শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

প্রযুক্তির উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

বৃহস্পতিবার, মে ১৯, ২০২২
প্রযুক্তির উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

যশোদা জীবন দেবনাথ :

১৩ বছরে প্রযুক্তি খাতে অভাবনীয় সাফল্য এসেছে। পৃথিবী চলে এসেছে হাতের মুঠোয়। চাইলেই মুহুর্তের মধ্যে বিশে^র এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যোগাযোগ করা যাচ্ছে। ভাল মন্দের খোঁজ খবর নেয়া যাচ্ছে। এসব ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের সুফল পাচ্ছে দেশের প্রতিটি জনগন। কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, দক্ষতা উন্নয়ন, কর্মসংস্থানসহ এমন কোনো খাত নেই যেখানে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে না। এটা সম্ভব হচ্ছে মূলত সারা দেশে একটি শক্তিশালী আইসিটি অবকাঠামো গড়ে ওঠার কারণে। যা শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত। আওয়ামী লীগ  সরকার ক্ষমতায় আসার আগে প্রতি এমবিপিএস ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের দাম ছিল ৭৮ হাজার টাকা। বর্তমানে তা ৩০০ টাকার নিচে। জননেত্রী শেখ হাসিনার  সুযোগ্য পুত্র ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমানের কারিগর সজিব ওয়াজেদ জয়ের বুদ্ধিদিপ্ত সিদ্ধান্তে প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশ এক অনন্য উচ্চতায় উঠতে সক্ষম হয়েছে। দেশের তরুন প্রজন্ম এখন প্রযুক্তি জ্ঞানে সমৃদ্ধ, খেলাধুলা-সংস্কৃতিতে এগিয়ে, দেশের প্রশ্নে তারা আপসহীন। এই প্রজন্ম জাতির পিতার সুমহান আত্মত্যাগ ও দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস জানে, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের কথা জানে, শহীদদের অবদানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। প্রযুক্তির ছোয়া আত্মসচেতন এই তারুণ্যের শক্তি আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। শুধু শহরেই নয়, বরং জেলা-উপজেলা সদর ছাড়িয়ে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা পৌঁছে দিয়েছে সরকার। বিশেষ করে ‘ইউনিয়ন ইনফরমেশন সেন্টার’ বা ‘ইউনিয়ন তথ্যকেন্দ্র’ দেশব্যাপী গ্রামের মানুষকে অভাবিত সেবা দিয়ে চলেছে। গ্রামীণফোনের সেই ‘ফোন লেডি’ তথা পল্লিফোনের ধারণা থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন এ-টু-আই (অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন) এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের (আইসিটি) আওতায় ন্যাশনাল ডাটা সেন্টার তৈরিসহ তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত নানা প্রকল্প ইতিমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। আরও কিছু বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। উন্নয়ন অংশীদাররাও এ সব প্রকল্পকে দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে এবং প্রকল্পগুলোতে অর্থায়নের পরিমাণ বাড়িয়ে গবেষণা-সহায়তাও দিয়ে চলেছে।

অথচ আমাদের দেশে কিছুদিন আগেও আন্তর্জাতিক যোগাযোগের মাধ্যম উন্মুক্ত এবং সাশ্রয়ী ছিল না। প্রযুক্তির বিকাশের কোনো চেষ্টা ছিল না, আত্মপ্রত্যয় প্রকাশের সুযোগ ছিল না। গণমাধ্যমের সংখ্যা, আকার-প্রকার ধরন সব সীমাবদ্ধ ছিল। উচ্চশিক্ষা গ্রহণ, দক্ষতা অর্জন, এসব কোনো কিছুর সুযোগ ছিল না। কোনো রকমে বেঁচে থাকাই ছিল নাগরিকের সংগ্রাম। এখন আমরা স্বপ্ন দেখি এগিয়ে যাওয়ার, আগে দেখতাম কোনো রকমে বেঁচে থাকার।

আমাদের এই প্রজন্মকে বুঝতে হবে এসবই কিন্তু এসেছে রাষ্ট্রকে টেকসই উন্নয়ন আর প্রগতির পথে চালানোর মানসিকতা নিয়ে নীতি প্রণয়নের রাজনৈতিক সংস্কৃতি সর্বোচ্চ মহলে ছিল বলে। এই সর্বোচ্চ মহল আর কেউ নন, তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। দেশ তো আমরা দেখেছি ৭৫ থেকে ৯৬ কীভাবে চলেছে। কী পেয়েছি, কী হয়েছে দেখেছি। হতাশা আর কোনো রকমে বেঁচে থাকার আকুতি দেখেছি, এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারিনি। স্বপ্ন দেখা শুরু হয় কখন? যখন অন্তত খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত হলো শেখ হাসিনা সরকারের সময়। তারপর আবারও পিছলে পড়লাম সোজা সাত বছর।

এই পিছলে পড়লে কী হয় তা সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী তরুণরা। তাই তরুণদের উদ্দেশে বলব, সিস্টেম চেঞ্জ আর মানসিকতার উন্নয়নের ওপরে জোড় দিতে হবে আমাদের। যেন আবারও কেউ ছিনিমিনি না খেলে আমাদের নিয়ে। আমাদেরও সংগ্রামে নামতে হবে। তবে এই সংগ্রাম হতে হবে নতুন ধাঁচের, নতুন ধরনের। নিজেকে গড়ার, নাগরিক হিসেবে নিজের প্রাপ্য বুঝে নেওয়ার, নিজেকে দক্ষ করার। এর মাধ্যমে সমাজ দেশকে আগামী দশকের মধ্যেই উন্নত করার।

বঙ্গবন্ধুর ডাকে বাংলাদেশের জন্য সংগ্রাম করার সৌভাগ্য আমাদের এই প্রজন্মের হয়নি, কিন্তু স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হয়েছে আমাদের এই প্রজন্ম। স্বাধীনতার যুদ্ধের সেই ভয়াবহতা, বঙ্গবন্ধুকে হারানোর পরে পিছিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা, অনেক ঘটনা দুর্ঘটনা থেকে অনেকাংশেই ৭৫-পরবর্তী বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া প্রজন্ম দেখেননি।

তার পরবর্তী প্রজন্ম আরও কম দেখেছে এবং সদ্য প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া প্রজন্ম আরও কম দেখেছে কঠিন সময়কে। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যাশার মানদ-টিও অনেক উচ্চে। প্রত্যাশা আরও বেড়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে যে বাংলাদেশের সম্ভাবনা দেখে। আমাদের এই প্রজন্মের অনেকেই খাদ্যের অভাব দেখেনি। দাম হয়তো বাড়তে কমতে আমরা দেখছি, কিন্তু রকমারি পণ্যের সমাহারে ভরা দোকান দেখছি। যেটি আগে ভাবাও যেত না।

সব মিলিয়ে আমার মনে হয় আমাদের এই প্রজন্মের সোল সার্চিং অর্থাৎ আত্ম-উপলব্ধির সময় এসেছে। কোথায় ছিলাম, কোথায় এসেছি, আর কোথায় যেতে চাই? প্রত্যাশা পূরণের জন্য প্রস্তুতির জায়গায় এখন আমাদের হাত দিতে হবে। এই প্রজন্মের অনেকেই আমরা নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রীয় সেবা নিতে এবং পেতে আগের যে পরিস্থিতি ছিল তা যেহেতু দেখিনি, আদায় করে নেওয়ার সংস্কৃতি বা প্রক্রিয়া অনেক সময় যেনে নিতে উৎসাহ দেখাই না। এর সুবাদে দেখা যায় অনেক সেবা, অনেক অধিকার, আদায় করতে আমরা অনেক সময় পারছি না। নাগরিক হিসেবে তথ্যের অধিকার, রাষ্ট্র ঘোষিত সেবার অধিকার এসব যেমনি আদায় করে নেওয়ার

সংস্কৃতি আমাদের মধ্যে ঝালিয়ে নিতে হবে, আবার আমাদের অনেকেই রাষ্ট্র, সরকার, আর রাজনীতির মধ্যের পার্থক্য অনেক সময় আমরা ভুলে গেছি। সুশাসন আর নাগরিক সেবা নিতে এখন সহজ প্রক্রিয়া এসেছে কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই যেখানে দীর্ঘসূত্রতা আসে স্থবিরতা আসে, দুর্নীতির মুখে আমরা পরি, সব দোষ রাজনীতির বা রাজনীতিবিদের এই মনোবেদনা নিয়ে সরকারের জবাবদিহির জায়গায় নাগরিক হিসেবে আমরা আমাদের অধিকার চর্চা করছি না। পাশাপাশি সরকারের বাইরে বেসরকারি খাতকে আমরা এগিয়ে যেতে দেখছি, সমৃদ্ধির ছোঁয়া দেখেই ক্ষান্ত হচ্ছি, কিন্তু এই সুবিশাল খাতের জবাবদিহি, তাদের দায়িত্ববোধ, আইনের প্রতি আস্থা শ্রদ্ধা এবং মান্য করার বিষয়টি আমাদের এই প্রজন্মকেই সামনে আনতে হবে।

এই প্রজন্মকে শেখ হাসিনার সরকার একটি সম্পদ দিয়েছে, সেটি হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তি। এই সম্পদকে কাজে লাগিয়ে যেমনি দক্ষ হওয়া যায়, শিক্ষা নেওয়া যায়, তেমনি সচ্ছতাও নিশ্চিত করা যায়। নাগরিক অধিকার পাওয়ার জায়গায় নিজের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা যায়। আমাদের এই প্রজন্মের বোঝা দরকার, আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্মের অনেক ত্যাগের বিনিময়ে এই বাংলাদেশ। আমাদের এই দেশ এখনো অনেক এক্সিস্টেনশিয়ালিস্ট ক্রাইসিস তথা অস্তিত্বজনিত ঝুঁকি আর সংকটের মধ্যে বর্ধনশীল অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ এই যাত্রায়, শক্ত করে হাল ধরার মানসিকতা আমাদের থাকতে হবে।

সংগ্রামটি এখন ভিন্ন, সবচেয়ে ঝুঁকি, ধর্মীয় উগ্র মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা এবং সম্পদের অসাম্য। এগুলোকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে আমলে নিতেই হবে। এগুলোকে প্রতিহত করতে সাংস্কৃতিক আন্দোলন আর সংগ্রামের জন্য এই প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে, প্রস্তুত হতে হবে। মানবিকতা, ন্যায়বিচার, ন্যায়পরায়ণতা, অসাম্প্রদায়িকতা, সহনশীলতা, জ্ঞানচর্চা, দক্ষতা অর্জন এগুলোকে আমাদের আগামীর সংগ্রামের পাথেয় হিসেবে এই প্রজন্মকে সঙ্গে নিতে হবে। শুধুই নির্বাচনভিত্তিক রাজনীতি, রাজনৈতিক দলের পরিবর্তনে সরকারের পরিবর্তন এসব প্রত্যাশায় সীমাবদ্ধ থাকলে আগামীর যাত্রা হোঁচট খাবে।

লেখক: ড. যশোদা জীবন দেবনাথ, সদস্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপ কমিটি আওয়ামী লীগ


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল