উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এলডিপির সাবেক অর্থমন্ত্রী কেন সাইতো বলেছেন, তিনি 'সত্যিই' তাকাইচির স্বাস্থ্যের জন্য চিন্তিত। বিরোধী সংসদ সদস্য কাটসুহিতো নাকাজিমা তাকে আরও ঘুমানোর পরামর্শ দেন, যা প্রধানমন্ত্রী হাসি ও মাথা নাড়ার মাধ্যমে সাড়া দেন।
যদিও জাপানের অনেক মানুষই পর্যাপ্ত ঘুমাতে পারেন না, তাও খুব কমই আছেন যারা তার মতো সর্বোচ্চ চার ঘণ্টা রাতে ঘুমাতে পারেন।
মার্চে বিশ্ব ঘুম দিবসে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, জাপানের মানুষদের সাপ্তাহিক কর্মদিবসে গড় ঘুমের সময় ৭ ঘণ্টা ১ মিনিট। এটি আন্তর্জাতিক গড়ের তুলনায় ৩৮ মিনিট কম এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও কানাডার মানুষের গড় ঘুমের সময় থেকেও কম।
অক্টোবরের শেষের দিকে জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর তাকাইচির বিশ্রামের সময় খুবই কম ছিল। দায়িত্ব নেবার কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে রাষ্ট্রীয় সফরে স্বাগত জানান এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় এপেক সম্মেলনে শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
চীনের সঙ্গে জাপানের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা নিয়ে তার সাম্প্রতিক মন্তব্যের কারণে তৈরি হওয়া উত্তেজনা তার আরও নির্ঘুম রাতের কারণ হতে পারে।
এমআই