সর্বশেষ সংবাদ
সিসিটিভির ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল
মোহাম্মদ শাকিল উদ্দিন :
গত মাসে বাইক চালানোর সময় স্পিড ক্যামেরায় ধরেছে ২৪ মাইল পার আওয়ারে স্পিডিং করেছি সে রাস্তাটির সর্বোচ্চ গতি ছিল ২০ মাইল পার আওয়ার।বাইক এবং আমার ডিটেলস লিখে চিঠি পাঠিয়েছে যেখানে বলা হয়েছে জরিমানা ৯১ পাউন্ড (প্রায় ১০,০০০/-) টাকা পরিশোধ করতে হবে এবং নির্ধারিত দিনে অনলাইনে ২ ঘন্টা ৪৫ মিনিটের একটি ট্রেনিং করতে হবে। অন্যথায় ড্রাইভিং লাইসেন্সের পয়েন্ট কেটে দেবে। তাই বাধ্য হয়েই টাকা পরিশোধ করে আজকে কোর্সটি সম্পন্ন করলাম।
কোর্সে যারা বেশি গতিতে গাড়ি কিংবা মোটর সাইকেল চালিয়ে ধরা পরেছেন তেমন ৯ জনকে দেখলাম।এ কোর্সের ব্যাপারে ইতিপূর্বে কলিগ বা বন্ধু বান্ধবদের যাকেই জিজ্ঞেস করেছিলাম সকলেই বলেছিল পুরো সময়টি বোরিং কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো পুরো সময়টিতে অবাক করার মতো কিছু তথ্য জানতে পারলাম। বাইক কিংবা গাড়ি যারা চালান অনেকের জন্য তথ্যগুলো জানা থাকা প্রয়োজন মনে করে উল্লেখ করছি।
১. ইন্সট্রাকটর একটি জরিপের তথ্য দিয়ে জানালেন যারাই ড্রাইভিং বা রাইডিং করেন প্রতি ঘন্টার মাত্র ১৫ মিনিট তাদের বাহনটি চালানোর সময় মনযোগ দিয়ে চালান বাকি সময়টুকু পূর্ণ মনোযোগ থাকেনা। যে কোন এক্সিডেন্টের মূল কারন যান চালানোর সময় চালকের মনোযোগ না থাকা। আর সে দৃষ্টিতে এ তথ্যটা কতটুকু মারাত্মক ভাবা যায়। আমরা যারাই যানবাহন চালাই মাত্র ১৫মিনিট/ঘন্টা মনোযোগ দিয়ে চালাই বাকি সময়টুকু মন ডুবে থাকে বিভিন্ন বিষয়ের দিকে যা অত্যন্ত মারাত্মক এবং ঝুঁকিপূর্ণ।
২. দ্বিতীয় যে তথ্যটি আরো অবাক করছে তা হলো, ২০ মাইলের রাস্তায় ২৪ মাইল পার আওয়ার স্পিডে চালিয়েছিলাম। মাত্র ৪ মাইল স্পিড লিমিট বেশি।১০/১৫ বেশি হলেও জরিমানাকে স্বার্থক মনে করতাম। এই ভেবে নিজেকে কিছুটা আনলাকি ভাবছিলাম যে সামান্য ৪’য়ের জন্য ধরা খেয়ে গেলাম।
কিন্তু আজ ট্রেনিংয়ে জানতে পারলাম। গাড়ির স্পিড লিমিট যদি ১ মাইল পার আওয়ারও বেশি হয় তাহলে তা সামনে থাকা যে কোন বস্তুকে ৮ মাইল পার আওয়ার বেগে আঘাত করে। যেহেতু ব্রেক করার পরও গাড়িটি ৮ মাইল গতিতে চলে তাই যেখানে থামার প্রয়োজন সেখানে থামানো সম্ভব হয়না।
৩. যে তথ্যটি হলো পরিসংখ্যান মতে সবচেয়ে বেশি এক্সিডেন্ট হয় গ্রামের ছোট রাস্তায়, যা শতাংশের দিক দিয়ে বৃটেনে ৬২%, শহরের বড় রাস্তায় ৩৩% আর হাইওয়ে বা মটরওয়েতে মাত্র ৫%। অর্থাৎ গ্রামের রাস্তায় দূর্ঘটনার বেশি ঘটে। যদিও এ সংখ্যাগুলো বৃটেনের তবে বাংলাদেশও শতাংশের পরিমানে গ্রামের রাস্তায় এক্সিডেন্ট হবার ঘটনাই বেশি ঘটে। কারন এখান জনমানব চলাচল বেশি এবং রাস্তাগুলো অপরিকল্পিত বেশি থাকে।
৪. ৯৩% দুর্ঘটনা ঘটে থাকে চালকের ভুলের কারনে।
৫.বৃটেনে বছরে ১৭৫২ জন মারা যান সড়ক দূর্ঘটনায়, মারাত্মক আহত হন ২৪,৯৪৫ জন, আর সাধারণভাবে আহত হন ১২৫,৪৬১ জন। বাংলাদেশে ২০১৯ সালে ৪৭০২ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ৫২২৭ জনের। অর্থাৎ বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু বৃটেনের ৩ গুন।
৬. যেহেতু ৯৩% দুর্ঘটনা ঘটে চালকের কারনে এর পেছনে অনুসন্ধান করলে দেখা যায় বিভিন্ন কারনে চালক হিসেবে আমরা এ পরিস্থিতির স্বীকার হই। যার অন্যতম হলো অমনোযোগী এবং স্ট্রেসে গাড়ি চালানো।
নিরাপদে যানবাহন চালানোর উপায়:
অমনোযোগীতা কাটানোর জন্য বেশ কিছু উপায়ও রয়েছে যার অন্যতম হলো কম গিয়ারে গাড়ি চালানো, গাড়িতে প্রিয় জনের ছবি রেখে অথবা অবহেলায় দূর্ঘটনা সম্পর্কে কোন কোটেশন বা ছবি স্টিকারের মতো রাখা যেতে পারে। যে কোন স্থানে লেটে যাওয়ার থেকে জীবিত পৌঁছানো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। Arrived Alive কোটেশন এক্ষেত্রে খুব বেশি ব্যবহার্য।
স্ট্রেসের আরো একটি কারন হলো গাড়িতে সুগার জাতীয় পানীয় অর্থাৎ ফ্রিজি ড্রিংক পান না করা যা সুগার লেভেলকে বাড়িয়ে তুলে যা চালকের দ্রুত গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে বড় ভুমিকা পালন করে। স্ট্রেসের
পরিমান বেড়ে গেলে গাড়ি থামিয়ে দীর্ঘ শ্বাস নেয়া যেতে পারে যা রক্তে অক্সিজেনের পরিমান বাড়িয়ে মস্তিষ্ককে স্বাভাবিক করে।
উপরোক্ত পয়েন্টগুলো ছাড়াও বিভিন্ন সাইন, এক যানবাহন থেকে অন্য যানবাহনের কমপক্ষে ২ সেকেন্ডারি দূরত্ব রাখা এবং রাস্তার পারিপার্শিকতা বুঝে পদক্ষেপ নেয়ারও অনেক বিষয় শেখানো হয়। যার মূল কারন যানবাহন নিরাপদে চালানোর মধ্যদিয়েও নিজের এবং অন্যের জীবনের নিরাপত্তা দেয়া।
মোহাম্মদ শাকিল উদ্দিন
লন্ডন, ৩০ এপ্রিল ২০২১।
Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.
উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ
কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল