শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

৭ কলেজের রেজাল্ট ধ্বসের পেছনে আসলে কারা দায়ী?

বুধবার, মার্চ ২৪, ২০২১
৭ কলেজের রেজাল্ট ধ্বসের পেছনে আসলে কারা দায়ী?

শুভ্র দে নয়ন :

প্রিয়_জুনিয়র অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ(২০১৮-১৯)

তোমরা ইতোমধ্যে প্রথম বর্ষের পরীক্ষার ফলাফল পেয়েছো।পরীক্ষায় পাশের হার মাত্র ৪৩% দেখে অনেকেই বিক্ষুব্ধ।অনেকেই ভাবছো, ভালো পরীক্ষা দেওয়ার পরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের ফেইল করিয়ে দিয়েছে কিংবা ভালো ফলাফল দেয় নি।চলো তোমাদের এই অভিযোগ গুলোর সমাধান খোঁজার চেষ্টা করি।

রেজাল্ট ধসের পেছনে আসলে কারা দ্বায়ী? 

রেজাল্ট ধসের পেছন দ্বায়ী

১/মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড 

কারণ পিএসসি, জিএসসি,এসএসসি ও এইচএসসি তে আজকাল জিপিএ ৫ পাওয়া একটা ট্রেডিশন এ পরিনত হয়েছে। শিক্ষাবোর্ড গুলো প্রতিযোগিতায় নামে কার চেয়ে কে বেশি জিপিএ ৫ দিতে পারে।তোমার বাবা কিংবা বড়দের কাছে একবার জিজ্ঞেস করো তো ২০০৩ সালের এসএসসি পাশের হার কতো ছিল? সেটাও তোমাদের বর্তমান পাশের হারের প্রায় কাছাকাছি-ই ছিল। 

২/জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজসহ কিছু নামধারী বিশ্ববিদ্যালয় ও অধিকাংশ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়।

শিক্ষাবোর্ড গুলোর মতো আমাদের কথিত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো সিজিপিএ ৪ এর কারখানায় তৈরি করে বসে আছে। কিছু কিছু সনামধন্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত এক-দুই সেমিস্টার গ্যাপ দেওয়া ছাত্রদের সিজিপিএ ৩.৮ দিয়ে বের করে আনছে। 

৩/ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ এর দ্বায়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ব্যর্থতা তাদের মনিটরিং ব্যবস্থায়।তার অধিভুক্ত কলেজ গুলোকে এখনো পর্যন্ত সঠিক মনিটরিং এর আওতায় আনতে পারে নি।ফলশ্রুতিতে স্যারেরা হাজিরা,বেতন নিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ করছেন।

যেমন সরকারি তিতুমীর কলেজ এর কথাই যদি বলি, আমাদের রসায়ন বিভাগ,অন্য বিভাগ গুলোর তুলনায় অনেক বেশি আন্তরিক কিন্তু পদার্থ বিজ্ঞান আর গনিত বিভাগ এর স্যারেরা ননমেজর ছাত্রছাত্রীদের বিষয় উদাসীন। ফলশ্রুতিতে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা ননমেজর এর রেজাল্ট খারাপ করছে।পাশাপাশি শিক্ষকদের পারস্পরিক প্রতিহিংসা ও শিক্ষার্থীদের ফলাফলে প্রভাব ফেলছে।

৪/সিনিয়র ভাই-বোনদের ভূমিকা 

আমি  ২০১৭-১৮ তে প্রথম বর্ষে ভর্তি হই, তখন আমার ডিপার্টমেন্ট সিনিয়রদের অনেকেই প্রথম বর্ষে কাউন্সিলিং এ আসতে দেখেছি। তাদের কাউন্সিলিং কিন্তু পড়াশোনার বিষয় কদাচিত ই ছিল বা ছিলোই না বলা যায়। তারা আসতেন পিকনিক বা বিভিন্ন ক্লাব সংগঠন ও অনুষ্ঠান এর বার্তা নিয়ে। তাদের অনেকের ই বক্তব্য এমন ছিল যে "অনার্স লাইফে কোন পড়াশোনা নেই, শুধু আনন্দ আর বন্ধুদের সাথে আড্ডা,পিকনিক।

"আপনি উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করছেন অথচ কোন পড়াশোনা করতে হয় না সারাবছর, ভাবনা গুলো কতো'টা রোমাঞ্চকর!"

তবে আমার সৌভাগ্য যে আমি অনার্স লাইফের একদম শুরু থেকেই বেশ কয়েকজন সিনিয়র ভাইয়ার সান্নিধ্য পেয়েছিলাম,যারা শুধু বড় ভাই-ই ছিলেন না বরং ছিলেন অভিভাবক ও পথপ্রদর্শক।উনাদের-ই দুজন S.m. Jubaer Islam ভাইয়া ও Rasel Hossen ভাইয়া।তারা পড়াশোনার প্রতি ধাপে আমাকে বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করেছে এবং এখনো করছেন। 

সর্বশেষ, চলো খুঁজে বের করি আমাদের সমস্যা গুলো কি কি? 

আমাদের সমস্যা তিনটা

প্রথমটা,অজুহাত 
দ্বিতীয়, সঠিক বই নির্বাচন করতে না পারা
তৃতীয়, সঠিক ব্যাক্তি ও সঠিক শিক্ষকদের স্মরনাপন্ন না হওয়া। 

প্রথমে অজুহাত নিয়ে বলি,
জুনিয়র-দের সাথে যখন কথা বলি তখন সবচেয়ে বেশি যেই সমস্যার কথা শুনি "ভাইয়া,টিউশন করিয়ে বাসায় ফিরে পড়তে ভালো লাগে না।"
একবার খোঁজ নাও তো তোমার ব্যাচ এর যেই ছেলেটা ভালো ফলাফল করেছে তাদের পড়তে কতোটা ভালো লাগে? আমি নিশ্চিত শতকরা ৯০ জন বলবে পড়তে ভালো লাগে না। তবুও তারা পড়ে।কেননা, তারা জানে ভালো ফলাফল এর জন্য পড়াশোনার বিকল্প নেই।তারা সারাদিন টিউশন এর পর ও রাত জেগে পড়াশোনা করছে।তাদের সাথে তোমার পার্থক্য বুঝার জন্য প্রশ্নটা একটু কঠিন হওয়া কি জরুরি না?

দ্বিতীয় যেই অভিযোগ'টি শুনি "ভাইয়া,আমি তো সব প্রশ্নের উত্তর খুব ভালো করে লিখেছি কিন্তু ভালো ফলাফল করি নি। " এর একমাত্র কারণ তুমি রসায়ন বিভাগে পড়ো অথচ "ব্যাতিক্রম" "মাই বুক" নামক ইতিহাসের গাইড পড়ো।আমরা তোমাদের বারবার রিকুয়েষ্ট করি তোমরা "সুভাষ স্যার,নজরুল ইসলাম স্যার,কালিপদ কুন্ড স্যার,সিরাজুল ইসলাম স্যার,জয়নাল আবেদিন,প্রফেসর মাহবুব মতিন স্যারদের বই গুলো পড়ো,কিন্তু দিনশেষে তোমরা কিনো কবির পাবলিশার্স এর অখ্যাত-কুখ্যাত রাইটার্স দের বই।(বি.দ্র.:কবিরের ও কিছু কিছু বই আছে যেগুলো ভালো, কিন্তু সবগুলো নয়।)

তোমাদের আরেকটা বড় সমস্যা, আজকাল সবাই খুব শর্টকাট হয়ে গোছো।" মাত্র তিনদিনে বিসিএস প্রস্তুতি"টাইপ মোটিভেশনাল স্পিচ ও বক্তা খোঁজ। ভাই, জীবনের কোন শর্টকাট রোড হয় না। জীবনে লড়াই করে এগিয়ে যেতে হয়।যে যত বেশি লড়াই করবে সাফল্যের সুখও তত বেশি ভোগ করতে পারবে। 

সর্বশেষ এটাই বলবো যে,লড়াই করাটা তোমার হাতে।আর এর সুফল প্রদান করা সৃষ্টিকর্তার হাতে। কখনো-ই নিজের কাজটা থেকে পালিয়ে এসো না, চূড়ান্ত ক্ষতি তোমাদের-ই হবে। 

সকলের জন্য শুভকামনা রইল।
Focus for the future, never cried for past.
 যাদের রেজাল্ট খুব একটা ভালো হয় নি, তাদের বলবো এটা তোমাদের সৌভাগ্য যে তোমরা শুরুতেই নিজেদের ভূলত্রুটি গুলো সংশোধন করে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছো।তাই সুযোগটা কাজে লাগাও এবং ঘুরে দাঁড়াও। 

লেখক : স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষ,রসায়ন বিভাগ 
সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা। 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল