বুধবার, ডিসেম্বর ১৭, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডি বিচে রোববারের হামলায় পুলিশের গুলিতে নিহত সন্দেহভাজন বন্দুকধারীর আদি বাড়ি ভারতের হায়দ্রাবাদে। তার পরিবারের সদস্যরা ওই ব্যক্তির 'উগ্রবাদী মানসিকতা' সম্পর্কে কিছুই জানতেন না বলে মঙ্গলবার জানিয়েছে ভারতীয় পুলিশ।
এদিকে, পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকা দ্বিতীয় সন্দেহভাজন বন্দুকধারী কোমা থেকে জ্ঞান ফিরে পেয়েছেন। বুধবারের মধ্যেই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হতে পারে।
নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশের কমিশনার ম্যাল ল্যানিয়ন জানান, ২৪ বছর বয়সী নাভেদ আকরাম মঙ্গলবার বিকেলে জ্ঞান ফিরে পান। বুধবার সকালে এবিসি রেডিওকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'হাসপাতালে থাকা অবস্থাতেই তাকে হেফাজতে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। ওষুধের প্রভাব কমে আসা এবং আইনি পরামর্শক উপস্থিত হওয়ার জন্য তদন্তকারীদের অপেক্ষা করতে হয়েছে।'
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেন, তিনি আশা করছেন 'আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই' নাভেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হবে।
ইহুদিদের ধর্মীয় উৎসব 'হানুকা' চলাকালীন ওই হামলায় ১৫ জন নিহত হন। এটি গত ৩০ বছরের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় সংঘটিত সবচেয়ে বড় গুলিবর্ষণের ঘটনা। ইহুদি সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে চালানো এই হামলাকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হিসেবে তদন্ত করা হচ্ছে।
নিহতদের মধ্যে এলি শ্ল্যাঞ্জার ও ইয়াকভ লেভিতানের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া আজ অনুষ্ঠিত হবে। হামলায় আহত ২২ জন সিডনির বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তেলেঙ্গানার পুলিশ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, হামলাকারী ৫০ বছর বয়সী সাজিদ আকরাম হায়দ্রাবাদ থেকে বাণিজ্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে ১৯৯৮ সালের নভেম্বরে কাজের সন্ধানে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান এবং সেখানে ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত এক নারীকে বিয়ে করেন। তাঁদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
পারিবারিক প্রয়োজনে সাজিদ ছয়বার ভারতে গিয়েছিলেন, তবে বাবার মৃত্যুর সময় তিনি দেশে ফেরেননি। পুলিশ জানায়, ১৯৯৮ সালে দেশ ছাড়ার আগে তার বিরুদ্ধে কোনো অপরাধমূলক রেকর্ড ছিল না। তার পরিবার কিংবা স্বজনদের কেউই তার উগ্রবাদী মানসিকতা বা কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। এমনকি উগ্রবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ার পেছনে ভারতের কোনো যোগসূত্র নেই বলেও উল্লেখ করেছে পুলিশ।
অস্ট্রেলীয় পুলিশ জানিয়েছে, গত মাসে সাজিদ আকরাম ও তার ছেলে নাভেদ ফিলিপাইনে গিয়েছিলেন। বাবা ভারতীয় পাসপোর্ট এবং ছেলে অস্ট্রেলীয় পাসপোর্ট ব্যবহার করে ভ্রমণ করেন। সেখানে তারা কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কি না বা কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে, হামলায় নিহত সর্বকনিষ্ঠ ভুক্তভোগী ১০ বছর বয়সী মাটিল্ডার বাবা-মা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বন্ডি বিচে আয়োজিত এক স্মরণসভায় আবেগঘন বক্তব্য দেন। ইউক্রেন থেকে অস্ট্রেলিয়ায় আসা মাইকেল ও ভ্যালেন্টিনা দম্পতি জানান, অস্ট্রেলিয়ায় জন্ম নেওয়া তাদের প্রথম সন্তান হওয়ায় তারা মেয়ের নাম রেখেছিলেন মাটিল্ডা।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাবা মাইকেল উপস্থিত জনতাকে বলেন, 'আমার মনে হয়েছিল, মাটিল্ডাই হতে পারে সবচেয়ে উপযুক্ত অস্ট্রেলীয় নাম।' মা ভ্যালেন্টিনা বলেন, 'আমি কল্পনাও করিনি যে আমার মেয়েকে আমি এখানেই হারাব।'
হামলায় নিহত অন্যদের মধ্যে রয়েছেন ৮৭ বছর বয়সী হলোকাস্ট থেকে বেঁচে যাওয়া আলেকজান্ডার ক্লেইটম্যান এবং ৮২ বছর বয়সী সমাজসেবী মারিকা পোগানি। প্রিয় বন্ডি বিচেই প্রাণ হারান পোগানি। এছাড়া হামলাকারীদের থামানোর চেষ্টা করতে গিয়ে নিহত হন বরিস গারম্যান (৬৯) ও তার স্ত্রী সোফিয়া গারম্যান (৬১)। সাজিদ আকরামের দিকে ইট ছুড়ে মারা রিউভেন মরিসনও গুলিতে নিহত হন।
এমআই