হাবিপ্রবি প্রতিনিধি:
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) ক্যাম্পাস এখন উৎসবের রঙে রাঙানো। দীর্ঘদিনের অপেক্ষার পর আয়োজিত হতে যাওয়া দ্বিতীয় সমাবর্তনকে ঘিরে শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাস, প্রত্যাশা ও আনন্দে ভরপুর। ক্যাম্পাসজুড়ে প্রস্তুতি ও আলোকসজ্জা ইতোমধ্যেই উৎসবমুখর আবহ তৈরি করেছে।আগামী ২২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে হাবিপ্রবির দ্বিতীয় সমাবর্তন। এ আয়োজনকে ঘিরে সাবেক গ্র্যাজুয়েট ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন তাঁদের অনুভূতি ও প্রত্যাশার কথা।
হাবিপ্রবি এগ্রিকালচার অনুষদের ৭ম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী মোঃ আল মাসুদ বলেন,
❝দীর্ঘ ১৪ বছরের অপেক্ষার পর হাবিপ্রবিতে আবার কনভোকেশন হতে যাচ্ছে, যা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের জন্য আনন্দের খবর। এ আয়োজন সফল করার জন্য বর্তমান প্রশাসনকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।তবে আমাদের সবচেয়ে বড় হতাশার জায়গা হলো—এখনো হাবিপ্রবিতে রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট (RG) প্রোগ্রাম চালু হয়নি। ২৪ বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও সাবেক শিক্ষার্থীরা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে রেজিস্টার্ড হতে পারেনি। এর ফলে একটি অফিশিয়াল এলাম্নাই এসোসিয়েশন গঠন করাও সম্ভব হয়নি!যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন ও নেটওয়ার্কিং-এর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।RG প্রোগ্রাম চালু হলে সাবেক শিক্ষার্থীরা রেজিস্টার্ড হওয়ার সুযোগ পাবে, আর সেই রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েটদের মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠিত হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক এলাম্নাই এসোসিয়েশন। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন, নেটওয়ার্কিং, ক্যারিয়ার সাপোর্টসহ নানা ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।আমরা সবাই চাই, নিয়মিত কনভোকেশনের পাশাপাশি দ্রুত RG প্রোগ্রাম চালুর ব্যবস্থা হোক এবং এলাম্নাই এসোসিয়েশন বাস্তবে রূপ পাক। সাবেক ভাই–বোনদের প্রতি প্রত্যাশা, মতভেদ ভুলে সবাই একসাথে এগিয়ে আসবেন। কারণ হাবিপ্রবির উন্নয়নে একসাথে কাজ করা ছাড়া আমাদের সামনে কোনো বিকল্প নেই।❞
বর্তমান শিক্ষার্থী চামেলী অধিকারী (ফুড ইন্জিনিয়ারিং বিভাগ,২৪ ব্যাচ) বলেন,
❝সমাবর্তন আসতে আর মাত্র দুই দিন,পুরো ক্যাম্পাসে এখন এক উৎসবমুখর পরিবেশে বদলে গেছে ঝলমলে লাইট, ছোট বাবুদের ক্যাম্পাস পরিভ্রমণ আর প্রস্তুতির ব্যস্ততা, সবকিছু মিলেই জীবন্ত লাগছে ক্যাম্পাস ।আর সিনিয়রদের গাউন পরে হাঁটা, তাদের সফলতার গল্প হাস্যজ্জ্বল মুখ দেখে আমাদের নবীনদের মধ্যেও ভবিষ্যৎ সমাবর্তনের স্বপ্ন জেগে উঠবে ।সর্বোপরি, আয়োজন নিয়ে আমার সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা পুরো অনুষ্ঠানটা যেন HSTU-এর সুনাম, ঐতিহ্য আর বৈশ্বিক মানকে আরও তুলে ধরে।আমি চাই এই সমাবর্তনটা শুধু একটি অনুষ্ঠান না হয়ে পুরো ক্যাম্পাসের জন্য একটি প্রেরণামূলক উদযাপন হয়ে উঠুক।❞
গ্র্যাজুয়েট তোফাজ্জল হোসেন তপু (পরিসংখ্যান ১৭ ব্যাচ)জানান,
❝২য় সমাবর্তন শুধু একটি দিন নয়, এটি স্বপ্ন পূরণের দিন, পরিশ্রমের স্বীকৃতি এবং ভবিষ্যতের দ্বার উন্মোচন। এটি শুধু সার্টিফিকেট পাওয়ার মুহূর্ত নয়, বরং অনুভব—“হ্যাঁ, আমি পেরেছি।” পুরোনো শিক্ষার্থীদের জন্য এটি স্মৃতির পথ, বর্তমান শিক্ষার্থীদের জন্য এটি অনুপ্রেরণা—সামনে এগিয়ে যাওয়ার আত্মবিশ্বাস।এই সমাবর্তন আমাদের শেখায়, আমরা কেবল ডিগ্রি পাওয়া মানুষ নই; আমরা সেই প্রজন্ম, যারা কঠিন সময়েও স্বপ্ন ধরে রেখেছি, ধৈর্য, চেষ্টা এবং বিশ্বাস দিয়ে পথ তৈরি করেছি। হাবিপ্রবি শুধু শিক্ষা দেয়নি, দিয়েছে সম্পর্ক, মূল্যবোধ এবং একটি পরিচয়। ডিগ্রি হয়তো অর্জন, কিন্তু হাবিপ্রবিয়ান হওয়া—আজীবনের গর্ব।❞
বর্তমান শিক্ষার্থী রাকিবুল হাসান রাকিব (পদার্থবিজ্ঞান-২১ ব্যাচ) বলেন,
❝দীর্ঘ ১৫ বছর পর হাবিপ্রবিতে ২য় সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ২০১০ সালের পর প্রায় ৮ হাজার গ্র্যাজুয়েট এতে অংশ নেবেন।এখন ক্যাম্পাস যেন এক নতুন রূপ নিয়েছে। চারপাশে সাজসজ্জা, ব্যানার, আলোকসজ্জা।সব মিলিয়ে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় একটি উৎসবের শহরে পরিণত হয়েছে। যেদিকে তাকাই শুধু প্রস্তুতি আর ব্যস্ততা।এই পরিবেশ আমাদেরও বিশেষভাবে উদ্দীপ্ত করছে। মনে হচ্ছে, আমি যেন একটি ঐতিহাসিক ঘটনার খুব কাছ থেকে সাক্ষী হতে যাচ্ছি।বর্তমান শিক্ষার্থী হিসেবে আমি গর্বিত যে, আমি এই মুহূর্তের সাক্ষী।❞
সদ্য-গ্রাজুয়েট হাবিপ্রবি ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী ইমাম মেহেদী মহান বলেন,
❝হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করতে পারা আমার জন্য এক বিশেষ সম্মান ও আনন্দের মুহূর্ত। সদ্য গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পরই সমাবর্তনের মঞ্চে নাম তোলার সুযোগ পাওয়া—এটা কেবল ব্যক্তিগত সাফল্য নয়; বরং আমার পরিবার,শিক্ষকবৃন্দ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সহযোগিতার যৌথ অর্জন।শিক্ষকদের আন্তরিক দিকনির্দেশনা, নিরলস পরিশ্রম এবং সহপাঠীদের বন্ধুত্বপূর্ণ সমর্থনের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে তাদের অবদান আজকের এই অর্জনকে আরো অর্থবহ করেছে।এই সমাবর্তন শুধু ডিগ্রি গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা নয়; এটি হাবিপ্রবির ক্রমাগত অগ্রযাত্রা, সময়োপযোগী শিক্ষা এবং তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকারের প্রতীক। নতুন অধ্যায়ের পথে যাত্রা শুরু করার এই মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা আরও গভীর হলো।❞
একে