সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

তাজরীন ট্র্যাজেডি: ভয়াল স্মৃতি আর রোগ-শোকে পরিপূর্ণ

শুক্রবার, নভেম্বর ২৪, ২০২৩
তাজরীন ট্র্যাজেডি: ভয়াল স্মৃতি আর রোগ-শোকে পরিপূর্ণ

নিজস্ব প্রতিনিধি:

তাজরীন ট্র্যাজেডির ১১ বছর। আজ ২৪ নভেম্বর। পোশাকশিল্পের ইতিহাসে এক ট্র্যাজেডির দিন। ২০১২ সালের এই দিনে পোশাক কারখানা তাজরীন ফ্যাশনসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ১১৭ জন শ্রমিক মারা যান। আহত হন আরও কয়েকশ শ্রমিক। ১১ বছর আগের এদিনে তাজরীন ফ্যাশনে আগুন ছড়িয়ে পড়লে কারখানাটির ভেতর আটকা পড়েন শত শত শ্রমিক।

অনেকে ছাদ থেকে ভবনের পাইপ বেয়ে নিচে নেমে জীবন বাঁচান। অনেকে আবার প্রাণ বাঁচাতে ছাদ ও জানালা থেকে লাফ দেন। বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের অনেকেই জানিয়েছেন, সেদিনের সেই দুঃসহ স্মৃতি এখনও তাদের তাড়িয়ে বেড়ায়।

এমনই একজন শ্রমিক রেহানা আক্তার। তিনি কারখানার সুইং অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। গ্রামের বাড়ি রংপুর জেলায়। তাজরিনের ট্র্যাজেডিতে হারিয়েছেন নিজের বড় বোন, দুলাভাই, তাদের ছেলে ও ছেলের স্ত্রীকে। একসাথে এত স্বজন হারিয়ে নিজেকে এখন হতভাগা আখ্যায়িত করা ছাড়া তার যেন আর কিছুই করার নেই। রেহানা আক্তারের বড় বোনও কাজ করতেন ৩য় তলাতেই। তার দুলাভাই ছিলেন কারখানার প্যাকিং ম্যান, তার ভাগিনা ছিল স্যাম্পল ম্যান ও ভাগিনার স্ত্রী ছিলেন হেলপার।

তাজরিন ফ্যাশনে হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনায় মামলার প্রধান আসামি কারখানা মালিক দেলোয়ার খানের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতেও শ্রমিকদের দাথে দুর্ব্যবহার করার অভিযোগ তুলেন এই শ্রমিক। তিনি বলেন, 'আমাদের সাথে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে কথা বলে। উনি অন্যায় করে পার পেয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশে কোন বিচার আছে? সবই বড়লোকের, গরিবের কোন বিচার নাই। তিনি বলেন, আমি তোদের একটা টাকাও দেবনা। আমি টাকা দেব এ্যাডভোকেটদের, আমি টাকা দেব সরকারের কাছে।'

তাজরীন ফ্যাশনসে কোয়ালিটি কন্ট্রোরাল হিসেবে কাজ করতেন রবিন। ২০২৩ সালের ৯ মে মাসে মারা যান তিনি। ফাতেমা খাতুন বলেন, চায়ের দোকান দেয়ার দুই মাসের মাথায় মারা যায় আমার স্বামী। এখন দুই মেয়েকে নিয়ে আমার পক্ষে একা সংসার চালানো তো কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দিনে বেচাবিক্রি হয় ৭ থেকে ৮শ টাকার। এই টাকা দিয়ে দোকানের মালামালও কিনতে হয়। আবার আমারও চলতে হয়। এক কেজি চাল, এক পোয়া তেল কিনে কোনমতে খাওয়া দাওয়া চলছে। চাওয়া এখন একটাই, ক্ষতিপূরণ।

তার মত তাজরীনের আহত শ্রমিকরা অনেকেই ভয়াল স্মৃতি আর রোগ-শোকে পার করছেন হতাশার জীবন। আহত শ্রমিক নাজমা আক্তার। কাজ করতেন ৪ তলায়। আগুন ছড়িয়ে পড়লে তিনি ৪ তলার জানালা থেকে লাফ দিয়েছিলেন। এরপরেই আর মনে নেই কিছু। করূণ দৃষ্টিতে তিনি বলেন, ১১ বছর শেষ হয়ে ১২ বছরে পরলো। দিবে দিবে বলে এতদিন গেল। কিছুই তো দিলনা। 

তাজরীন অগ্নিকানণ্ডে আহত আরেক শ্রমিক জহির ৪ তলায় অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। লাফিয়ে পড়ে আহত হয়েছিলেন তিনিও। এখন আর কাজ করে খাওয়া তার পক্ষে সম্ভব না। তিনি বলেন, ১০-১১ বছর হইছে দুর্ঘটনার। কিন্তু আমি সরকারের কাছ থেকে একটা টাকা পর্যন্ত পাইনাই। অনেকেই পাইছে শুনছি, নামও দিছি। কিন্তু একটা টাকাও আমার কাছে আসেনাই। এখন কষ্ট করে চলতেছি। টুকটাক যেই কাজই পাই, সেই কাজই করি। সরকার যদি সহায়তা করত তাহলে ভালো হত, জোর করে তো আর কোন কিছু সম্ভব না। আমি তো গরীব মানুষ, আমার তো কিছু করার নাই।

আহতদের পুর্নবাসনের দাবি তুলেছেন শ্রমিক নেতারাও। রয়েছে দোষীদের শাস্তির দাবিও। গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. সরোয়ার হোসেন বলেন, ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর আগুন লাগার পর কারখানা কর্তৃপক্ষ গেটে তালা লাগিয়ে শতাধিক শ্রমিককে পুড়িয়ে হত্যা করে। এ ঘটনার ১১ বছর পার হলেও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হয়নি।

ইউনাইটেড ফেডারেশন অব গার্মেন্টস ওয়ার্কার্সের সাভার-আশুলিয়ার আঞ্চলিক সভাপতি মো. ইমন সিকদার বলেন, তাজরীন ট্র্যাজেডি ভোলার মত না। ১১ বছর পার হল, এখনও বিচার হয়না। বিচার প্রক্রিয়াধীন। আমরা দেখেছি নিজ উদ্যোগে আহত কিছু শ্রমিক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে, যারা পঙ্গু। আমরা চাই, সরকার থেকে এবং বিজিএমইএ থেকে সহায়তা করে তাদের নিজেদের চলার মত ও চিকিৎসার খরচ মেটানোর মত যেন একটা ব্যবস্থা করা হয়। আহত শ্রমিকরা তাজরীনের পরিত্যক্ত ভবনটি ব্যবহার করার সুযোগ পেলে তাদের জন্য সুবিধা হত। এটা প্রয়োজনীয় সংস্কার করে তাদের থাকার সুযোগ করে দেয়া যেতে পারে। অনেকে আছেন পঙ্গু হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

সাভারের আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় অবস্থিত তাজরীন ফ্যাশন্সের ভবনটি এখন শুধুই সময়ের সাক্ষী। দীর্ঘ এতগুলো বছর পরে ভবনটিকে দেখলে অনেকটা ভুতুড়েই মনে হয়। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন, নিহত শ্রমিকদের পরিবার ও আহত শ্রমিকরা এদিন কারখানার সামনে উপস্থিত হয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন।

সময় জার্নাল/এলআর


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল