সাইফ ইব্রাহীম, ইবি প্রতিনিধি:
ছাদ থেকে পড়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ল'এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নওরীন নুসরাতের মৃত্যুর ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। সংশ্লিষ্ট দাবিতে আজ চতুর্থ বারের মতো মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (২৩ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সম্মুখে অবস্থিত 'মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব' ম্যুরালের সামনে টাঙ্গাইল জেলা থেকে আগত শিক্ষার্থীদের সংগঠন টাঙ্গাইল জেলা ছাত্র কল্যাণ সমিতি এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। নওরীন নুসরাত এই সংগঠনটির নাট্য ও বিতর্ক বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
এর আগে সকাল ১১টায় মুখে কালো কাপড় বেঁধে মৌন মিছিল করেন সংগঠনটির সদস্যরা। মিছিলটি অনুষদ ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের প্রধান সড়কসমূহ প্রদক্ষিণ করে মানববন্ধন স্থলে গিয়ে শেষ হয়।
মানববন্ধনে সংগঠনটির উপদেষ্টা চারুকলা বিভাগের প্রভাষক রায়হান উদ্দীন ফকির, সভাপতি নাছির উদ্দিন আবির, সহ-সভাপতি মুসা হাশেমী, সাংগঠনিক সম্পাদক রেজুয়ান ইসলাম নয়ন, দপ্তর সম্পাদক সুজন মাহমুদ সহ সংগঠনটির অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
নওরীনের মৃত্যুটি 'হত্যা নাকি আত্মহত্যা?' বিষয়টি সুরাহা করতে সংগঠনের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট সাহায্য কামনা করে মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, 'একাধিকবার মানববন্ধন করার পরেও তদন্তে এমন গড়িমসি কাম্য নয়। আশা করি খুব দ্রতই রহস্য উন্মোচন হবে এবং দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। এজন্য আমাদের জেলা ছাত্র কল্যাণের পক্ষ থেকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাহায্য কামনা করছি।'
মানববন্ধনে সংগঠনটির সহ-সভাপতি মূসা হাশেমীর সঞ্চালনায় টাঙ্গাইল জেলা কল্যাণের সভাপতি নাছির উদ্দিন আবির বলেন, 'নওরীনের মতো ভালো মনের একজন মানুষের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়া আমরা কোনোভাবে মেনে নিতে পারিনা। আমরা কখনোই ভাবিনি তার মৃত্যু নিয়ে এমন ধোঁয়াশা সৃষ্টি হবে। আজ পুলিশ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার গ্রহণ করতে আমরা মৌনমিছিল করেছি। সঠিক তদন্ত ও বিচার না হলে ভবিষ্যতে আমরা আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।'
সংগঠনের উপদেষ্টা চারুকলা বিভাগের প্রভাষক রায়হান উদ্দীন ফকির বলেন, 'বেশ কয়েকবার আমার নওরীনের সঙ্গে কথা হয়েছে। সে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে তার বিতর্ক ও যুক্তিতর্কের মাধ্যমে দেশের কাছে তুলে ধরেছে। শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার বিরদ্ধে সচেতন করতেও সে কাজ করে গেছে। আজ তার মৃত্যুই আত্মহত্যা নাকি হত্যা আমরা জানিনা। আমি দাবি জানাই এই রহস্যজনক মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হোক।'
প্রসঙ্গত, গত ২১ জুলাই চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর থানার কলাকান্দা গ্রামের মৃত জহিরুল আলমের ছেলে ইব্রাহিম খলিলের সাথে বিয়ে হয় নওরিন নুসরাত স্নিগ্ধার। বিয়ের পর থেকে স্বামীর সাথে সাভারের আশুলিয়ায় একটি ছয়তলা আবাসিক ভবনে থাকতেন তিনি। বিয়ের ১৫ দিনের মাথায় গত ৮ আগস্ট সন্ধ্যায় তিনি ওই ভবনের ছাদ থেকে পড়ে মারা যান। তার এই মৃত্যু 'হত্যা নাকি আত্মহত্যা?' এ নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। তার শ্বশুর বাড়ি থেকে দাবি করা হয় সে ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। অন্যদিকে তার মৃত্যুটি আত্মহত্যা নয় বরং এর পেছনে অন্য কোনো রহস্য রয়েছে বলে দাবি করেন তার বাবা খন্দকার নজরুল ইসলাম। রহস্যজনক এই মৃত্যুর প্রকৃত সত্য উদঘাটন এবং বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর খোলা চিঠিও দিয়েছেন তিনি। এবং একই দাবিতে গত ১২ আগস্ট নওরীনের বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা, ১৬ আগস্ট তার ব্যাচের (২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থীরা, গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি এবং আজ টাঙ্গাইল জেলা ছাত্র কল্যাণ সমিতি মানববন্ধন করেছেন।
এমআই