বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

নিউ ইয়র্কে ডা. ফেরদৌসের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলা

শনিবার, আগস্ট ২১, ২০২১
নিউ ইয়র্কে ডা. ফেরদৌসের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলা

সময় জার্নাল ডেস্ক : প্রায় এক বছর আগে করা অভিযোগের ভিত্তিতে নিউ ইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসক ফেরদৌস খন্দকারের বিরুদ্ধে অবশেষে আদালতে অভিযোগ দায়ের করেছেন পাঁচ নারী। নিউ ইয়র্কের কুইন্স সুপ্রিম কোর্টে এ মামলাটি দায়ের করেন তারা। এদের মধ্যে চারজন বাংলাদেশি। এরা সবাই জ্যাকসন হাইটসে থাকেন।

আদালতে দায়েরকৃত একটি ক্লাস-অ্যাকশন মামলা থেকে জানা যায়, ফেরদৌস খন্দকার বিভিন্ন সময়ে চিকিৎসার নামে রোগীদের যৌন নির্যাতন করেছেন। তিনি ১৪ বছরের কম বয়সী মেয়েদেরকে অযৌক্তিক স্তন পরীক্ষার নামে শ্লীলতাহানি করেছেন। পরীক্ষার নামে শ্লীলতাহানির ঘটনা প্রায় ২০ বছর ধরে চালিয়ে আসছেন তিনি।

বাদীদের অভিযোগ, ফেরদৌস খন্দকার কয়েক দশক ধরে চিকিৎসা সেবা প্রদানের প্রচেষ্টায় কয়েক ডজন নারী ও তরুণীকে যৌন নিপীড়ন ও হয়রানি করেছেন। দুই দশকব্যাপী এ ঘটনাগুলিতে তিনি অকারণে তাদের স্তন স্পর্শ করেছিল। এমনকি যখন তারা গলা ব্যাথার মতো লক্ষণগুলোর জন্য নিয়মিত তার কাছে যেতেন। কিছু ক্ষেত্রে তিনি তাদের আংশিক কাপড় খুলতেও নির্দেশ দিয়েছিলেন। এজন্য ফেরদৌস খন্দকারকে ‘একজন সিরিয়াল যৌন শিকারি’ বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন।

ফেরদৌস খন্দকারের এ ধরনের আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী গত বছর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘটনা প্রকাশ করায় ফেরদৌস খন্দকার তিনজনের বিরুদ্ধে ১০ লাখ ডলারের মানহানির মামলা করেছিলেন। সম্প্রতি আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন এবং বিবাদির আইনজীবীর পারিশ্রমিক পরিশোধ করার জন্য ফেরদৌস খন্দকারকে নির্দেশ দেন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন ভুক্তভোগীদের আইনজীবী সুসান ক্রুমিলার।

এ মামলা প্রসঙ্গে আইনজীবী সুসান ক্রুমিলার বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যে, ফেরদৌস খন্দকার তার এ কর্মকাণ্ডের জন্য সারা জীবন অনুশোচনা করবেন। কারণ, তার মতো লোকের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য বিশেষ সাহস দরকার। তিনি মনে করেছিলেন মানহানি মামলা করলে হয়রানির শিকার নারীদের চুপ করিয়ে দেওয়া যাবে। কিন্তু হিতের বিপরীত হয়েছে। অবমাননার শিকার নারীরা এখন এগিয়ে এসেছেন।

এ মমলার পর ফেরদৌস খন্দকার ও তার অ্যাটর্নি কারো কাছে থেকে কোনো মন্তব্যে পাওয়া যায়নি।

মানহানির মামলায় আইনি নথিতে ফেরদৌস খন্দকার বলেছিলেন, তিনি তার রোগীদের যৌন নিপীড়ন করেন না। এমনকি তিনি কখনও কাউকে শ্লীলতাহানি করেননি। তিনি যে কারণে রোগী দেখছেন এর বাইরে প্রয়োজন ছাড়া ‘স্তন’ পরীক্ষাও করেননি। তার মানহানির দাবি খারিজ করে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন।

সুসান বলেন, ‘আমার কল্পনার বাইরে ক্লাস-অ্যাকশন মামলাটিতে ফেরদৌস খন্দকারের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগের বিবরণ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এক মহিলা তার মায়ের সাথে জ্যাকসন হাইটসের ৩৭তম এভিনিউতে ফেরদৌস খন্দকারের অফিসে যাওয়ার বর্ণনা দিয়েছেন। অফিসে থাকাকালীন ২৩ বছর বয়সী ওই নারী ফেরদৌস খন্দকারকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, তিনি কি তাকে “নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা” দিতে পারেন? তিনি তাকে একটি পরীক্ষা কক্ষে নিয়ে যান। ফেরদৌস তাকে বলেন পরীক্ষার আগে একটি চেক-আপ করা দরকার। এসময় তিনি রোগীর শার্টটি টেনে তোলার চেষ্টা করেন। ভুক্তভোগী নারী তা জোর দিয়ে প্রতিরোধ করেন। শেষ পর্যন্ত তার শার্টটি তার ঘাড় পর্যন্ত টেনে আনেন। পরে তিনি স্টেথোস্কোপটি ওই নারীর ব্রা’র নিচে রেখেছিলেন। এসময় ফেরদৌস প্যাডিং এবং টাইটনেস সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন। ফেরদৌস তার বুকের দিকে তাকিয়ে ছিলেন এবং আঙ্গুল দিয়ে তার স্তনবৃন্ত স্পর্শ করেন। ওই নারী তখন ডা. ফেরদৌসকে আরও জোরে ধাক্কা দেন।’

তিনি বলেন, ‘এসময় তিনি ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘর থেকে বেরিয়ে যান। তার মাকে নিয়ে চেম্বার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তার মাকে পুরো ঘটনাটি খুলে বলেন। এরপর থেকে তিনি ফেরদৌস খন্দকারের সাথে আর কখনো মুখোমুখি না হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেন। সেদিনের পর থেকে সে তার ফেসবুক পেজে কথিত ঘটনা সম্পর্কে পোস্ট করেন। এটি একটি ফেসবুক বন্ধুর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে পোস্টটি লেখা হয়েছে।’

তিনি উল্লেখ করেন, ‘শিক্ষা আসলেই মানুষকে শিক্ষিত করে না বা অন্য উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিই হবে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সভ্য মানুষ। এর কয়েকদিন পর আমার এক বন্ধু সকালে নিয়মিত চেকআপের জন্য গিয়েছিল এবং ফেরদৌস তাকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেছিল। তারা একটি চেঞ্জ ডট অর্গ (change.org) পিটিশন প্রচার করেছে যাতে খন্দকারের মেডিক‌্যাল লাইসেন্স বাতিল চাওয়া হয়েছিল। এতে সাড়ে চার হাজারেরও বেশি ব্যক্তি পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন। যা পরে ওয়েবসাইট থেকে সরানো হয়েছে।’

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘটনা প্রকাশ করায় ফেরদৌস খন্দকার তিনজনের বিরুদ্ধে ১০ লাখ ডলারের মানহানির মামলা করেছিলেন। সম্প্রতি আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন এবং বিবাদির আইনজীবীর পারিশ্রমিক পরিশোধ করার জন্য ফেরদৌস খন্দকারকে নির্দেশ দেন।

এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিউ ইয়র্ক প্রবাসী এক আওয়ামী লীগ নেতা অভিযোগ করে বলেন, ‘মেডিসিন বিশেষজ্ঞের দাবিদার ও নামধারী ডাক্তার ফেরদৌস খন্দকার সব ধরনের রোগের চিকিৎসা করেন। নারী রোগীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ইউটিউব এবং ফেসবুক খুললেই দেখা যায় তার বিভিন্ন ধরনের ভিডিও। কী নেই তার ভিডিওতে? যৌন চিকিৎসা থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক করোনা চিকিৎসায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিকিৎসার নামে ভিডিও বানিয়ে সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিয়ে হিরো বনে যান রাতারাতি।’

সময় জার্নাল/এসএ


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল