শনিবার, ১১ মে ২০২৪

ব্যাংকে না রেখে নগদ টাকা হাতে রাখার প্রবণতা বাড়ছে

মঙ্গলবার, নভেম্বর ২, ২০২১
ব্যাংকে না রেখে নগদ টাকা হাতে রাখার প্রবণতা বাড়ছে

করোনায় মানুষের আয় কমে যাওয়ার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। কিন্তু আমানতের সুদহার তুলনামূলক কম হওয়ায় ব্যাংকে টাকা রাখার প্রবণতা কমে গেছে। বাড়ছে হাতে নগদ টাকা রাখার প্রবণতা।
প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহে মানুষ এখন হাতে নগদ টাকা রাখছে বেশি। গত এক বছরে এ হার বেড়েছে প্রায় ১১ শতাংশ। বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, হাতে নগদ টাকা বেশি থাকার অর্থ হলো ব্যাংকের আমানত কমে বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে যাওয়া। এর প্রভাব পড়ে কর্মসংস্থানে।

মুদ্রা ও বিনিময় হার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকবহির্ভূত টাকার স্থিতি বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৯ হাজার ৬১৮ কোটি টাকা, যা এক বছর আগেও অর্থাৎ গত বছরের সেপ্টেম্বরে এর পরিমাণ ছিল এক লাখ ৮৯ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা। আর ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে যা ছিল এক লাখ ৫৬ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আমানতের সুদহার এখন অনেক কমানো হয়েছে। গড়ে ৫ থেকে ৬ শতাংশের বেশি মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে না। আবার এ মুনাফা থেকে নানা রকম ভ্যাট ট্যাক্স কেটে রাখা হয়। সবমিলে প্রকৃত আয় মূল্যস্ফীতির নিচে নেমে যায়। আর মূল্যস্ফীতির নিচে নামার অর্থ হলো মূলধন কমে যাওয়া। অর্থাৎ লোকসানের মুখে পড়া। এ কারণে মানুষ যেটুকু আয় করছে তার একটি অংশ ব্যয় করছে। কিছু অংশ হাতে রাখছে। এটা চলতে থাকলে আর বিনিয়োগের চাপ বেড়ে গেলে ব্যাংকগুলোর তারল্য সঙ্কট দেখা দিতে পারে। এতে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। কাঙ্ক্ষিত হারে বাড়বে না কর্মসংস্থান। জানা গেছে, দৈনন্দিন জীবনের ব্যয় নির্বাহ বা পণ্য ও সেবা নেয়ার জন্য প্রতিদিনই কিছু না কিছু টাকা খরচ করতে হয়। এর বাইরে বাড়তি টাকা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা থাকে। দেশের মোট প্রচলনে থাকা মুদ্রা থেকে ব্যাংকে জমানো টাকা বাদ দিয়ে লোকজনের হাতে কত টাকা আছে সেই তথ্য বের করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, ব্যাংকে আমানত রেখে এখন খুব বেশি লাভ পাওয়া যায় না। বরং জমানো টাকার ওপর ভ্যাট ও আবগারি শুল্ক পরিশোধের পর যে পরিমাণ মুনাফা হয়, মূল্যস্ফীতি তার থেকে বেশি। ফলে ব্যাংকে আমানত রেখে তা থেকে প্রকৃত মুনাফা কমে যাচ্ছে। এ কারণে ব্যাংকে টাকা না জমিয়ে ভোগে ব্যয় করছেন তারা।

আমানতের হার তলানিতে নেমে যাওয়ায় সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আমানতের সর্বনিম্ন সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, আমানতের সুদহার মূল্যস্ফীতির নিচে হবে না। তার আগে আমানতের সুদহার ৪ শতাংশে নেমে এসেছিল। সে হিসেবে এখন আমানতের সুদহার সাড়ে ৫ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু নানারকম ভ্যাট ট্যাক্স কাটার পর প্রকৃত মুনাফা আরো কমে যাচ্ছে। যেমন, যাদের কর শনাক্ত নম্বর বা টিআইএন আছে তাদেরকে মুনাফার ওপর ১০ শতাংশ কর পরিশোধ করতে হয়। আর যাদের টিআইএন নেই তাদেরকে ১৫ শতাংশ কর দিতে হয়। বছরের যেকোনো সময় আমানত এক লাখ টাকা ছাড়ালে ২০০ টাকা আবগারি শুল্ক দিতে হয়। আমানত যত বেশি হবে আবগারি শুল্ক তত বেশি হয়। এর পাশাপাশি নানারকম ব্যাংক সার্ভিস চার্জতো রয়েছেই। সবমিলেই যে মুনাফা ব্যাংক ঘোষণা করে বাস্তবে তা আরো কমে যায়।

এ দিকে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, মূল্যস্ফীতির হার বাড়ছে। গত জুলাইয়ে এ হার ছিল ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে হয়েছে ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এর মধ্যে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতির হারও বেড়েছে। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে এ হার ছিল ৫ দশমিক ৮০ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ১৯ শতাংশ। ব্যাংকে আমানত রেখে মুনাফা পেতে হলে প্রকৃত মুনাফার হার ৬ শতাংশের ওপরে হতে হবে। কিন্তু ভ্যাট, ট্যাক্স ও সার্ভিস চার্জ বাদ দিয়ে ৫ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে না।

এর ফলে মানুষের হাতে টাকা রাখার প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে। বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, মানুষের ব্যাংকে অধিক হারে টাকা রাখার প্রবণতা বাড়ানোর জন্য প্রকৃত সুদহার মূল্যস্ফীতির ওপরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় সামনে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ করার মতো পর্যাপ্ত অর্থ হাতে থাকবে না। অর্থাৎ ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে যাবে। কাঙ্ক্ষিত হারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না, যা দেশের অর্থনীতির জন্য মোটেও ভালো ফল বয়ে আনবে না।

সময় জার্নাল/এলআর


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল