রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫

বেঁধে কুপিয়ে তরুণের হাত-পা বিচ্ছিন্ন, জামায়াতের ২ সর্মথক গ্রেপ্তার

রোববার, ডিসেম্বর ২৮, ২০২৫
বেঁধে কুপিয়ে তরুণের হাত-পা বিচ্ছিন্ন, জামায়াতের ২ সর্মথক গ্রেপ্তার

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি:

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় আবু সুফিয়ান (২৫) নামের এক তরুণকে বিদ্যুতের খুটিতে বেঁধে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়েছে। এতে ওই তরুণের দুই হাত ও এক পা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। এছাড়া এই ঘটনায় শিবগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের ও জামায়াতে ইসলামীর দুই সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আহত যুবক আবু সুফিয়ান সিজু শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর এলাকার বাজিতপুর গ্রামের রবিউল ইসলামের ছেলে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, শাহ আলম (২২) ও তার ভাই আবদুর রাজ্জাক (২৩)। তাদের বাড়ি শ্যামপুর খোচপাড়া গ্রামে। রাজ্জাক একটি মাদরাসার শিক্ষক ও উমরপুর ঘাটে তার ওষুধের দোকান আছে। সেই দোকানের কাছেই ঘটনাটি ঘটেছে বলে জানা যায়। এছাড়া তারা দুইজন জামায়াতের কোনো পদ পদবিতে না থাকলেও দলটির মিছিল ও সভা সমাবেশে অংশগ্রহণ করতেন বলেও স্থানীয়ভাবে জানা যায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সুফিয়ানের ফুফাতো ভাইয়ের মেয়ের সঙ্গে পাশের এলাকার মোস্তাক নামে এক ছেলের প্রেমের সম্পর্ক ছিল এবং প্রেমের সম্পর্ক করে তারা পালিয়ে বিয়েও করে। পরে মেয়ের বাবা (সুফিয়ানের ফুফাতো ভাই) মেয়েকে নাবালক দেখিয়ে আদালতে মামলা করে। এতে মেয়ে ও ছেলে উভয়কে জেলে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে মেয়ে তার বাবার কাছে ফিরে আসতে চাইলে আদালতের মাধ্যমে মেয়েকে জামিন দেওয়া হয়। এরপর থেকে সুফিয়ানের ভাতিজি তাদের বাড়িতেই থাকে। কিছু দিন থেকে সেই মোস্তাক আবারও সুফিয়ানের বাড়ির আশপাশে ঘোরাঘুরি করে এবং একপর্যায়ে জোর করে মেয়েকে তুলে নিয়ে যেতে চায়। এতে সুফিয়ান বাধা দেয় এবং মোস্তাকের সঙ্গে তার হাতাহাতি ও কথাকাটা কাটি হয়। পরে এলাকাবাসীর মাধ্যমে উভয়পক্ষকে থামানো হয়। গত ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যার দিকে সুফিয়ান উমরপুর ঘাটের সাকোর ওপর দাঁড়িয়ে ছিলেন। এই সময় অভিযুক্ত কয়েকজন মিলে তার দুই হাত ও পায়ে এলোপাতাড়িভাবে কোপ দেয়। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসে এবং প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রের্ফাড করা হয়। বর্তমানে আবু সুফিয়ান সিজু রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন আছেন।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিজু গণমাধ্যমকে জানান, পরিকল্পিতভাবে তাকে দেড় ঘণ্টা ধরে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে কুপিয়েছে জামায়াত–শিবিরের কর্মীরা। তাদের মধ্যে বিষের দোকানদার আব্দুর রাজ্জাক, শরৎনগর গ্রামের আনোয়ার এবং চামা বাজারের পোল্ট্রি ব্যবসায়ী আবু সাঈদের ভাই নূরসহ আরও কয়েকজন জড়িত ছিলেন বলে দাবি করেন তিনি।

এদিকে এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে সুফিয়ানের বাবা রবিউল ইসলাম বাদী হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ১২ থেকে ১৫ জনকে আসামি করে শিবগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেছেন। পরে অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।

অপরদিকে আরও জানা যায়, আবু সুফিয়ান সিজু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চিহ্নিত তালিকাভুক্ত কিশোর গ্যাং লিডার। তার নামে চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া এই ঘটনায় দুইজনকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের চামা বাজারে শ্যামপুর ইউনিয়ন সন্ত্রাস বিরোধী ঐক্যমঞ্চের ব্যানারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই গোপাল চন্দ্র মন্ডল বলেন, আবু সুফিয়ান সিজুর বাবা বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। দুইজন আসামি গ্রেপ্তার আছে। এছাড়া আবু সুফিয়ান সিজুর নামেও থানায় একটি মামলা আছে বলেও জানান তিনি।

শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ন কবির বলেন, আবু সুফিয়ান সিজুর ঘটনায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় আছে কি না তা জানি না। তাদেরকে হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এটা কোনো রাজনৈতিক মামলা না। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।

যা বলছেন স্থানীয় জামায়াত

আবু সুফিয়ান সিজুর ওপর হামালার ঘটনায় জামায়াতের নাম জড়ানোর ঘটনায় প্রতিবাদ জানায়েছে দলটি। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর)  শিবগঞ্জ উপজেলা জামায়াতে আমির মাওলানা সাদিকুল ইসলাম ও সেক্রেটারি মো. বাবুল ইসলাম এই প্রতিবাদ জানান।

প্রতিবাদে জামায়াত জানায়, গত ২৪ ডিসেম্বর রাতে উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের উমরপুর ঘাট এলাকায় সিজু নামীয় এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে জখম করার ঘটনায় জামায়াত ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে বাংলাভিশন টেলিভিশন ও অনলাইন এবং জনমত বিডিসহ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে ‘শিবগঞ্জে জামায়াত-শিবিরের নির্মমতা’ মর্মে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে যেটি আমাদের নজরে এসেছে। জামায়াত ও শিবিরকে জড়িয়ে আমরা এই মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আহত সুফিয়ান একজন চিহ্নিত ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ ও ডাকাত। ইতোমধ্যেই তার অপকর্মে অতিষ্ঠ বেশ কিছু ব্যক্তি মানববন্ধন করে তা থেকে মুক্তি ও তার বিচার দাবি করেছে । এই অনাকাঙ্খিত ঘটনা তার ব্যক্তিগত অপকর্মেরই প্রতিফল কিনা তা খতিয়ে দেখা উচিত। তাছাড়া সংবাদে ‘চাঁদা না পেয়ে হামলা করা হয়েছে’ এমন উদ্ভট কথাও লিখা হয়েছে যা সম্পূর্ণ হাস্যকর। কেননা জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে চাঁদাবাজির দূরতম কোনো সম্পর্ক নেই সেটি দেশবাসী ভালোভাবেই জানে। বরং আহত সুফিয়ান নিজেই একজন চিহ্নিত চাঁদাবাজ যার স্বপক্ষে ভুক্তভোগীরা নিজেরা মানববন্ধনে বক্তব্য দিয়েছে। তারপরও আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া কখনোই সমীচীন নয়, অতএব উক্ত ঘটনার সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি । আমরা বলতে চাই, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনে শিবগঞ্জ উপজেলাবাসী জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে যে জনমত গড়ে উঠেছে এতে ঈর্ষান্বিত হয়ে একটা মহল জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে অপতথ্য ছড়ানোর চেষ্টা করছে এটি তারই অংশ। আমরা সব সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই না করে এমন অসত্য সংবাদ প্রকাশ না করার এবং তথ্য সংগ্রহ ও প্রকাশের ক্ষেত্রে আরো সচেতনতা অবলম্বনের আহ্বান জানাচ্ছি ।

শিবগঞ্জ উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি বাবুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তারকৃত দুইজন জামায়াতের সর্মথক। তবে তারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই। তাদেরকে পরিকল্পিত ভাবে ফাঁসানো হয়েছে। এছাড়া আবু সুফিয়ান সিজু এলাকায় ঘৃণিত ব্যক্তি। তার অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। তার নামে চাঁদাবাজি ও ছিনতাইসহ থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

একে 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল