বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

বাঙালি কেন বই পড়ে না

বুধবার, আগস্ট ২৫, ২০২১
বাঙালি কেন বই পড়ে না

ডা. অপূর্ব চৌধুরী :
পরীক্ষা পাশের জন্যে মুখস্ত করা এই জাতির মেধাবীরাও বই পড়ে না । অন্যদের কথা বাদ দিলাম । কারণ তাদের লক্ষ্য পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া । সারা জীবন এরা যতগুলো পাঠ্য বই পড়ে, চাকুরীর জন্যে তার চেয়ে বেশি গাইড বই পড়ে । আর মাঝে সাঝে বই পড়লে পড়বে - ফিকশন কিংবা গল্প উপন্যাস ।
টিনএইজ ছেলে-মেয়েরা উঠতি বয়সে কলকাতার অখাদ্য সুনীল, শীর্ষেন্দু, সমরেশদের কিছু নিম্ন শ্রেণীর উপন্যাস পড়ে ঠিক করে নেয় বাকি জীবন এইগুলোই ভালোর স্ট্যান্ডার্ড । লঙ্গরখানায় খিচুড়ি খেয়ে বিরানি ভেবে বসে ।
অখাদ্যের বর্বর মেষপালক হুমায়ুন তো জাতীয় উড়নচন্ডী । হিমু, মিসির আর শুভ্র বেচে তার রঙ্গ পল্লী বানানোই ছিল উদ্দেশ্য । অকালে পটল তুলে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চরম লাভ করে গেছে ! কারণ আরো কিছুদিন বেঁচে থাকলে ঘেঁটুপুত্র বিষ্ঠা গিলতে হতো লোকদের ! যার বইতে না আছে সাহিত্য না আছে জীবন । তারপরেও দেশের মানুষগুলো তৃপ্ত ! কারণ বই পড়ছে এটাই তাদের কাছে অনেক বড়ো ! কি বই পড়ছে এটা বড়ো কথা না ।
পৃথিবীতে বছরে মাথাপিছু সবচেয়ে বেশি বই প্রকাশ করে ইংরেজরা । ছয় কোটির দেশ ব্রিটিশ রা বছরে বই বের করে দুই লক্ষের মতো । তার ৬০% নন ফিকশন । বাংলাদেশের আঠারো কোটি বলদেরা মিলে বছরে বের করে ছয় হাজার বই । তার ৫০% কবিতা, ৩০% গল্প উপন্যাস, মাত্র ১০% প্রবন্ধ ! তার মানে ৮০% বই ফিকশন, ১০% নন ফিকশন ! বিশ্বে বছরে আড়াই মিলিয়ন বই প্রকাশিত হয় । সারা বছর গড়ে ৬০০ মিলিয়ন কপি বই বিক্রি হয় । বইয়ের ৪৬% নন ফিকশন, ৩৫% ফিকশন । আর আমরা ১০% ! এ জাতির লোকেরা কি অখাদ্য খায়, বোঝাই যায় ।
ব্রিটিশরা বছরে দুই লক্ষের মতো বই বের করে । তার এক লক্ষ বিশ হাজারের মতো থাকে কেবল নন ফিকশন, সিরিয়াস বুক । বছরে বইয়ের রেভিনিউ ১ বিলিয়ন পাউন্ডের চেয়ে বেশি । সবচেয়ে বেশি বই প্রকাশ করে চীনারা - পাঁচ লক্ষ । আমেরিকানরা তিন লক্ষ । জাপানিরা দেড় লক্ষ । তবে বই কেনার দিক থেকে আমেরিকানরা সবচেয়ে বেশি খরচ করে টাকা । বছরে কমপক্ষে চারটি নন ফিকশন পড়ে, গড়ে আটটি নন ফিকশন কিনে ।
ব্রিটিশ, আমেরিকা, ফ্রাঞ্চ, জার্মানি, জাপান, এসব দেশের লোকেরা বছরে যা বই পড়ে তার ৬০% নন ফিকশন থাকে । বাংলাদেশের এমন লোকও পাওয়া যাবে, সারাজীবন গল্প উপন্যাস পড়েছে, একটি নন ফিকশন বই সারা জীবনেও পড়তে পারে নি ।
কেন এমন মানুষগুলো ! যখন উন্নত বিশ্বের স্কুল পাশ মানুষগুলো আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকের চেয়েও বেশি বই পড়ে, বেশি নন ফিকশন পড়ে ।
কারণ দুটো ।
এক: আমাদের নন ফিকশনের ভালো বই নেই । আমরা চটি পড়ার জাত । এখানে সিরিয়াস ভালো বই প্রকাশও হয় না, পড়েও না লোকজন । যা খেয়ে বড়ো হয়, রুচির ব্যারোমিটার তেমনি থাকে ।
দুই. আমাদের শিক্ষা, সামাজিক সিস্টেম এবং মনোভাব । আমাদের দেশে পরিবারগুলোতে বাচ্চাদের বই পড়তে উৎসাহ দেয়ার পরিবর্তে নিরুৎসাহিত করা হয় । বলা হয় - স্কুলের বইগুলো পড়ো ! অন্যগুলো পড়ে সময় নষ্ট করো না । এখানে লোকদের মানসিকতা হলো বই পড়ার অর্থ জ্ঞান অর্জন নয়, এসব অবসরের বিনোদন । ঘুম আনতে লোকেরা বই পড়ে । বিনোদনের কাতুকুতু পেতে বই পড়ে । তারা পরীক্ষা পাশের মেধাবী হোক আর, বলদ হোক, প্রিয় বইয়ের তালিকায় এদের - কিছু কচু, কিছু শালগম মার্কা লেখকের গল্প-উপন্যাস ।
এই অথর্ব জাতির লোকগুলো আগামী এক হাজার বছরেও পরিবর্তন হবে কিনা সন্দেহ ! কারণ, বংশ পরম্পরায় এরা শর্টকাটে সারতে চায় সবকিছু । শৌচাগারে গেলেও ছটফট করে কখন বের হবে, কার পাছায় আঙ্গুল দিয়ে গুঁতোবে ! পরীক্ষাগারে ঢুকলেও ভাবে কতভাবে ভেজাল মিশিয়ে কাজ সারা যাবে । এরা সারাদিন মডেলদের কাপড় কতটুকু উঠে আছে তা নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত থাকে । এদের জীবনের আদর্শ নুনু প্রদর্শনকারী জুয়াড়ি ক্রিকেটার, চিটার খেলোয়াড়, প্রলাপ বকা পলিটিশিয়ান ! এদের লেখকগুলো মাতালগ্রস্ত, বুদ্ধিজীবীগুলো বুদ্ধু ! এদের কবিগুলো কাকের মতো শব্দের কা কা করে, এদের নাট্যকাররা হাসির জিনিস ফুটাতে গিয়ে মাথার চুল ছেঁড়ার মতো সংলাপ বানায় ।
এদের দিয়ে আর কিছু হোক, বই, জ্ঞান, এবং একটি প্রজ্ঞাময় পৃথিবীর রচনা সম্ভব নয় ।
ছবিটি আমার ব্যক্তিগত স্টাডি রুম এবং লাইব্রেরি ।


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল