শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

বাবার জন্মদিনে কন্যার স্মৃতিচারণ

বুধবার, ডিসেম্বর ২২, ২০২১
বাবার জন্মদিনে কন্যার স্মৃতিচারণ

শাওন মাহমুদ:

এক ঝলকে ঝিলু 
আলতাফ মাহমুদের ডাক নাম ঝিলু। গানের প্রতি ঝিলুর ছিল প্রচন্ড ঝোঁক। পড়ালেখায় মন নেই ঝিলুর, সারাক্ষণ গুনগুন করে গেয়ে চলে গান। ঝিলু যখন পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র তখন উঠোনের কাঁঠাল গাছে খোদাই করে লিখে রাখে 'ঝিলু দি গ্রেট'। ঝিলুর বাবা নেজাম আলী একদিন বললেন- 'বেডার কাণ্ড দেহো। ওরে আবাইগ্যা, গাছডার গায়েতো লেইখা রাখছোস- 'ঝিলু দি গ্রেট'। গান গাইয়া কি আর গ্রেট হইতে পারবি?' ঝিলু বলল, 'দেখ একদিন ঠিকই আমি 'ঝিলু দি গ্রেট' হবো। সঙ্গীতে প্রতিভার পাশাপাশি আলতাফ মাহমুদ ছবিও আঁকতে পারতেন। 

১৯৩৩ সালের আজকের দিনে (২৩ ডিসেম্বর)  আলতাফ মাহমুদ  বরিশাল জেলার মুলাদী থানার অন্তর্গত পাতারচর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। আলতাফ মাহমুদের বাবার নাম নেজাম আলী হাওলাদার এবং মা কদ বানুর একমাত্র পুত্র সন্তান আলতাফ মাহমুদ।

চলনে বলনে অত্যন্ত সৌখিন মানুষ ছিলেন তিনি। পোশাকের ক্ষেত্রে রঙিন ঝলমলে বিষয়টাকে এড়িয়ে চলতেন। অধিকাংশ শার্টই ছিল সাদা। শার্টের ভেতরে সাদা হাফ হাতাওয়ালা গেঞ্জি পড়তেন। পরনের সাদা শার্টটা সবসময় একদম ধবধবে সাদাই রাখতেন তিনি। খাবার ফেলে বা ময়লা কাদা লাগিয়ে কতোটা ময়লা করতে সেই গল্পটা অজানাই সবার। তবে যেকোনও অনুষ্ঠানে তিনি হাজির তার চিরচারিত শ্বেতশুভ্র পোশাকে। হাতে থাকতো একটি রোলেক্স ঘড়ি, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। অনেক অনেক চশমার ফ্রেম ছিল তার। তবে সবগুলোর রঙই ছিল কালো আর ফ্রেমগুলো ছিল ভারী। পায়ে চটি পরে ঢাকা শহরের অলিতে গলিতে ঘুরে বেড়ালেও, আর দশজন সাধারণ মানুষের মতো তিনিও শখে জুতো পরতেন। সেটি অবশ্যই চকচকে কালি করানো থাকতে হবে। এমনই নিয়ম ছিল তাঁর।

টাই খুব পছন্দ করতেন। আর মাঝে মাঝেই ব্লেজার পরতেন গলা বন্ধ টিশার্ট বা সোয়েটার দিয়ে। এটি তার খুব প্রিয় পোশাক ছিল। কন্যা শাওন মনে করেন, বাবার এই পোশাকটা তিনি জেমস বন্ড ছবিতে নায়ককে পরতে দেখছেন। বাবাও হয়তো সেখান থেকেই অনুপ্রাণিত ছিলেন। আর খুব প্রিয় ছিল চাদর। বাদামী বা ঘিয়ে রঙের চাদরে হালকা সুতার কাজ। এই ছিল তার প্রিয় চাদর। এটা গায়ে জড়িয়ে তিনি কতো জায়গায় ঘুরেছেন। কত অনুষ্ঠানে গান করেছেন গায়ে চাদর জড়িয়ে। সময় অসময়ের সঙ্গী ছিল চাদর।

খাওয়া দাওয়ার ক্ষেত্রে ভেতো বাঙালি ছিলেন। সকালে তার ভাত খাওয়া চাই চাই। প্রতিদিন সকালেই ভাত খেয়ে বের হয়ে যেতেন। খাবারের ক্ষেত্রে আর প্রিয় ছিল পান্তা ভাত। যেদিন তিনি পান্তা ভাত খাবেন বলেছেন সেদিন রীতিমতো যজ্ঞ লেগে যেত বাড়িতে। কারণ বাড়ির আদুরে এই ছেলে এমনি এমনি পান্তা ভাত খেতেন না। মুচমুচে করে মাছ ভাজা, ভুনা গরুর মাংস, আচার, পেঁয়াজ, কাচামরিচ, নানা উপকরণ তার লাগতো পান্তা খেতে। আর পান্তা তো একা খেতেন না , রাজ্যের লোক জুটিয়ে ফেলতেন খাওয়ার সময়। যেকোনও ভালো খাবারের প্রতি তার ছিল গভীর আগ্রহ। কিন্তু সেগুলো একা খাওয়া যাবে না সঙ্গে থাকতে হবে পুরো ঢাকা শহরের লোকেদের।

প্রিয় খাবারের রেস্তোরাঁ ছিল দেশবন্ধু হোটেল। রাতভর শুটিং বা কাজ শেষে দেশবন্ধুতে সকালের নাস্তা খেয়ে এবং বাড়ির সবার জন্য নাশতা নিয়ে ফিরতেন।

মাছ কিনতে খুব পছন্দ করতেন। খুব ভোরে উঠে গাড়ি নিয়ে চলে যেতেন মাওয়া ঘাটে। ফিরতেন মাছ নিয়ে। যত মাছ কিনতেন সব মাছ নিয়ে বাড়ি ফিরতেন না শহরের তাবত আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে মাছ বিলিয়ে তবেই শান্তি হতো তার।
শখের মধ্যে তাঁর ছিল পাইপ সংগ্রহ করা। কতশত রকমের পাইপ যে তাঁর ছিল সেটির কোনও হিসেব নেই। বন্ধুরা দিয়েছেন, নিজে কিনেছেন সব মিলিয়ে পাইপের সাম্রাজ্য গড়েছিলেন তিনি।

আলতাফ মাহমুদের  সবচেয়ে মজার বিষয় ছিল চুলের আর গোঁফের স্টাইল। ৬৯ সালে একবার হুলিয়া হওয়ার কারণে গোঁফ, ভ্রু সব কামিয়ে ফেললেন। সে সময় নাকি স্ত্রী সারা মাহমুদও আঁতকে উঠেছিলেন তার নতুন লুক দেখে। দু'দিন পর পর তিনি স্টাইল আর লুক বদলাতেন। চুলের স্টাইল বদলানোতে তিনি ছিলেন মাস্টার। কখনও বাবড়ি চুল, কখনও ছোটো ছোট করে কাটা। কখনও ব্যাকব্রাশ কখনও সিঁথি কাঁটতেন।

মহান এই সুরকার জন্মদিন খুব গুরুত্বের সঙ্গে পালন করতেন না। তবে সারাদিন যাই করেন না কেনও দিন শেষে পরিবারের সবাইকে নিয়ে যেতেন বেবি আইসক্রিম পার্লারে আইসক্রিম খাওয়াতে। এটা ছিল তাঁর জন্মদিন স্পেশাল।


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল