বুধবার, ০১ মে ২০২৪

ভালো নেই ধামরাইয়ের মৃৎ শিল্পীরা

রোববার, অক্টোবর ৮, ২০২৩
ভালো নেই ধামরাইয়ের মৃৎ শিল্পীরা

মাহবুবুল আলম রিপন, ধামরাই প্রতিনিধি:

ধামরাইয়ের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প এখন বিলুপ্তির পথে। ভালো নেই এ এলাকার মাটির কারুশিল্পীরা। পূর্ব পুরুষের পেশা ইতিমধ্যেই ছেড়েছেন অনেকেই। নেই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, সংকট তৈরি হয়েছে এ কাজের কাঁচামাল এঁটেল মাটি। ঋণ চাইলেও সাড়া দেয় না সরকারি ব্যাংক, বেসরকারি সংস্থাও নিয়েছে মুখ ফিরিয়ে। সব মিলিয়ে তৈরি হয়েছে শূন্যতা।

প্রাচীন সভ্যতার অপূর্ব উপকরণ মৃৎশিল্প আজ বিলুপ্তি পথে। পূরুষ ও বউদিদের নিপুন হাতের ছোঁয়ায় মাটি হয়ে ওঠে বিভিন্ন ধরণের সৌখিন সামগ্রী। তাদের বলা হয় পাল সম্প্রদায় এ শিল্পের প্রাণপুরুষ পালদের বর্তমানে চলছে চরম দুর্দিন। মৃৎশিল্প মানুষের উদ্ভাবিত প্রারম্ভিক শিল্পকলার একটি। বাংলাদেশের লোকজ কারুকাজে মৃৎশিল্পের কারিগরিদের অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। মাটি দিয়ে তৈরি নানা রকম বাহারী নজরকাড়া ভৈজয়পত্র আমাদের নান্দনিক জীবন ও সাংস্কৃতিকে করেছে আরো বিকশিত। আবহমান বাংলার লোক শিল্পের বিকাশ ঘটে প্রধানত মৃৎশিল্পের তৈরি পন্যের মাধ্যমে। অনুমানিক প্রায় দশহাজার বছর আগে পৃথিবীতে প্রথম মৃৎশিল্পের অবিভাব ঘটে। এরপর প্রথমে মিশরে কুমারের চাকা আবিস্কারের কথা জানা গেলেও কুম্ভকারের আদিনিবাস পৃথিবীর কোন আঞ্চলে ছিল কিনা তা এখনো জানা যায়নি। তবে অনুমানিক ১৫০০ খ্রিস্টপূর্ব থেকে বাংলাদেশে এক বিশেষ শিল্প হিসাবে বিকাশ লাভ করে। কিন্তু আজ সেই মৃৎশিল্প বিলুপ্তির পথে। এরপর মৃৎশিল্পের জন্য যে কাদা মাটি ব্যাবহার করা হয় তা একটু আলাদা ধরনের। যেমন নদীর অববাহিকাতেই এই মাটি বেশি পাওয়া যায়। এছাড়া ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় এই মাটি পাওয়া যায়। এই মাটি দিয়ে তৈরি হত আমাদের নান্দনিক জীবনের প্রয়োজনীয় সকল কাজের পাত্র হিসাবে। কিন্তু আজ আর সেই কাজের জন্য মাটির প্রাত্রের প্রয়োজন হয় না। যার কারণে মৃৎশিল্প আজ বিলুপ্তির পথে।

ঢাকা থেকে প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার দূরে উত্তর পশ্চিম দিকে ধামরাই উপজেলার অবস্থান। এই ধামরাই উপজেলায় এক সময় ছিল মৃৎশিল্পের জন্য বিখ্যাত। কারণ বংশী নদীর কোল ঘেষে পাল সম্প্রদায়ের বসবাস। সেখানে মৃৎশিল্প তৈরি করতে সুবিধা ছিল । কারণ নৌকা দিয়ে মাটি আনতে ও পৌছাতে ছিল সুবিধা, যার কারনে বেশির ভাগ পাল সম্প্রাদায়ের বসবাস হয় নদীর তীরে। আবার সেখান থেকে নদী পথে যাতায়াত বা মালামাল এদিক সেদিক নিতেও ছিল অনেক সুবিধা। এই কারনে বেশির ভাগ পালদের নদীর পারে কাজ করতে দেখা যায়, আর সেটা ছিল ধামরাই পালপাড়া বংশী নদীর পাড়ে, গাজীখালী নদীর পাড়ে বেলিশ্বর পাল পাড়া। 

গুকুল পাল ও ধীরেন পালেরা পূর্বপুরুষ থেকে এই মৃৎশিল্পের সাথে জড়িত। তারা এক সময় এই ব্যাবসা করে পরিবার পরিজন নিয়ে বেশ সুখে দিন কাটাতেন। কিন্তু বর্তমানে আধুনিকায়নের ফলে বাজারে টিকে থাকতে পারছেনা। কারণ বর্তমানে বাজারে প্লাস্টিকের সওলাব হওয়ার কারনে মাটির তৈরি পণ্য আর কেউ ক্রয় করতে চায় না। আবার এই কাজের জন্য অনেক পুঁজির প্রয়োজন। বর্তমান বাজারে সব জিনিসের দাম ঊর্ধ্বগতির জন্য অল্প টাকায় এই ব্যবসা এখন আর হয় না। সেজন্য কাজের তুলনায় প্রয়োজনীয় পুঁজিস্বল্পতার কারণে এই পেশার নৈপুণ্যতা হারাতে বসেছে বলে জানান পাল সম্প্রদায়ের লোকেরা। ইতোমধ্যে অনেকেই জীবিকার তাগিদে ভিন্ন পেশায় চলে গিয়েছে। ফলে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এই মৃৎশিল্প। ধামরাই
কাগজিপাড়া ও বেলীশ্বর পালপাড়া এই বিশাল দুটি এলাকায় মৃৎশিল্পের কাজ হয় বেশি। কারণ এই এলাকায় প্রায় ১০০টি হিন্দু সম্প্রদায়ের পরিবারই মৃৎশিল্পের সাথে জড়িত। এদের মধ্যে সন্তোষপাল ও গদাপাল বলেন, বর্তমানে আমরা মৃৎশিল্পের কাজ করে আমাদের সংসার চালানো খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ বর্তমান বাজারের সাথে টিকে থাকতে আমাদের যা দরকার সেটা নেই। আবার আধুনিকায়ন হওয়ার কারণে আমরা বাজারে টিকে থাকাও মুশকিল হয়ে পড়েছে। যার কারণে পাল সম্প্রদায়েরা মৃৎশিল্প বাদ দিয়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। এজন্য মৃৎশিল্প আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাড়িয়েছে বলে জানান তারা। এরমধ্যে অনেকেই আছে যারা অন্য কোন পেশায় কাজ করতে পারে না, তারা আজ খুবই কষ্টে দিন যাপন করছেন বলে
জানান পাল সম্প্রদায়ের লোকেরা।

এ ব্যাপারে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার এস. এম. হাসান, বলেন যে কোনো দুর্যোগে এই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত প্রকল্পের মাধ্যমে ধামরাই উপজেলার প্রান্তিক পেশাজীবী মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে নিয়ে আসা, আদি পেশা টিকিয়ে রাখা ও তাদের জীবনমান উন্নয়নে নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল