শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

অ্যালজেব্রার জনক মুহাম্মদ ইব্‌ন মুসা আল খারিজমির গল্প

বুধবার, মার্চ ২, ২০২২
অ্যালজেব্রার জনক মুহাম্মদ ইব্‌ন মুসা আল খারিজমির গল্প

রাগীব হাসান :

বাগদাদ, ৮২০ খ্রিস্টাব্দ। এই প্রাচীন শহর তখন ইসলামিক খেলাফতের প্রাণকেন্দ্র। আজ থেকে ১২০০ বছরের বেশি আগের কথা। মধ্যযুগের অন্ধকারে ডুবে গেছে ইউরোপ, বন্ধ হয়েছে সেখানে জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চা। 

সেসময়ের বিশ্বের জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র ছিলো বাগদাদ (আজকের ইরাকের রাজধানী)। আব্বাসীয় বংশের খলিফা হারুন-উর-রশীদ আর তার সন্তান খলিফা আল-মামুন জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চাকে উৎসাহ দেয়ার জন্য প্রতিষ্ঠা করেছেন বিশাল এক লাইব্রেরি। তদানিন্তন বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই লাইব্রেরিতে আছে লাখ লাখ বই। বায়তুল হিকমা অর্থাৎ জ্ঞানের ঘর নামের এই লাইব্রেরিতে বিজ্ঞান, গণিত, ও যুক্তিবিদ্যার চর্চা করছেন প্রচণ্ড প্রতিভাবান সব মানুষেরা। 

এই বায়তুল হিকমা ভবনের একটি ঘরে একজন মানুষ একমনে কাজ করে চলেছেন। চল্লিশ বছর বয়সের এই গণিতবিদ অল্প বয়স থেকেই প্রখর প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। তাঁকে দেয়া হয়েছে বায়তুল হিকমার পরিচালকের দায়িত্ব। কিন্তু এই গণিতবিদের মন পড়ে আছে গণিতে। পুরো বিশ্বের সৌন্দর্য, রহস্য, সবকিছু খুঁজে পান তিনি এই গণিতের জগতে। ভারতবর্ষ আর গ্রিক সভ্যতার কাছ থেকে গণিতের নতুন নতুন বিষয় জানতে পেরে এই মানুষটি গণিতের চর্চায় মগ্ন হয়ে আছেন। 

আজকে আল খারিজমির মনে বড় আনন্দ। অংক করার নতুন এক পদ্ধতি বের করেছেন তিনি, যার মাধ্যমে ধাপে ধাপে খুব সহজে গুছিয়ে জটিল গাণিতিক সমস্যার সমাধান করা চলে। ঠিক করলেন, একটা বইতে লিখে রাখবেন সেই পদ্ধতির কথা। হাতে তুলে নিলেন পালকের কলম। শুরু হলো বইটা লেখা। 
বাগদাদের বায়তুল হিকমার এই প্রচণ্ড প্রতিভাবান মানুষটি ৮২০ খ্রিস্টাব্দে এই বইটা লিখে শেষ করবেন। বইটার নাম হলো "আল কিতাব আল মুখতাসার ফি হিসাব আল-জাবের ওয়াল মুকাবালাহ", অর্থাৎ The Compendious Book on Calculation by Completion and Balancing যা সংক্ষেপে পরিচিত হতে লাগলো আল-জাবের নামে। গণিতের ইতিহাসে এক মাইলফলক হয়ে আছে এই বইটি, কারণ এটিই অ্যালজেব্রা বা বীজগণিতের উপরে আলাদা করে লেখা প্রথম বই, যেখানে বীজগণিতের সব প্রাথমিক ধারণা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আর এই বইটির নাম "আল-জাবের" থেকেই এক সময়ে গণিতের এই শাখার নাম হয়েছে অ্যালজেব্রা (Algebra)। 

তারপর? 

এই বইটি শুরু করবে গণিতের এক নবযুগ – হিসাব করার, অংক করার এক নতুন পদ্ধতি। এই যুগান্তকারী পদ্ধতি এতোই কালোত্তীর্ণ যে, আপনি আমি আমরা সবাই ১২০০ বছর পরেও সারা বিশ্বের সব স্কুলে কলেজে এই পদ্ধতির কথা শিখবো, আজকের সব গণিতের ভিত্তি গড়ে দিবে এই পদ্ধতি। আর এই পদ্ধতির নাম হলো অ্যালজেব্রা অর্থাৎ বীজগণিত। এই তুখোড় গণিতবিদের নাম হলো মুহাম্মদ ইব্‌ন মুসা আল খারিজমি, যাঁর হাতে কেবল অ্যালজেব্রারই সূচনা হবে না, বরং তার পাশাপাশি তাঁর নামানুসারে রাখা হবে আজকের কম্পিউটার বিজ্ঞানের ভিত্তি অ্যালগরিদম এর নাম।

আমার বিজ্ঞানীদের কাণ্ড কারখানা - Bigganider Kando Karkhana -৪ বইতে এই আল খারিজমির গল্পটা লিখেছি। আল খারিজমি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভা -- ভারতবর্ষের গণিতবিদদের পাটিগণিত কিংবা জ্যোতির্বিদ্যার সব বইপত্র নিজে গুছিয়ে লিখেছেন, কিন্তু তার চাইতেও বড় কথা হলো বীজগণিতকে গণিতের একটি শাখা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। দ্বিঘাত ও রৈখিক সমীকরণ সমাধানের পদ্ধতি তিনিই প্রথম সিস্টেম্যাটিকভাবে উপস্থাপন করেন। ১২০০ বছর আগের একজন মানুষ জ্ঞানের ঘরে বসে এই কাজগুলো করেছেন, ভাবতেই অবাক লাগে। 

অ্যালজেব্রা আধুনিক গণিতের মৌলিক অংশ ... তাই আমার নতুন বইটিতে আল খারিজমির কাহিনিটা লিখতে পেরে খুব ভালো লাগছে। নিচের ছবিতে শিল্পীর কল্পনায় বায়তুল হিকমার ছবি, আর ডানে দেখা যাচ্ছে আল খারিজমির এই বিখ্যাত বইটির প্রচ্ছদ (৯ম শতাব্দি)। 
---- ---- ---- ---- ---- 
এই লেখাটি আমার নতুন বই বিজ্ঞানীদের কাণ্ডকারখানা-৪ এর প্রথম অধ্যায় থেকে - সেখানে পড়তে পারবেন আল খারিজমির পুরো কাহিনিটি। আর এই বইটি পাওয়া যাবে বইমেলায় আদর্শ প্রকাশনীর ৩৩৩-৩৩৬ নং স্টলে এবং অনলাইনে https://www.rokomari.com/.../bigganider-kandakarkhana---4  এবং আরো বেশি ছাড়ে ওয়াফিলাইফে https://www.wafilife.com/?p=401074

© Ragib Hasan

#বিজ্ঞানীদেরকাণ্ডকারখানা


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল