সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

পাঠ্যবইয়ে ভুল

বিবর্তনবাদ অধ্যায় বাতিলসহ ৩০ সুপারিশ কমিটির

মঙ্গলবার, এপ্রিল ৪, ২০২৩
বিবর্তনবাদ অধ্যায় বাতিলসহ ৩০ সুপারিশ কমিটির

নিজস্ব প্রতিবেদক:

পাঠ্যবই থেকে বিবর্তনবাদের পাঠ বাতিল এবং বিভ্রান্তি এড়াতে বেগম রোকেয়ার অবরোধ বাসিনী প্রবন্ধটি পুরোটা অন্তর্ভুক্তিসহ ৩০টি সুপারিশ করেছে এ সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটি। গত ২৭ মার্চ এই কমিটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদনটি দাখিল করে। তারা ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান এবং ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞানের চারটি বই মূল্যায়ন করে। যদিও প্রথমে তাদের সব কটি বই মূল্যায়নের দায়িত্ব দিয়ে পরে তা প্রত্যাহার করা হয়।


অন্যদিকে আগামী ৮ এপ্রিল অষ্টম ও নবম শ্রেণির নতুন পাঠ্যবই রচনার কাজ শুরু হচ্ছে। কিন্তু এ কাজেও ইতোপূর্বে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বই লেখকদের অনেককেই রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এবারে লেখক প্যানেলে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীও আছেন। আর যথারীতি বিভিন্ন এনজিও ও বিদেশি সংস্থায় কর্মরত ব্যক্তিরা আছেন। চলতি বছরের বই লেখায় কোনো কোনো লেখক তার মতাদর্শের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। যে কারণে এ নিয়ে দেশব্যাপী তোলপাড় হয়। ফলে আগামী বছরের বই নিয়েও একই ধরনের শঙ্কার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।


এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদন তারা পাননি। তবে তাদের সুপারিশ ও নির্দেশনা তাদের দেওয়া হয়েছে। পাঠ্যবই সংশোধন ও সংযোজনের যে কাজ চলছে, সেখানে বিশেষজ্ঞদের সুপারিশের প্রতিফলন থাকবে। লেখক সম্পর্কে তিনি বলেন, গত বছরের লেখকদের অনেককেই রাখার তথ্য সঠিক। তারা গতবার যে বই লিখেছেন তাতে ভুল আছে এমন কথা কেউ বলেননি। নির্বাচনের বছর হওয়ায় রাজনৈতিক কারণে কোনো কোনো মহল বিতর্ক তুলেছিল। যা নিয়ে বিতর্ক করা হয়েছে তা সঠিক ছিল না। তবে এটা ঠিক যে, স্পর্শকাতর বিষয় থাকার যে প্রসঙ্গ এসেছে, সেটা লেখকদের দোষ নয়। ওই বিষয় দেখার দায়িত্ব যাদের ছিল, তাদের সেটি চোখ এড়িয়ে গেছে। এবার স্পর্শকাতর কোনো বিষয় থাকবে না। এ নিয়ে আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে। প্রয়োজনে কোনো বিষয়ে এমন কিছু ধরা পড়লে সেই বই আগামী বছর যাবে না।


সরকার এ বছর শিক্ষাব্যবস্থায় অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনপদ্ধতির শিক্ষাক্রম চালু করেছে। এর আলোকে এবার প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী বছর দ্বিতীয় এবং অষ্টম ও নবম শ্রেণিতেও নতুন পাঠ্যবই যাবে। কিন্তু গত ১ জানুয়ারি বই প্রকাশ পাওয়ার পরই বিভিন্ন ইস্যুতে বিতর্ক শুরু হয়। বিশেষ করে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে মানুষ সৃষ্টি, পর্দা, সমকামিতাসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে দেশব্যাপী বিতর্ক আর সমালোচনা দেখা দেয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ৩১ জানুয়ারি দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এর মধ্যে একটি ছিল বিশেষজ্ঞ কমিটি আর অপরটি প্রশাসনিক কমিটি। বিশেষজ্ঞ কমিটিতে প্রথমে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির প্রণীত পাঠ্যপুস্তকের অসঙ্গতি/ভুল/ক্রটি চিহ্নিত করে তা সংশোধনে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদান করতে বলা হয়। কিন্তু ২৬ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ কমিটি পুনর্গঠন করে দুই শ্রেণির সব বইয়ের পরিবর্তে কেবল বিজ্ঞান এবং ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের চারটি বইয়ের ভুল-ত্রুটি সংশোধনের কাজ দেওয়া হয়।


বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. আবদুল হালিম। তিনি সোমবার       বলেন, ‘মোটা দাগে আমরা ত্রিশটি সুপারিশ করেছি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ১১৩ থেকে ১১৫ নম্বর পৃষ্ঠায় বিদ্যমান মানুষের বিবর্তনের ইতিহাসসংক্রান্ত পাঠ তুলে নেওয়া। সেখানে যে অ্যাসাইনমেন্ট রাখা হয়েছে সেটি ধর্মীয়ভাবে স্পর্শকাতরতা সৃষ্টির মতো যা এ দেশের সমাজ-সংস্কৃতি ও ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এছাড়া বেগম রোকেয়ার অবরোধ বাসিনী প্রবন্ধটি পুরোপুরি রাখতে বলা হয়েছে। সমাজে নারীর তখনকার অবস্থা ও বর্তমান অগ্রগতি বোঝানোর জন্য এ পাঠটি রাখা উদ্দেশ্য হলে অবরোধ বাসিনীর আংশিক উপস্থাপন প্রকৃত বার্তা স্পষ্ট করে না।’জানা গেছে, ২৬ ফেব্রুয়ারি হালিম-কমিটি পুনর্গঠনের আগেই ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ৩০টি বইয়ের ওপরই তথ্য সংগ্রহ হয়ে যায়। তাই কমিটি বিজ্ঞান ও ইতিহাস এবং সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ওপর কেবল প্রতিবেদন দিলেও বাকি ৮ বিষয়ের ২৬টি বইয়ের ওপর যে কাজ করেছে সেই তথ্যও প্রতিবেদনের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।


কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক হালিম জানান, পাঠ্যবইগুলোতে অনেক ইতিবাচক দিক আছে। তথ্যবিভ্রাট তেমন নেই। বানান ও মুদ্রণ ত্রুটি আছে, যা যে কোনো কাজে প্রথমে থাকে। কিন্তু দু-এক ক্ষেত্রে ‘পাবলিক সেন্টিমেন্ট’র (জন-অনুভূতি) প্রতি নজর দেওয়া হয়নি। মনে হয়েছে কাজ করার ক্ষেত্রে কিছুটা অগোছালো অবস্থা ও সময় এবং প্রস্তুতির অভাব ছিল। এক কথায় বলতে গেলে-এনসিটিবির বিশেষজ্ঞ, লেখক, মুদ্রাকর এই তিন ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা ছিল। পাঠ নির্বাচনেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিকতার ঘাটতি লক্ষ করা গেছে। সর্বনাম ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়নি। বিশেষ করে ইংরেজি বইয়ে নির্দেশনার ক্ষেত্রে বাংলা অনুবাদ দেওয়া হয়েছে। বিদেশি ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে এটি জুতসই নয়। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার মতো পাঠ নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্কতার অভাব ছিল। এ দেশের ভাষা, সংস্কৃতি, সমাজ ও ধর্মীয় অবস্থা মাথায় রাখা হলে হয়তো এমনটি ঘটত না। এসব বিষয়টি সুপারিশ আকারে আছে।


সংশোধনী যাবে ঈদের আগে : ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ৩০টি বই-ই পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ৫টি দিক বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে-শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উল্লিখিত কমিটির সুপারিশ; বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ; এনসিটিবির একটি কমিটির সরেজমিন স্কুল পরিদর্শনে প্রাপ্ত ফিডব্যাক (শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন); রিভিউ কমিটির সামষ্টিক ফল; বই লেখকদের ব্যক্তিগত অনুসন্ধান।


গত ২৭ থেকে ৩১ মার্চ বিষয়ভিত্তিক লেখকরা উল্লিখিত দুই শ্রেণির ৩০টি বই পর্যালোচনা করেছেন। এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট সদস্য অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, ভুল চিহ্নিত হয়েছে। এখন সংশোধনী মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে ঈদের আগেই পৌঁছানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি আগামী বছর পরিপূর্ণ পরিমার্জিত বই সংশোধন ও সংযোজন করে পাঠানো হবে।


ফের একই লেখক : এদিকে আগামী যেসব লেখককে নিয়ে বই লেখার কারণে এবার বিতর্ক উঠেছে তাদের অনেকেই অষ্টম-নবম শ্রেণির বই লেখকের তালিকায় আছেন। বিশেষ করে বিজ্ঞান, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা বই নিয়ে বিতর্ক ছিল বেশি। স্বাস্থ্য সুরক্ষা বইটির লেখক ছিলেন ১০ জন। তাদের মধ্যে ৫ জনকেই অষ্টম-নবম শ্রেণির বই লেখকের তালিকায় রাখা হয়েছে। বিজ্ঞান বইয়ের লেখক ছিলেন ৫ জন, যাদের মধ্যে ৩ জন এবারও আছেন।


ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির গণিত বইটির লেখক ছিলেন ৯ থেকে ১২ জন। তাদের মধ্যে ৬ জন আগের। নতুন প্যানেলে মাস্টার্সের একজন শিক্ষার্থী রাখা হয়েছে। এছাড়া গণিত অলিম্পিয়াড করা একটি বেসরকারি সংস্থার লোকও আছেন। ডিজিটাল প্রযুক্তি বইটির লেখক ছিলেন ৮ জন, যাদের মধ্যে ৬ জনই আগের। নতুন প্যানেলে মাস্টার্সের এক ছাত্র আছে। এছাড়া বেসরকারি সংস্থার লোকও আছে। কিছু বইয়ে চট্টগ্রামকেন্দ্রিক লেখকের আধিক্য দেখা যায়। আর যথারীতি ইউনিসেফসহ এনজিও ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিরা আছেন লেখকের তালিকায়। বাংলার মতো বিষয় লেখকের তালিকায় এমন একজনকে দেখা যায়। জানা গেছে, লেখকের এই তালিকা অনুমোদনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে এনসিটিবি।


এসএম


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল