নুসরাত নাঈম সাজিয়া, রাজশাহী কলেজ প্রতিনিধিঃ
রাজশাহী কলেজ হোস্টেলের অতিরিক্ত সিট ভাড়া কমানোর দাবিতে শিক্ষার্থীদের তোপের সম্মুখীন হয়েছেন কলেজ অধ্যক্ষ।
বুধবার (১৪ মে) বেলা ১১ টায় রাজশাহী কলেজ প্রশাসনিক ভবনের সামনে উত্তপ্ত শিক্ষার্থীরা রাজশাহী কলেজ হোস্টেলের অতিরিক্ত সিট ভাড়া কমানোর দাবিতে মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষ।
শিক্ষার্থীরদের দাবি,শিক্ষার্থীদের দাবি পূর্বে হোস্টেলের নির্ধারিত সিট ভাড়া ছিল ৫০০ টাকা।৫ আগস্টের পর কলেজ হোস্টেলের বিদ্যুৎ বিল সহ অন্যান্য বিভিন্না খাত দেখিয়ে সাময়িকভাবে ভাড়া বৃদ্ধি ৭০০ টাকা করা হয় এবং জানানো হয় সমস্যা মিটে গেলে ভাড়া কমানো হবে।
কিন্তু সময় পেরিয়ে গেলেও প্রশাসন প্রতিশ্রুতি মোতাবেক কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এর আগে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের কাছে এ বিষয়ে কথা বললেও তেমন কোনো হেলদোল দেখা যায়নি।অধ্যক্ষ এই অতিরিক্ত ভাড়া কমানোর বিষয়ে নিশ্চুপ হয়ে রয়েছেন। অনেক সময় শিক্ষার্থীদের সিট বাতিলের হুমকিও দেয়া হয়েছে।তাই বাধ্য হয়ে হোস্টেলের আবাসিক শিক্ষার্থীরাসহ কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা সকলে মিলে ভাড়া কমানোর দাবিতে মানববন্ধনে নামে।
তাদের অভিযোগ, ৫ আগষ্টের আগে ছাত্রলীগের সিট বাণিজ্যের আমলে হোস্টেলের বিদ্যুৎ বিলসহ নানা খাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টাকা বকেয়া পড়ে। বর্তমান সময়ে হোস্টেল প্রশাসন পূর্বের সেই বকেয়া পরিশোধের জন্য আবাসিক শিক্ষার্থীদের উপর এই অতিরিক্ত ভাড়া চাপিয়ে দিয়েছে।
শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আরো দাবি করা হয়, বর্তমানে হোস্টেলগুলোতে হোস্টেল প্রশাসন প্রিপেইড মিটার ব্যবস্থা চালু করে দিয়েছে। ফলে সিট ভাড়া, বিদ্যুৎ বিলসহ একজন শিক্ষার্থীকে প্রতিমাসে এক হাজার টাকার উপরে পরিশোধ করতে হয়।
এসময় শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ঢাকা কলেজে যেখানে সর্বোচ্চ খরচ হলেও ভাড়া নেওয়া হয় ৪০০ টাকা সেখানে দেশসেরা রাজশাহী কলেজে এমন অতিরিক্ত ভাড়া আদায় শিক্ষার্থীদের জন্য বাড়তি চাপ। শিক্ষার্থীরা আরো দাবি করেন, একটি সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে এমন অতিরিক্ত ভাড়া সিট ভাড়া অন্য আর কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আদায় করা হয় না। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আগামী ২২ তারিখ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় বেঁধে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে রাজশাহী কলেজ শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক খালিদ বিন ওয়ালিদ আবির বলেন,৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে যখন আমরা মুসলিম হোস্টেল সুন্দর করে সাজানোর জন্য সহযোগিতা করেছিলাম তখন প্রশাসন বলেছিল হোস্টেলের বিদ্যুৎ বিল বাকি আছে এবং বিভিন্ন আনুষাঙ্গিক খরচ দেখিয়ে তারা ভাড়া বৃদ্ধি করেছিল।তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছিল যে ১ বছর পরে এই ভাড়া কমানো হবে।তাহলে কেন ১ বছর পর আমাদের এই দাবি নিয়ে দাঁড়াতে হচ্ছে?কেন তারা আমাদের সাথে প্রতারণা করছে? তা আমরা কলেজ প্রশাসনের কাছে জানতে চাই।
তিনি কলেজ প্রশাসনের নিকট দাবি জানিয়েছেন যেন শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে কলেজ প্রশাসন যেন অতিদ্রুত একটি ন্যায্য সিট ভাড়া নির্ধারণ করে।
এছাড়া কলেজ শাখা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মোশাররফ হোসেন বলেন, এই অতিরিক্ত ভাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য অসহনীয় পর্যায়ে চলে গিয়েছে।তাই হোস্টেলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা সহ কলেজের সকল সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই ভাড়া কমানোর দাবি জানাতে আজকে মানববন্ধনে নেমেছি।কর্তৃপক্ষের কাছে একটাই দাবি যেন তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে সমর্থন জানিয়ে যেন দ্রুততার সাথে তা মেনে নেয়া হয়।রাজশাহী কলেজ মুসলিম ছাত্রাবাস সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবাসিক আশ্রয়,এটি ব্যবসার জায়গা নয় যো অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হবে।
তিনি প্রশাসনের কাছে এই বিষয়ে অতি দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানান।
উত্তপ্ত শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষ বলেন, তারা কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগামী ২২ তারিখ হোস্টেলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনায় বসবেন। শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে তারা পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত জানাবেন।
এখন দেখার বিষয় প্রশাসন কি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই দাবিতে? শিক্ষার্থীদের এই মানববন্ধনের পর কি প্রশাসন তাদের নায্য দাবি পূরণ করে অতিরিক্ত ভাড়া কমাবে এখন সেটিই দেখবার বিষয়।