নিজস্ব প্রতিবেদক:
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, গণভোট অধ্যাদেশ-২০২৫ অনুযায়ী আসন্ন গণভোটে ভোটাররা পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। ভোটারদের সুবিধার্থে গণভোটের ব্যালট হবে ভিন্ন রংয়ের। আজ বা আগামীকালের মধ্যে গেজেট প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা।
আজ মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। এর আগে সকালে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠকে এই অধ্যাদেশটি চূড়ান্ত অনুমোদন পায়।
আইন উপদেষ্টা জানান, জাতীয় নির্বাচনের ভোটের দিনেই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। ভোটকেন্দ্রেই গণভোটের জন্য আলাদা ব্যালটের ব্যবস্থা থাকবে। এর মাধ্যমে ভোটাররা একই দিনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভোট প্রদানের সুযোগ পাবেন।
তিনি আরও জানান, পোস্টাল ব্যালটের সুবিধা চালু হওয়ার ফলে বিশেষ পেশা বা কারণে যারা সশরীরে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হতে পারবেন না, তাঁরাও তাঁদের সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করতে সক্ষম হবেন।
গণভোট নিয়ে সরকার ৩ মাস ধরে ব্যাপক প্রচার চালানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। আসিফ নজরুল জানান, নির্বাচন কমিশন (ইসি), সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয় এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সম্মিলিতভাবে এই প্রচার কার্যক্রমে অংশ নেবে। এই প্রচারের লক্ষ্য হলো গণভোটের প্রক্রিয়া, গুরুত্ব এবং পোস্টাল ব্যালট ব্যবহারের পদ্ধতি সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে অবগত করা।
আইন উপদেষ্টা জানান, জুলাই সনদের আলোকে গণভোটের ব্যালটে উপস্থাপনীয় প্রশ্ন হবে, 'আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং জুলাই জাতীয় সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলোর প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করছেন?' এর হ্যাঁ/না উত্তর দিতে হবে। প্রশ্নগুলো হবে:
ক. নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হবে।
খ. আগামী সংসদ হবে দুই কক্ষবিশিষ্ট। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ জন সদস্যবিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে এবং সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হবে।
গ. সংসদে নারীর প্রতিনিধি বৃদ্ধি, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্থানীয় সরকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে যে ৩০টি প্রস্তাবে জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী দলগুলো বাধ্য থাকবে।
ঘ. জুলাই সনদে বর্ণিত অন্যান্য সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়ন করা হবে।
এর আগে গত ১৩ নভেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে সরকার কাজ করছে বলে জানান। নির্বাচনের দিনই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি। এরপর গত ২০ নভেম্বর উপদেষ্ট পরিষদের বৈঠকে গণভোট আইনের নীতিগত অনুমোদন করে উপদেষ্টা পরিষদ।
এমআই