মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪

এলার্জি জনিত নানাবিধ সমস্যা ও প্রতিরোধের উপায়

মঙ্গলবার, জুন ২৯, ২০২১
এলার্জি জনিত নানাবিধ সমস্যা ও প্রতিরোধের উপায়

ডা. ইসমাইল আজহারি: এলার্জি হচ্ছে ইমিউন সিস্টেমের একটা দীর্ঘমেয়াদি / স্থায়ী অবস্থা যা পরিবেশের কোনো এলার্জেনের কারণে শরীরে হাইপারসেনসিটিভিটি দেখায় কিংবা অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া দেখায়।

এলার্জেনঃ 

যদি কোনো বস্তু বা উপাদান কোনো মানুষের শরীরে হাইপারসেনসিটিভ রিয়েক্ট দেখায় সেসব বস্ত  বা উপাদন সমূহ সেসব মানুষের জন্য এলার্জেন।

এলার্জিক রিয়েকশনঃ

কোন অ্যালার্জেন শরীরের সংস্পর্শে এলে শরীরে যেসব অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায় তাকে এলার্জিক রিয়েকশন বলে।আবার এটাকে হাইপেরসেন্সিটিভিটি রিয়েকশনও বলা হয়।হাইপারসেনসিটিভিটি রিয়েকশন কে চার ভাগে ভাগ করা যায়, তবে চার প্রকারের মধ্যে টাইপ-১ হাইপারসেনসিটিভিটি নিয়ে এখানে আলোচনা করবো।
 কোন অ্যালার্জেন দ্বারা শরীরের যেসব হাইপারসেনসিটিভিটি রিয়েকশন দেখা দেয় তাকে টাইপ ওয়ান হাইপারসেনসিটিভিটি রিএকশন বলা হয়।

এলার্জি হিসেবে স্বাভাবিকভাবে আমরা যা বুঝে থাকি তা মূলত টাইপ ওয়ান হাইপারসেনসিটিভিটি রিয়েকশনকে বোঝায়।

কমন এলার্জিক রিয়েকশন সমূহঃ

এলার্জিক রাইনাইটিসঃ

অনেক সময় দেখা যায় যে বৃষ্টির পানিতে ভিজলে কিংবা পুকুরে গোসল করলে কিংবা কোন ধুলাবালিতে গেলে কিংবা একটু ঠান্ডা লাগলে অথবা কোন ঠান্ডা পানীয় পান করলে কারো কারো  সর্দি কাশি শুরু হয়ে যায় আবার এই সেম কাজগুলো অন্যরা করলে তাদের কিছুই হয় না। তাহলে বুঝা গেল বৃষ্টির পানি কিংবা ধুলাবালি কিংবা পুকুরের পানি কিংবা ঠান্ডা জলীয় বস্তু কারো কারো জন্য অ্যালার্জেন হিসেবে কাজ করে আর কারো কারো জন্য এটা স্বাভাবিক  হিসেবে থাকে। এই স্বাভাবিক বস্তুগুলো যাদের জন্য অ্যালার্জেন হিসেবে কাজ করে তাদের সর্দি কাশি শুরু হয়ে যায়া তাকে এলার্জিক রাইনাইটিস বলা হয়। এলার্জিক রাইনাইটিস হলে সাধারণত শ্বাসযন্ত্রের মিউকাস মেমব্রেন সমূহ আক্রান্ত হয় এবং হিস্টামিনের প্রভাবে সেখান থেকে প্রচুর পরিমাণ মিউকাস তৈরি হয় এবং শ্বাসযন্ত্রে লুউকোট্রিন নামক এক প্রকার পদার্থ তৈরি হয় যা কাশি তৈরিতে শ্বাসযন্ত্র কে উত্তেজিত করে। তাহলে আমরা বুঝতে পারলাম,  নাক দিয়ে পানি পড়া তথা সর্দি কাশি,  সাথে হালকা হালকা গায়ে গায়ে জ্বর থাকা এসবকিছু অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের কারণে হয়ে থাকতে পারে। অনেক সময় রাইনো ভাইরাস এলার্জি হিসেবে কাজ করে।

এলার্জিক কনজাংটিভাইটিস বা চোখের এলার্জিঃ 

এলার্জিক কনজাংটিভাইটিস মূলত চোখের একটি এলার্জি জনিত রোগ। এখানে চোখ লাল হয়ে থাকে। চোখ থেকে পানি পড়ে, ব্যথা করে। 6 থেকে 12 বছরের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটা বেশি দেখা দেয়। যাদের শরীর কোন নির্দিষ্ট অ্যালার্জেনের প্রতি অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখায় তাদের অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের মত এলার্জিক কনজাংটিভাইটিস হতে পারে।
কিছু কিছু বাচ্চাদের দেখা যায় তারা পুকুরে গোসল করলে কিংবা খেলাধুলা করলে কিংবা বাহিরে চলাফেরা করলে তাদের চোখ লাল হয়ে যায় চোখ থেকে পানি পড়ে এবং ব্যথা করে চোখ চুলকায় এগুলো মূলত এলার্জিক কনজাংটিভাইটিস এর কারণে হয়ে থাকে।

ফুড অ্যালার্জিঃ

অনেক মানুষ আবার এমন রয়েছেন যে তারা গোশত  কিংবা বেগুন কিংবা বাইরে রেস্টুরেন্টে খাবার খাওয়ার পর তাদের শরীরে চুলকানি শুরু হয়ে যায়। বমি বমি ভাব হয়। এগুলো মূলত এলার্জির কারণে হয়ে থাকে।  তাদের শরীর ওই সমস্ত খাবারের জন্য উপযোগী না এবং ঐ সমস্ত খাবার গুলো যদিও অন্যদের জন্য স্বাভাবিক তবে তাদের জন্য অ্যালার্জেন হিসেবে কাজ করে। তাই তারা যখন ওই খাবারগুলো খায় যেমন গোশত খাবার পরে তার সারা শরীর চুলকাতে চুলকাতে লাল হয়ে গেছে তাহলে গোশত তার জন্য অ্যালার্জেন।

ড্রাগ এলার্জিঃ

কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, তারা কোন এন্টিবায়োটিক গ্রহণ করার পরে তাদের শরীর চুলকাতে চুলকাতে লাল হয়ে যায়। তাহলে বুঝে নিতে হবে ওই এন্টিবায়োটিকের প্রতি তার  হাইপারসেনসিটিভিটি রয়েছে এবং ওই এন্টিবায়োটিক তার জন্য অ্যালার্জেন হিসেবে কাজ করছে। যদি কারো এমন হয়ে থাকে তাহলে সে ওই এন্টিবায়োটিক পরিবর্তন করে অন্য এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হবে। কোন মেডিসিন ব্যবহারের ফলে যদি কোন হাইপেরসেন্সিটিভিটি রিয়েকশন শুরু হয় তবে সে প্রকার এলার্জিকে ড্রাগ এলার্জি বলা হয়ে থাকে।

এনাফাইলেক্টিক রিএকশনঃ

এনাফাইলেকটিক রিএকশন হচ্ছে এক প্রকার ইমারজেন্সি এলার্জিক কন্ডিশন। মনে করুন কারো শরীরে একটি কীটপতঙ্গের সংস্পর্শ লেগেছে অথবা কোন ছোট মশা কিংবা অন্যান্য কীটপতঙ্গ তাকে কামড় দিয়েছে এর কিছুক্ষণ পরে দেখা গেল তার শরীররে লাল লাল চাকা  হয়ে গেছে। শরীর প্রচন্ড চুলকায়। সারা শরীর ব্যথা করছে। এই অবস্থা গুলোকে এনাফাইলেক্ট্রিক রিঅ্যাকশন বলে। যাদের শরীর হাইপারসেনসিটিভ তাদের ক্ষেত্রে মশার কামড়ে কিংবা ছারপোকার কামড়ে এনাফাইলেকটিক রিঅ্যাকশন দেখা দিতে পারে।

এটপিক একজিমাঃ একপ্রকার এলার্জিক স্কিন কন্ডিশন। যা এলার্জিক রিয়েকশন এর কারণে হয়ে থাকে।

চিকিৎসাঃ

প্রথমে জেনে রাখা ভালো, এলার্জির স্থায়ী কোনো চিকিৎসা নাই কারণ এটার সম্পর্ক ইমিউনো সিস্টেমের সাথে।তাই যাদের যেসব বস্তু বা খাবারে এলার্জি রয়েছে তা পরিহার করে চলাই ভাল উপায়। আর অনিয়ন্ত্রিত চলাফেরার কারণে যাদের  এলার্জিক উপসর্গ সমূহ দেখা দেয় তারা  মেডিসিন দিয়ে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন।

মেডিকেশনঃ

এলার্জিতে যেহেতু হিস্টামিন প্রচুর রিলিজ হয়  তাই এলার্জি নিয়ন্ত্রণ রাখতে হলে হিস্টামিন নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে আর সে জন্য এলার্জিক কন্ডিশনে এন্টিহিস্টামিন হচ্ছে এলার্জির মূল চিকিৎসা। তবে অবশ্যই এলার্জির চিকিৎসায় চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যাতিত কোন চিকিৎসা নেয়া কিংবা অল্টারনেটিভ চিকিৎসা নেয়া বিপদজনক হতে পারে। যে কোন শারীরিক সমস্যায় নিকটস্থ চিকিৎসক কিংবা সরাসরি হাসপাতালে যোগাযোগ করুন।

লেখক: চিকিৎসক, ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল