শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

মৃত্যুর আগেও সব আলো ছিল তার ওপর, বিদায় হলো তার নীরবে

শনিবার, ডিসেম্বর ৩০, ২০২৩
মৃত্যুর আগেও সব আলো ছিল তার ওপর, বিদায় হলো তার নীরবে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

অনেকটা লোকচক্ষুর আড়ালেই সম্পন্ন হল 'প্যারাসাইট' তারকা লি সান কিউনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া। গণমাধ্যমকে দূরে রেখে একটি ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁর পরিবার তাকে শেষ বিদায় জানান। তবে দক্ষিণ কোরিয়ান এ তারকা মৃত্যুর শেষ মাসগুলোতে মাদক সেবনের জন্য তদন্তের অধীনে ছিলেন।

লি সানের সহকর্মীরা তাকে স্মরণ করতে তাদের বিভিন্ন ইভেন্ট ও অনুষ্ঠান বাতিল কিংবা স্থগিত করেন। লির পরিবার কোরিয়ান গণমাধ্যমগুলোকে অনুরোধ করেন তাদের এই শোকাগ্রস্ত সময়ে বাড়িতে এসে অযথা বিরক্ত না করতে। তারা জানান, শুধুমাত্র লির কাছের বন্ধু ও সহকর্মীদের নিয়েই তারা এই কঠিন সময় পার করতে চান।

লির স্ত্রীর কাছে লেখা শেষ ব্যক্তিগত চিঠি একটি গণমাধ্যম প্রকাশ করে দেওয়ায় তা নিয়ে সমালোচনা তৈরি হয়েছে। এছাড়া তার গাড়ি চালানোর সিসিটিভি ফুটেজ ও জনসম্মুখে তার শেষ উপস্থিতির ভিডিওগুলোও ইউটিউবে প্রকাশ করে দেওয়া হয়েছে যা ইতোমধ্যে মিলিয়ন ভিউ কামিয়েছে।

গত বুধবার সিউলে পার্কের পাশে থাকা একটি গাড়ি থেকে ৪৮ বছর বয়সী এ অভিনেতার মৃতদেহ পাওয়া যায়। পুলিশ এটিকে আত্মহত্যা হিসেবে সন্দেহ করছে।

অস্কারজয়ী সিনেমা প্যারাসাইটের জন্য জনপ্রিয় হওয়া এ তারকার আকস্মিক মৃত্যুতে সারাবিশ্বে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

গত অক্টোবর থেকে মাদক মামলায় পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। তাই তার মৃত্যুতে দুঃখবোধ করার পাশাপাশি কিছুটা ক্ষোভও রয়েছে ভক্তদের মাঝে।

দক্ষিণ কোরিয়ার জনপ্রিয় তারকাদের মধ্যে লি একজন। তারকাদের রোল মডেল হিসেবে মূল্য দেওয়া দক্ষিণ কোরিয়ায় তিনি অনেক প্রশংসিত ছিলেন। তাই লির ক্যারিয়ারের আকস্মিক পতন কিছুটা বিষ্ময়ের সৃষ্টি করে।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ পিটার জং-হো না বিবিসির নিউজ আওয়ারে ব্যাখ্যা করেন, দক্ষিণ কোরিয়ার তারকারা যারা পুলিশি তদন্তের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তারা প্রচুর সামাজিক চাপ এবং সমালোচনা সহ্য করেন। তিনি এটিকে 'আত্মসম্মানে আঘাত' বলে অভিহিত করেন। 

গত অক্টোবরে, সিউলের একটি বারের একজন হোস্টেস লিকে গাঁজা এবং কেটামিনের মতো মাদক ব্যবহার করার জন্য অভিযুক্ত করেন।

তবে লি জানান তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে মাদকগুলো নেননি। তাকে দোষী সাব্যস্ত করা না হলেও মৃত্যুর সময় পর্যন্ত তদন্ত চলমান ছিল। কিন্তু মহিলা এসকর্টদের সাথে ঘটা বারের ঘটনাটি তার ভাবমূর্তি ও খ্যাতিকে বিনষ্ট করে।

লি অক্টোবরের শুরুতে সাংবাদিকদের বলেন, "আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত যে এই ধরনের একটি অপ্রীতিকর ঘটনার সাথে জড়িত হয়ে অনেক লোককে হতাশ করেছি। আমি আমার পরিবারের জন্যও দুঃখিত, যারা এই মুহুর্তে আমার জন্য এমন কঠিন পরিস্থিতি সহ্য করছেন।"

ইয়োনহাপ নিউজের রিপোর্ট অনুসারে, লিকে তিন দফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, যার একটি গত শনিবার ১৯ ঘন্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। এজন্য চলমান বিভিন্ন বিজ্ঞাপন এবং প্রযোজনা থেকেও তিনি সরে এসেছিলেন। বিভিন্ন বিজ্ঞাপনদাতারা তার বিরুদ্ধে কয়েক মিলিয়নের মামলা করতে পারে এমন কথাও শোনা যাচ্ছিল গণমাধ্যমে।  

যদিও লি পুলিশকে আরেকটি চূড়ান্ত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অনুরোধ করেন, কিন্তু পুলিশ তা প্রত্যাখান করে। লি চারদিক থেকে যে সামাজিক চাপের শিকার হচ্ছিলেন, তা আমলে না নেওয়ার জন্য তার ভক্তরা পুলিশের কঠোর সমালোচনা করেন। তবে পুলিশ দৃঢ়তার সাথে বলে যে, লি'র চুক্তি বা অনুমোদন নিয়েই এই কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে।

তদন্তের কারনেই লির মৃত্যু হয়েছে কিনা এমন প্রশ্ন ওঠলে জাতীয় পুলিশ কমিশনার তা নাকচ করে দেন। তবে তিনি জানান, তদন্তে যদি কোনো সমস্যা থাকে তাহলে তারা তা খতিয়ে দেখবেন।

কোরিয়ান গণমাধ্যমগুলো অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে দর্শকদের জন্য এ মামলার সকল খবরাখবর প্রচার করে আসছিল। কাকায়োটক ও ইউটিউবের মত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো ব্যবহার করে লির সকল মামলার আপডেট দ্রুত ছড়িয়ে পড়তো। এছাড়া, গণমাধ্যমগুলোতে দর্শক আকৃষ্ট করতে তাকে ব্যবহার করে সেনশনাল বা চাঞ্চল্যকর সংবাদের প্রচার করতেও দেখা যায়। এমনকি জাতীয় সম্প্রচারক কেবিএসও মহিলা বার কর্মীদের সাথে লির ব্যক্তিগত কথোপকথন প্রকাশ করে।

অনলাইনে একটি মন্তব্য পাওয়া যায়, 'তিনি মাদকের কারণে মারা যাননি, অন্য লোকেরা তাকে যে অপমান করেছে তার কারণেই সে মারা গেছে।'

ইউটিউবে অন্য একজন বলেছেন, 'এই দেশে মানহানির শাস্তি অত্যন্ত দুর্বল। আমি আশা করি যেসমস্ত লোক যাচাই-বাছাই না করেই নিবন্ধগুলো লিখেছেন এবং কোনও সঠিক ভিত্তি ছাড়াই সেগুলো ছড়িয়ে দিয়েছেন তিনি নিজেই একদিন এরকম ঘটনার শিকার হবেন।'
 
তবে সবাই লির এ দুর্দশার সাথে সহানুভূতি প্রকাশ করেনি। তাকে পুরোপুরি একজন ভিক্টিম বলা যায় না কারন তিনি স্বীকার করেছিলেন যে, তিনি একজন মহিলা এসকর্টের সাথে একটি বারে ছিলেন এবং তিনি তাকে কিছু দিয়েছিলেন। যদিও তিনি দাবি করেন, এটি মাদক ছিল না।

২০১৫ সাল পর্যন্ত ব্যভিচারকে, উত্তর কোরিয়ায় একটি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হতো। আর লির এ তদন্তটি মাদকের বিরুদ্ধে একটি বিস্তৃত অভিযানের অংশ ছিল, এ অভিযানে কয়েক হাজার গ্রেপ্তার হয়।

দক্ষিণ কোরিয়ায়, মাদকের ব্যবহারকে সামাজিক কলঙ্ক হিসেবে দেখা হয়। এমনকি সাধারণ ব্যক্তিরাও পরিবার এবং বন্ধুদের কাছ থেকে এ নিয়ে বঞ্চনার সম্মুখীন হন। আর এই ঘৃণা তারকাদের জন্য আরও বড় হয়ে দেখা দেয়। তাই এ ধরনের অভিযোগ যেকোনো তারকার ক্যারিয়ার নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট।  

দক্ষিণ কোরিয়া সিঙ্গাপুর, চীন এবং জাপানের মতো দেশের মত রক্ষণশীল সামাজিক মূল্যবোধ এবং মাদকের প্রতি কঠোর মনোভাব ধারণ করে। পশ্চিমা দেশগুলোতে মাদক সমস্যা প্রায়ই পুনর্বাসনের দিকে পরিচালিত করলেও দক্ষিণ কোরিয়াসহ এশিয়ান দেশগুলো এ বিষয়ে কঠোর অবস্থান বজায় রাখে। এশিয়ান দেশ হিসেবে একমাত্র থাইল্যান্ডই গাঁজা ব্যবসাকে বৈধ করেছে।

এই বছরের শুরুতে কে-পপ তারকা মুনবিনের মৃত্যুর পর কোরিয়ান পপ সংস্কৃতি সমালোচক হা জায়ে-কুন বিবিসিকে বলেছেন, 'অন্যান্য দেশের তুলনায় কোরিয়াতে তারকাদের জন্য খুব কঠোর নৈতিক মানদণ্ড রয়েছে। এবং এটি শুধু তারকাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়।'

২০২০ সালে, সিউলের মেয়র যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার পরে আত্মহত্যা করেন বলে ধারণা করা হয়।

এশিয়ার অন্যান্য দেশের মতো দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সাহায্য চাইতে বা তা নিয়ে কথা বলতে দ্বিধায় ভুগেন। তাই দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বের সবথেকে বেশি আত্মহত্যাপ্রবণমূলক দেশের একটি।  

সাম্প্রতিক প্রকাশিত সংবাদগুলোতে কে-পপ তারকা থেকে কিশোর-কিশোরীদের কথাও ওঠে এসেছে যারা মানসিক অবসাদ ও হতাশায় ভুগছেন। ২৩ বছর বয়সী একজন শিক্ষকের কথাও জানা যায় যিনি বাবা-মার উৎপীড়নের কারণে নিজের জীবন নিয়েছিলেন।

যদিও লির মৃত্যুকে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মহত্যা বলে ঘোষণা করা হয়নি, তবে তার পরিবার ময়নাতদন্ত করবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে বাড়ির বাইরে, ভক্তরা শ্রদ্ধা হিসাবে হলুদ কাগজে নোট লেখেন, "এই ঠান্ডা শীতে আপনি যেখানেই যান না কেন, বসন্তের উষ্ণতায় বিশ্রাম নেবেন।"

এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল