শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

ঐশ্বরিক অক্ষরে শহীদুল্লাহ ফরায়জী

মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২১
ঐশ্বরিক অক্ষরে শহীদুল্লাহ ফরায়জী

সাইফুল ইসলাম :

শহীদুল্লাহ ফরায়জী গানে, গীতিকবিতায় নিজস্ব ধারায় যখন প্রজন্মকে, বেঁচে থাকা মানুষদেরকে মোহাবিষ্ট করে রেখেছিলেন ঠিক তখনই  'ঐশ্বরিক অক্ষর' গ্রন্হে তাঁর প্রকাশিত কবিতামালায় ভক্তকুল, বোদ্ধা মহলের হৃদয়ে তুমুল আলোড়নের সৃষ্টি হলো । তিনি তাঁর সৃষ্টিকর্ম ' ঐশ্বরিক অক্ষর' এ নিজের বৃহত্তর প্রতিভার সন্ধান দিলেন। সহজ কথায়, ভাববাদী সনাতন ধারা থেকে বেড়িয়ে দর্শনের সাগরসম জগতে  অবগাহন  করে তাঁর থেকে সঞ্চিত  মুক্তামালা উপহার দিয়ে নিজেকে নিজে অতিক্রম করে গেলেন। 

‘ঐশ্বরিক অক্ষর’ কাব্যগ্রন্হে তিনি জয়গান গেয়েছেন মানবতার, আকাঙ্ক্ষা করেছেন মানুষের চিত্তের বিকাশ ও আত্মার জাগরণের।  দার্শনিক ভাবনায় কামনা করেছেন অসুন্দরের বিলয় ও সুন্দরের জাগরণ, মিথ্যার বিনাশ ও সত্যের উত্থান, হিংসার অবসান ও শান্তির বিজয়। অসংখ্য উত্তীর্ণ সৃষ্টির  বিপরীতে অবশেষে কবিতাকে বেছে  নিলেন  তাঁর কাঙ্ক্ষিত সমাজ বদলের হাতিয়ার হিসেবে।
 বইটি বুঝতে হলে- বইয়ের শেষাংশে সংযোজিত আত্মকথন অংশটিই যথেষ্ট। আত্মকথন পর্বে  তিনি কবিতা নিয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ও তাঁর  সৃজনকর্মের বৈশিষ্ট্যের মেলবন্ধন ঘটাতে গিয়ে বলেছেন, " আত্মসুদ্ধির সর্বোচ্চ  উচ্চতায় পৌঁছতে, স্রষ্টার সুগন্ধ নিতে, দেবদূতের সাক্ষাৎ পেতে এবং মহামানবদের  মনোযোগ আকর্ষণে বিস্ময়কর চেতনা অনুসন্ধান করার প্রয়োজনে কবিতা।
কবিতায়  'সত্য' ও 'মহৎ'কে রূপায়িত করতে চেয়েছি।"
আর কবির এ ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে বইয়ের অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি কবিতায়।  

কাব্যগ্রন্থের শিরোনাম কবিতা  ' ঐশ্বরিক চুক্তি'তে কবি  অলৌকিক প্রার্থনায় বলেছেন,

"আমাকে শেখাও
বৈরী বাস্তবতার মোকাবেলা
শোক সংগীতের নীরবতা
আমাকে শোনাও
স্বর্গীয় সংগীতের সুরধারা..."

কাব্যগ্রন্থের দুইশত পয়ষট্টিটির মতো কবিতায় বিধাতা থরে থরে কবির প্রার্থনা মঞ্জুর করেছেন।  কবি একের পর এক জীবনবোধ, মৃত্যুতাড়না, মানুষ- মানবিকতা,চিরকালীন আক্ষেপ- বিষাদের স্বরলিপি,সত্যের মহত্তম রূপ নিয়ে লিখেছেন। কোনো কোনো কবিতা তুলে ধরেছেন শোষিতের ইশতেহার।  

তাঁর 'ইশতেহার' কবিতায় তিনি উপস্হাপন করেছেন এক জগত জয়ী নির্দেশনা,

"নরখাদক বানানোর
কারখানা নিয়ে
কোনো রাষ্ট্র  আর হবে না
দুঃশাসন মনুষ্যত্বের অসন্মান নিয়ে
ভবিষ্যতে আর কোনো রাষ্ট্র হবে না
এ নির্দেশ উত্থাপন করছি।"

দুইশ সত্তর পৃষ্ঠার বইয়ে সর্বাধিক ব্যবহৃত শব্দটি হচ্ছে ' আত্মা'। কবি তাঁর জীবনচর্চায়, যাপিত সময়ে যেমন আত্মার সুদ্ধতার চর্চা করেন, ঠিক কবিতায়ও  কামনা করছেন আত্মার অসীম বৈভবের। তিনি বলেছেন,

লাভ কী তোমার ওহে প্রভু
অসীম অসীম প্রশংসায়
আমার আত্মা থাকে যদি
বিপুল শূন্যতায়?

গীতিকার শহীদুল্লাহ   ফরায়জী যতটা বেদনা আশ্রয়ী কবিতায় ততটা নন। কবিতায় তিনি বেদনার সৌরভ মেখে আলোকিত হওয়ার প্রয়াসী। কবিতায় বেদনার সৌরভ মেখে নিজেকে ঐশ্বর্যবান করার দুর্দমনীয় আকাঙ্ক্ষা থেকে কবি লিখেছেন,

"দুঃখ তুমি আমার
আশীর্বাদ হও
আকাশ ভেঙে
বৃষ্টির মতো
বিরতিহীন ঝরে পড়ো
আমার উপর
নরকের উৎসমূল খুলে
তরল আগুন ঝরুক আমার উপর
তুমি আমার আনন্দ হও।"

কাব্যগ্রন্থটিতে কবি কবিতার প্রচলিত কাঠামোকে ভেঙেছেন সাহসিকতার সাথে। প্রতিটি কবিতার শরীর একেক ধরনের- কোনোটি অণুকবিতা, কোনোটি দীর্ঘ প্রবহমান পঙক্তিমালা। তবে ভাবের গভীরতায় প্রতিটি কবিতাই নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে ভাস্বর।
তিনি কবিতাকে অযথা দুর্বোধ্যতায় ভারাক্রান্ত করতে চাননি। অর্থহীনভাবে প্রকৃতি কিংবা নারীর আশ্রয়ী করে তাৎপর্যহীন করে তোলার প্রয়াসী হননি। কবিতাকে তিনি করেছেন সত্য-সুন্দরের প্রতীক। তিনি কবিতাকে বাণীরূপে অমর দর্শন হিসেবে প্রতিষ্টা করেছেন। তার কবিতা সুন্দর, সত্য ও মহানুভবতাকে ধারন করে হয়েছে অলৌকিকতার আধার।

এ বিষয়ে কবির যে মত তা হলো- কবিতার ছন্দমিল, অন্ত্যমিল- এসবের প্রতি আমার তেমন কোনো আকর্ষণ নেই। কারণ কবিতা শুধু শব্দ বা ছন্দের কোষাগার নয়। কবিতা উচ্চতম নৈতিক সৌন্দর্যের ভাণ্ডার।" উল্লিখিত নৈতিক সৌন্দর্য কবি তাঁর বিশ্বাসে, মননে ধারন করেন। এ জন্যই তিনি একাধিক কবিতায় আত্মার স্বরূপ উদ্ঘাটনে প্রয়াসী হয়েছেন, নিজেকে শোষিত মানুষের প্রতিনিধি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। আবার কখনো করেছেন সাধনে ব্যর্থ হওয়ার পরিতাপ প্রকাশ।

তাঁর কবিতা 'ঐশ্বর্যময় আত্মা'য়  আমরা তার বহিঃপ্রকাশ দেখতে পাই,

"আমার আত্মার গভীরে
সত্য জন্ম নেয়
আমি সেই সত্য উন্মোচন করি
কিছু দিতে পারিনি।"

ছোট্ট পরিসরে এ মহামূল্য গ্রন্হটির সব কবিতার বর্ণনা উপস্হাপন করা অসম্ভব। আর এ প্রচেষ্টা  আমার জন্য ধৃষ্টতাও হবে হয়তো। যারা কবিতার পাঠক, ভক্ত তাঁদের জন্য একটা নতুন আস্বাদে আপ্লুত হওয়ার আহ্বান রেখে যেতে পারি। সবশেষে পাঠকদের আশ্বাস দিতে পারি, একজন বহুমাত্রিক কবি এখানেই থেমে থাকার নন। বাংলা কবিতা তাঁর কাছে অনেক কিছু পাওয়ার বাকি আছে। কবির তৃষ্ণাও অনন্ত, অসীম।

এতকিছুর পরও এক দুর্নিবার হাহাকার রেখে গেছেন, আমার যতটুকু আত্মোপলব্ধি,  নৈতিকতার যতটুকু তৃষ্ণা, আত্মার শুদ্ধতায় পৌঁছানোর জন্য যতটুকু আকাঙ্ক্ষা এবং  আমার ভাবজগতের  যতটুকু তাণ্ডব তা ভাষার অক্ষমতায় প্রকাশ করতে পারিনি- মাত্র ভগ্নাংশ দিয়ে তা প্রকাশ করেছি।

কবির এ দুর্নিবার তৃষ্ণা যতটুকু কখনো মিটবে কিনা জানিনা। কারণ তিনি যে পারলৌকিক ভাবজগতের বিস্তীর্ণ আকাশে ডানা মেলে দিয়েছেন তার সীমাপরিসীমা  ভাবনার অতীত।  তিনি যে মানস ধারন করেন তার গন্ডিও সুবিশাল আকাশের মতোই সীমাহীন।

তারপরও বলি, কবির দহনের তৃষ্ণা যতটা দুর্নিবার তাকে পাঠ করার মানস আর দশটা মানুষের মতো আমারও নেই।


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল