সাইফ ইব্রাহিম, ইবি প্রতিনিধি:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) যাবতীয় ফি প্রদানে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি দীর্ঘদিনের। তবে দেরিতে হলেও এই ভোগান্তির অবসান ঘটেছে। ভোগান্তি নিরসনে অনলাইন মোবাইল ব্যাংকিং পদ্ধতির চালু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অগ্রণী ব্যাংক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে এই সেবা চালু করা হয়েছে।
বুধবার (২২ নভেম্বর) দুপুর ১টায় ৪৫ তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে বীরশ্রেষ্ট হামিদুর রহমান মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে এই স্টুডেন্টস ই-পেমেন্ট কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
এসময় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া। এছাড়া রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এইচ এম আলী হাসান, দিবস উদযাপন কমিটির আহবায়ক ও প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ, পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, ছাত্রউপদেষ্টা সেলিনা নাসরিন, আইসিটি সেল-এর পরিচালক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধন শেষে অ্যাপস এর মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর ফরম পূরণের ফি পরিশোধ করা হয় এবং এর ব্যবহারবিধি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। জানা যায়, এই পদ্ধতির মাধ্যমে অগ্রণী ব্যাংকের মোবাইল অ্যাপস ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, পুনঃভর্তি, একাডেমিক, হল, পরিবহন, কাগজপত্র উত্তোলনসহ সকল ধরনের ফি পরিশোধ করতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। আর দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ব্যাংকে টাকা জমা দিতে হবে না তাদের। এসকল কার্যক্রম সম্পূর্ণরুপে শুরু করতে সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
এদিকে ৪৫তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, কেক কাটা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সকাল সাড়ে ১০ টায় প্রশাসন ভবন চত্বরে পতাকা উত্তোলন, শান্তির প্রতীক পায়রা এবং আনন্দের প্রতীক বেলুন উড়িয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম।
কর্মসূচির উদ্বোধন শেষে উপাচার্যের নেতৃত্বে প্রশাসন ভবন চত্ত্বর থেকে একটি বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। এতে বিভিন্ন বিভাগ, দপ্তর ও হলসমূহ স্ব-স্ব ব্যানারে অংশগ্রহন করেন। শোভাযাত্রাটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটকের সামনে অবস্থিত ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’ ম্যুরালের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এসময় শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারী সকলের মাঝে দেখা যায় ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা। শোভাযাত্রা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মৃত্যঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন শেষে ৪৫তম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে কেক কাটা ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এসময় অনুষ্ঠানে দিবস উদযাপন কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া।
সভায় বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. বাকি বিল্লাহ বিকুলের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘৪৪ বছরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ব্যর্থতা আছে আবার অনেক সফলতাও আছে। তবে আমাদের উন্নয়ন হচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে এর ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হবে। দশ বছর আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিলেন তখন এটি আমাদের কাছে একটি অকল্পনীয় বিষয় ছিল। আমাদের মাঝে এটা নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল। কিন্তু এখন এটা বাস্তবে রুপ দিতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।’
উপাচার্য আরও বলেন, ‘আগামী এক বছরের মধ্যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চেহারা বদলে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩৭টি ডেভেলপমেন্টাল কম্পোনেন্টের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ১১ টি কাজ সম্পন্ন করেছি। আগামী এক বা দেড় বছরের মধ্যে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত পরিবর্তন দেখতে পাবো। এতে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট মিটাতে পারবো বলে বিশ্বাস করি। ক্লাসরুম সংকটও নিরসন হবে শীঘ্রই।’ এছাড়াও তিনি তার বক্তব্যে আগামী বছর একটি সমাবর্তন আয়োজনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
পরে আলোচনা শেষে সেখানে শিক্ষার্থীদের বহুল প্রতীক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ই-ব্যাংকিং সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে কেক কাটা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।
সময় জার্নাল/এলআর