সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশে বড় ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা কম: বিশেষজ্ঞ

সোমবার, নভেম্বর ২৪, ২০২৫
বাংলাদেশে বড় ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা কম: বিশেষজ্ঞ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশে পরপর কয়েক দফা ভূমিকম্প হওয়ায় জনমনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তবে শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ, গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপকরা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের কারণে আতঙ্কিত হবার কোনো কারণ নেই; বরং প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ সময় একজন বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, বাংলাদেশে বড় ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা আপাতত নেই।

সোমবার (২৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জরুরি সভায় বিশেষজ্ঞরা এই মতামত দেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এতে সভাপতিত্ব করেন।

বৈঠকে উপদেষ্টাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, দুর্যোগ ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) প্রফেসর মো. জয়নুল আবেদীন; বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী; বুয়েটের অধ্যাপক তাহমীদ মালিক আল-হুসাইনী; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. জিল্লুর রহমান; চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আখতার; বুয়েটের অধ্যাপক ড. তানভীর মনজুর; বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. মমিনুল ইসলাম; আবহাওয়াবিদ মো. রুবাইয়্যাত কবীর; ভূতত্ত্ববিদ ড. রেশাদ মো. ইকরাম আলী; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ ড. মো. শাখাওয়াত হোসাইন; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ঝুঁকিপূর্ণতা ইনস্টিটিউটের পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান খান এবং বুয়েটের অধ্যাপক ইসরাত ইসলাম।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভূমিকম্পকে ঘিরে বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক গুজব তৈরি হয়েছে। বলা হচ্ছে—৪৮ ঘণ্টার মধ্যে… ১০ দিনের মধ্যে… ১ মাসের মধ্যে… বড় মাত্রার ভূমিকম্প হবে—এ ধরনের অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে।

তারা বলেন, ভূমিকম্প কখন হবে—কেউ বলতে পারে না। কোন অঞ্চলে কত বছরে কতগুলো ভূমিকম্প হয়েছে এবং তাদের মাত্রা কী ছিল, তা দেখে একটি সময়সীমা অনুমান করা যায়। কিন্তু নির্দিষ্ট দিন-তারিখ-সময় বলা যায় না।

বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জিল্লুর রহমান বলেন, ভূমিকম্পের উৎস ও উৎপত্তিস্থল নিয়ে পর্যালোচনা করে দেখতে হবে—বাংলাদেশ ও এর আশেপাশে কতগুলো সোর্স আছে এবং সেগুলোর কারণে শেকিং লেভেল কী হতে পারে তা নিরূপণ করতে হবে।

এই বিশেষজ্ঞ বলেন, বাংলাদেশে বড় মাত্রার ভূমিকম্প হবার সম্ভাবনা কম, কারণ আমাদের এলাকাটি স্বল্প ভূমিকম্পপ্রবণ। তবে আমাদেরকে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রাখতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আখতার বলেন, জনসচেতনতা তৈরিতে তরুণদের কাজে লাগানো জরুরি। “ইনডোরে, আউটডোরে, ব্যক্তি পর্যায়ে ও প্রতিষ্ঠানে—চার স্তরে করণীয় পরিকল্পনা তৈরি করে সবার কাছে পৌঁছাতে হবে। তরুণদের কাজে লাগিয়ে ন্যাচারাল হ্যাজার্ড প্ল্যান ও প্রযুক্তিগত উদ্যোগ নিলে সবাই মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারবে।’

চুয়েটের অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘মন্ত্রণালয় তাদের আওতাধীন স্থাপনাগুলোর মূল্যায়ন করতে পারে। হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ—এসব খাতে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূমিকম্পবিষয়ক প্রোগ্রাম চালু করলে আতঙ্ক নয়, বরং সচেতনতা তৈরি হবে।’

এমআইএসটি’র অধ্যাপক মো. জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘সবাইকে বোঝাতে হবে যে আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। আমাদের সম্পদের মধ্যে থেকেই কাজ করতে হবে। করণীয় সম্পর্কে আরও সুনির্দিষ্ট তথ্য মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে। মানুষকে মাথা ঠান্ডা রাখার বিষয়ে সচেতন করতে হবে। কোন এলাকায় খোলা জায়গা আছে, কোথায় জমায়েত হওয়া যায়—তা জানাতে হবে এবং সে অনুযায়ী মহড়া করতে হবে। বাসাবাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মহড়ার ব্যবস্থা জরুরি।’

বিশেষজ্ঞরা বলেন, হাসপাতালগুলোর কোনো ধরনের ঘাটতি আছে কি না, ভবনগুলোর মান ঠিক আছে কি না, জরুরি পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার সক্ষমতা আছে কি না তা মূল্যয়ন করতে হবে এবং সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখতে হবে।

গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী (সিভিল) মো. খালেকুজ্জামান চৌধুরী জানান, ইতোমধ্যেই একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে ভূমিকম্পের ফলে ফাটল ধরা ভবনের ছবি সংগ্রহ শুরু হয়েছে। এর মধ্য থেকে দুই শটির বেশি ভবনের মূল্যায়ন করা হয়েছে। বেশিরভাগই পার্টিশন দেয়ালে ফাটল দেখা যাচ্ছে। সফটওয়্যারটির মাধ্যমে দ্রুত ফাটল ধরা ভবনের মূল্যায়ন ও পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে।

বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়েছে—বিশেষজ্ঞদের পাঠানো লিখিত সুপারিশ নিয়ে সরকার দ্রুত সময়ে আলোচনা করে টাস্কফোর্স গঠন করবে। ভূমিকম্পের বিষয়ে আশু করণীয় নিয়ে গঠিত টাস্কফোর্সে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা যুক্ত থাকবেন।

এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল