ইবতেশাম রহমান সায়নাভ:
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ধাক্কায় মানবিকতা যেন হারাতে চলেছে৷ মানুষ কৃত্রিম থেকে আরও কৃত্রিম হচ্ছে। প্রযুক্তির দ্রুতগামীতায় মানুষ নিজের চিন্তাশীলতা ব্যবহারের প্রয়োজনবোধ করছে না। মানুষ এখন ব্যস্ত থেকে ব্যস্ততর, তথ্যের কল্যাণে গতিশীল। এই গতিশীলতার যুগে মানুষ নিজের মানবিকতাকে পিছে ফেলেছে। আবদ্ধ হয়েছে ডাটা, পরিসংখ্যান, কিম্বা এলগোরিদমের জালে।
২১ শতকের জয়ন্তীতে প্রযুক্তির যুগান্তকারী উদ্ভাবন মানুষকে আরও সম্বৃদ্ধ করেছে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স আমাদের জীবনযাত্রার মানে অকল্পনীয় মাত্রা যোগ করেছে। আমাদের এখন আর কষ্ট করে তথ্য খুঁজে বেড়ানোর প্রয়োজন নেই। ছোট্ট একটি ক্লিকেই সব ডাটা এখন আমাদের সামনে হাজির। তাই মানুষেরও কষ্ট করে চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। মানুষ নিমজ্জিত হচ্ছে প্রযুক্তির আলস্যতায়। প্রশ্ন হচ্ছে, ডিজিটাইজেশনের এই যুগে মানুষ কি তার মানবিকতা ধরে রাখতে পারবে?
বর্তমান সমাজের মানুষ এক অদৃশ্য নেটওয়ার্ক সিস্টেমে বন্দী। ডিজিটাল নেটওয়ার্ক আমাদের চারপাশ থেকে ঘিরে নিয়েছে। আমাদের অধিকাংশ কার্যকলাপ এখন বৃহৎ এক নেটওয়ার্কের জালে আবদ্ধ হয়েছে। আমরা প্রতিনিয়ত নিজেদের তথ্য এই নেটওয়ার্কে প্রদান করে প্রযুক্তিকে আর শক্তিশালী করছি। নিজের চিন্তা, সিদ্ধান্ত, বিশ্বাসের সব তথ্য প্রদান করে প্রযুক্তিকে প্রতিনিয়ত আচরণগত প্রশিক্ষন দিচ্ছি।
পরিসংখ্যানের আর গণিতের সূত্রে এসব তথ্য ফেলে প্রযুক্তি এখন আমাদের থেকেও আমাদের বেশি চিনে। আমরা যে এলগরিদমের পূজা করছি তা আমাদের চিন্তায় এক নতুন বিশ্বাস জন্ম দিয়েছে। এলগরিদম অনুযায়ী মানুষের আচরণ ৯৫% নির্ভুলভাবে অনুমান করা সম্ভব।
প্রযুক্তির এই তীব্র স্রোতে মানুষ তার নিজস্বতা হারিয়েছে। জটিল প্রশ্নের জবাব খুঁজতে আর নিজের চিন্তাশক্তি কাজে না লাগিয়ে সাহায্য নিচ্ছে প্রযুক্তির। একসময় মানুষের জীবন ছিলো স্বতঃস্ফূর্ত এবং স্বাধীনতায় ভরা। প্রযুক্তির প্রভাবে নয়, মানুষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতো নিজের বোধগম্যতায়।
আজ সেসব সোনালী অতীত। মানবজাতি উন্নততর হয়েছে। তথ্যের সহযোগিতায় তাদের দুরদর্শিতা বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু তারা হারিয়েছে তার অন্তর্দৃষ্টির উপলব্ধতা।
তাই আজ আমাদের মানবিক দৃষ্টিকোণ পুনরুদ্ধার করতে হবে। অন্তরের বিবেকবোধকে জাগ্রত করতে হবে। খুঁজতে হবে নিজের সৃষ্টির অর্থ। উপলব্ধি করতে হবে যে মানবিকতা ছাড়া এই প্রকৃতি টিকে থাকতে পারবে না।
লেখক: ইবতেশাম রহমান সায়নাভ
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ,
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়,রংপুর।