বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসককে বখশিশ দেয়ার প্রস্তাব!

বুধবার, নভেম্বর ১৭, ২০২১
সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসককে বখশিশ দেয়ার প্রস্তাব!

ডা. শান্তনু কুমার ঘোষ :

ব্যাপারটাকে অনেক ভাবে ব্যখ্যা করা যায়। 

কে কিভাবে নেবেন তা প্রত্যেকের নিজস্ব বিচার। 

সরকারী হাসপাতালে আমরা যারা চিকিৎসক হিসাবে চাকরী করি, তাদের প্রতিনিয়ত নানাবিধ ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে কাজ করতে হয়। সম্পদের সীমাবদ্ধতা আর উপচে পরা রোগীর চাপ। এর মধ্যে থেকেই সবাইকে সার্ভিস দিতে হয়। 

যদিও প্রত্যেক রোগী বা তার পরিবারের কাছে নিজের অসুস্থতা সবচেয়ে বেশী জরুরী; নিজেদের ক্লিনিক্যাল আই খাটিয়ে আমাদের বুঝতে হয়, কোনটা ইমারজেন্সী, আর কোনটা তাড়াহুড়োর দরকার নেই। আমাদের, সার্জনদের উপরে আরেকটা চাপ, রুটিন অপারেশন এর সিরিয়াল মেইনটেইন করা। নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকের অধিকার হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ পাওয়া। সাধারণ মানুষের আশাও থাকে সরকারী হাসপাতালে কম খরচে অপারেশন করানোর। হাসপাতালের সামর্থ্যের তুলনায় রোগীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেশী হওয়ায় আমাদের রুটিন অপারেশনের ক্ষেত্রে সিরিয়াল করতে হয়। সিরিয়াল বেশী হলে অপারেশন এর ডেট আসতে সময় লাগে। দেশে বা বিদেশে সব হাসপাতালেই এই ব্যবস্থা প্রচলিত। 

জনৈক রোগী হাসপাতালে অপারেশন এর জন্য অল্প দিনেই ভর্তির সুযোগ পেয়ে যাওয়ায় খুশী হয়ে আজ আমার এক ঘনিস্ট কলিগ ডাক্তারের জন্য খামে ভরে চিঠি সহ নগদ টাকা উপহার নিয়ে এসেছেন!!!

কিছু অবজারভেশন বা নিজের কাছে প্রশ্ন:

১. সরকারী চাকুরী করার সুবাদে সরকার আমাদের বেতন দেন, হাসপাতালে রুটিন ও জরুরী সার্ভিস দেয়ার জন্য। 

২. আমি নিজে এবং আমার সেই কলিগ, আমরা চাকুরীর পাশাপাশি অফটাইমে প্রাইভেট প্র‍্যাকটিস করি- যা বিএমডিসি কর্তৃক অনুমোদিত। আমরা সৎভাবে স্বচ্ছল জীবন যাপনের জন্য চাকুরী আর চেম্বার থেকে যথেস্ট আয় করি। আমরা কাজ করে ইনকাম করতে চাই। বেপথে নয়। 

৩. সরকারী হাসপাতালে কোন সার্ভিস নেয়ার জন্য সরকারী ফি ব্যতিত কোন টাকা নেয়া বা দেয়া অপরাধ। 

৪. চেম্বারে অনেক রোগীই হাসপাতালে ভর্তি বা অপারেশনের জন্য ডাক্তারদের অফার দেয়ার চেস্টা করেন, বলেন, আপনার পারসোনাল ফি দিয়ে দেব, হাসপাতালে অপারেশন করে দেন। সম্ভবত: বেশিরভাগ সরকারী চিকিৎসকেরই এই সিচুয়েশনে পরার অভিজ্ঞতা আছে। 

৫. যারা সৎ ভাবে চলতে চান, তাদেরকে এরকম অনৈতিক প্রলোভন দেখানো কি অসৎ পথে টেনে নামানোর অপচেস্টা নয়?

৬. বারবার এহেন অফার পেলে একজন মানুষের পক্ষে কতোদিন সৎ থাকা সম্ভব?

৭. যারা এ ধরণের অফার দেন, তাদের নৈতিক চরিত্র কেমন?

৮. অধিকাংশ মানুষই কি নৈতিকতার অভাবে জর্জরিত?

৯. জাতি হিসাবে কি আমাদের নৈতিক অবক্ষয় ঘটছে, নাকি এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা?

১০. অন্যান্য দেশেও কি এধরণের ঘটনা ঘটে?

১১. আমাদের ভেতরে কেউ কেউ কি এগুলোতে অভ্যস্ত?

১২. আজ যিনি খামে ভরে চিঠি লিখে নগদ উপহার দিচ্ছিলেন, তিনি কি অতি সরল? ডাক্তারকে টিপস বা বখশিস দিয়ে চাইছিলেন? নাকি বোকা?

১৩. অতীতে তার কি এধরণের কোন অভিজ্ঞতা হয়েছে, বা কাউকে তার এধরণের সুযোগ দিতে হয়েছিল?

১৪. তার কি কোন দূরভিসন্ধি ছিলো, ইচ্ছাকৃতভাবে ডাক্তারের ক্ষতি করা, বা তাকে ফাঁসানো?

১৫. সাধারণ মানুষ নিশ্চয়ই প্রকৃতিগত ভাবেই সৎ, তাইতো পৃথিবী এখনো বাসযোগ্য। 

পরিশেষে- 

কোন রকম উপহারভরা খাম ছাড়াই তিনি ভর্তি হতে পেরেছেন এবং কোন দৈব-দুর্বিপাক না ঘটলে কাল সকালে তার অপারেশন হবে। 

আশাকরি তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে দ্রুত হাসপাতাল ত্যাগ করতে পারবেন, কোন জটিলতা ছাড়াই। 

আসুন, অন্যায় ভাবে সুবিধা গ্রহণের জন্য আমরা সৎ মানুষকে অসৎ পথে টেনে নিয়ে না যাই। 

সকলের মংগল হোক।


লেখক :

ডাঃ শান্তনু কুমার ঘোষ

সহকারী অধ্যাপক

ভাসকুলার,

এন্ডোভাসকুলার ও লেজার বিশেষজ্ঞ সার্জন 

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। 



Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল