শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

নারী সঙ্গী চায়, সম্মান চায়, ভালোবাসা চায়, ভালোবাসতে চায়

রোববার, মার্চ ২১, ২০২১
নারী সঙ্গী চায়, সম্মান চায়, ভালোবাসা চায়, ভালোবাসতে চায়

কামরুন নাহার মিশু : গতকয়েকদিন থেকে একটা নিউজ ভাইরাল হচ্ছে বিভিন্ন পেইজ ও নিউজ ফিডে।
প্রাথমিকের গণ্ডি পার না হওয়া একটা লোকের স্ত্রী প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা। অনেকে বিরূপ মন্তব্য করেছেন
"এমন সম্পর্ক থাকবে না। এদের এডজাস্টমেন্ট হবে না। একটা সময় মেয়েটা হাঁফিয়ে যাবে। বিকল্প পথ খুঁজে নেবে।"

অথচ লোকটার প্রতি আমার মনের মধ্যে এক পৃথিবী শ্রদ্ধাবোধ কাজ করছে। কত বড় উদার মনমানসিকতা হলে, একজন মানুষ স্ত্রীর পাশে ছায়া হয়ে তার স্বপ্ন পূরনের সারথি হয়েছে।

শুধু প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা নয়, আমার মনে হয় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হলেও কোনো নারী এমন স্বামীকে ছেড়ে যাবে না। যাওয়া উচিত নয়।

আমার শ্বশুর বাড়িতে একবার মেজো ভাসুরের কলিগের ছোট ভাইর নতুন বউকে দাওয়াত করা হয়েছে। ঐ বিয়েতেও আমরা পরিবারের সবাই উপস্থিত ছিলাম। যেদিন মেয়েটার বউভাত, সেদিন তার এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছিল। মেয়েটা এইচএসসিতে জিপিএ গোল্ডেন ফাইভ পেয়েছে।

এমন অানন্দের সংবাদে শ্বশুর পরিবারের সবাই আনন্দিত হওয়ার কথা। শ্বশুর পরিবারের সবাই না হোক, সয়ং স্বামী তো আনন্দিত হবে, তার স্ত্রী গোল্ডেন জিপিএ ফাইভ পেয়েছে। 

অথচ ওদের পুরো পরিবারের সবাইকে নির্লিপ্ত মনে হয়েছে। মনে হয়েছিল, জিপিএ গোল্ডেন ফাইভ খুব স্বস্তা ডাল ভাতের মতো, পাড়ার মুদি দোকানে খুচরা পয়সা দিলে কিনতে পাওয়া যায়। এটা নিয়ে এত উচ্ছ্বসিত হওয়ার কিছু নেই।

বিয়ের পনেরোদিন পর ঐ মেয়েকে আমার শ্বশুর বাড়িতে দাওয়াত করা হয়েছে। আমি তখন কলেজে পড়াই। মেয়েটা কিছুক্ষণ পর পর আমাকে ইশারা করে বলছে, আমার সাথে তার বিশেষ কথা আছে।

একটা সময় সুযোগ করে শ্বশুর পক্ষের চোখ এড়িয়ে মেয়েটা আমার রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিল।
তার চোখে মুখে আকুতি

" আপু আমি লেখাপড়া করতে চাই।"
" লেখাপড়া তো অবশ্যই করবে।
তুমি কত ভালো রেজাল্ট করেছ।"
" আপু ওরা আমাকে পড়াবে না। আমি প্রয়োজনে ডিগ্রীতে ভর্তি হবো। ক্লাসও করব না,শুধু পরীক্ষাটা দেব। আপনি যদি ওদেরকে একটু বুঝিয়ে বলতেন।"

আমি বুঝিয়ে বলার সুযোগ পাইনি। বা বুঝিয়ে বললেও ওরা শুনত না। কারণ আন্ডার মেট্রিক একটা ছেলের মনে হয়েছে, বউ উচ্চ শিক্ষিত হলে তার অবাধ্যতা করবে। সে স্ত্রীকে বাধ্যগত দাসী করে রাখার জন্য বউকে আর পড়ায়নি।

কয়েক বছর পর মেয়েটার সাথে আমার আবার দেখা হয়েছে। তার চোখের নিচে এক ইঞ্চি গর্ত পড়েছে। পুরো মুখে মেছতার দাগ বসেছে স্থায়ীভাবে। চোখের কোণে বিষন্নতা। কোলে একটা বাচ্চা, পেটে আরেকটা বাচ্চা। তার পুরো শরীর, মন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। তাকে দেখলে কল্পনাও করা যাবে না, কয়েক বছর আগে সে এক প্রানোচ্ছল কিশোরী ছিল।  যার দু'চোখের কোণে স্বপ্নরা অবিরত খেলা করত।

আমি তাকে দেখে চমকে গেলাম। আমার মনের ভেতর খচখচ করছিল, একান্তে একটু কথা বলার জন্য। কী ঝড় একটা মেয়ের উপর বয়ে গেলে সে এভাবে ভেঙে চুরমার হয়ে যায়!

একান্তে কথা বলার সুযোগও পেয়ে গেলাম
" কেমন আছো বিথী?"
সে হাসল, বিষণ্ণ হাসি।
" আপু বেঁচে আছি। তবে এটা মৃত্যুর নামান্তর। মরেছি তো আমি ফুলশয্যার ঘরে।"
"ওরা কি তোমায় শারীরিক নির্যাতন করে?"
" না, আপু। ওটা তো সহ্য করা যায়। শরীরের দাগ একটা সময় মিলিয়ে যায়। যে নির্যাতন করে, সেটা তো সহ্য করা যায় না। ভেতরে ভেতরে পুড়ে ছাই হয়ে যেতে হয়।"
" চলে যাওনি কেন? তুমি কি ওকে খুব ভালোবাসো?"
মেয়েটা লাফিয়ে উঠে বলল
" ইমপসিবল আপু। ভালোবাসা কি এতই স্বস্তা? "
আমি ওর থেকে চোখ নামিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বললাম
" না!"
"আমি দু 'দুটো সন্তানের মা হয়েছি, আল্লাহ চাইলে আরও হবো। ঘর হবে, সংসার হবে, হয়তো একসাথে, একপথে বৃদ্ধ হবো। হয়তো তার ব্যথায় ব্যথিত হবো, তার কষ্টে কষ্ট পাব। রাতের অন্ধকারে তার কাছেই নিজেকে বিলিয়ে দেব। কিন্তু, ভালোবাসা! সেটা কখনোই সম্ভব নয়।"
"তাহলে!  তুমি যে তাকে ভালোবাস না, সেটা ও বুঝতে পারে?"
" না, আপু। রোজ রাতে বিছানায় কাপড় খোলাকে যারা ভালোবাসা মনে করে, পেট ভরে ভাত খাওয়া আর মোটা কাপড় পরতে পারলে যারা নারীর চাহিদা পূরন হয়েছে ভাবে। তারা কিভাবে বুঝবে ভালোবাসা কী? আমি তো কাপড় খুলতে অস্বীকৃতি জানাই না।"

একটা সময় লক্ষ্য করলাম মেয়েটার চোখে জল, সাথে আমারও।
শ্বাশুড়ির ডাকে মোয়েটা আলতো হাতে চোখ মুছে দ্রুতপায়ে বেরিয়ে গেল আমার রুম থেকে।

স্বামীর থেকে সহযোগীতা না পেয়ে স্বপ্ন পূরন করতে না পারা নারীর মনে স্বামী নামক মানুষটার প্রতি যে তীব্র ঘৃণা দেখেছি। 

স্বামীর সহযোগীতা পেয়ে নিজের স্বপ্ন পুরন করতে পারা প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা নারীর মনে স্বামীর প্রতি যে ভালোবাসা, শ্রদ্ধাবোধ দেখেছি।

সেটা অশিক্ষিত, অর্ধ-শিক্ষিত, মূখ, বর্বর, পশু স্বামী বুঝবে কী করে? নারীরা কেবল ভাতের জন্য, কাপড়ের জন্য, কাপড় খোলার জন্য কারো ঘরে বউ হয়ে আসে না।

তারা সঙ্গী চায়, সম্মান চায়, ভালোবাসা চায়, ভালোবাসতে চায়।

তিনবার কবুল বলে পরের মেয়েকে বউ করে এনে, ভাত, কাপড় দিয়েই দায়িত্ব শেষ করে দেবেন না। তাকে একজন মানুষ মনে করে তার মনের কথা শুনুন।তার স্বপ্ন  পূরনের সাথী হোন।বিশ্বাস করুন, সে আপনাকে যতটা শ্রদ্ধা করবে, যতটা ভালোবাসবে, ততটা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না।

লেখক : সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল