আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্র ইরান-ইসরায়েল বিমানযুদ্ধে জড়াবে কি না, সে সিদ্ধান্ত আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে নেবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। এতে তেহরানের ওপর আলোচনায় আসার জন্য চাপ আরও বাড়লো।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট সাংবাদিকদের বলেন, 'ইরানের সঙ্গে শিগগিরই আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে কিংবা নাও হতে পারে। এই পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেব, যুক্তরাষ্ট্র এ সংঘাতে অংশ নেবে কি না।'
ডেমোক্র্যাট সিনেটর ক্রিস মারফি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম এক্সে এক পোস্টে বলেন, 'আমি মনে করি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ করা খুবই বাজে সিদ্ধান্ত হবে। কিন্তু কেউই "দুই সপ্তাহ" বিষয়টা বিশ্বাস করে না।
তিনি আরও বলেন, 'তিনি (ট্রাম্প) এর আগেও অসংখ্যবার এমন সময়সীমার কথা বলে এমন কিছু করার ভান করেছেন, যা তিনি আসলে করেননি। এতে যুক্তরাষ্ট্রকে দুর্বল ও হাস্যকর মনে হয়।'
হোয়াইট হাউসের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট বলেন, ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সমাধান খুঁজতে আগ্রহী, তবে তার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হলো ইরানকে কোনোভাবেই পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে না দেওয়া।
তিনি বলেন, যেকোনো চুক্তির শর্তে থাকতে হবে তেহরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ নিষিদ্ধ এবং ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের সক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত করা
লেভিট আরও বলেন, 'প্রেসিডেন্ট সবসময় কূটনৈতিক সমাধানে আগ্রহী… যদি কূটনীতির সুযোগ থাকে, প্রেসিডেন্ট তা কাজে লাগাবেনই। তবে আমি যোগ করে বলি, তিনি শক্তি প্রদর্শনে ভয় পান না।'
কংগ্রেসকে কি এড়িয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প?
ইরানে হামলা চালাতে ট্রাম্প কংগ্রেসের অনুমোদন চাইবেন কি না, সে বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট। তবে সিবিএসসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ট্রাম্প ইতোমধ্যে কংগ্রেসকে এড়িয়ে ইরানে হামলার একটি পরিকল্পনায় অনুমোদন দিয়েছেন—এ নিয়ে ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। কারণ, যুদ্ধ ঘোষণা করার একমাত্র সাংবিধানিক ক্ষমতা কংগ্রেসেরই রয়েছে।
লেভিট জানান, মার্কিন কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন—ইরান কখনও এতটা পারমাণবিক অস্ত্রের কাছাকাছি ছিল না, যতটা এখন রয়েছে। তার ভাষায়, তেহরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে এখন 'মাত্র কয়েক সপ্তাহ' সময় লাগবে।
তবে লেভিটের এই মন্তব্য ট্রাম্প প্রশাসনের গোয়েন্দা প্রধান তুলসি গ্যাবার্ডের মার্চ মাসে কংগ্রেসে দেওয়া বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সে সময় তিনি বলেছিলেন, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মূল্যায়ন অনুযায়ী, তেহরান বর্তমানে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কোনো কার্যক্রমে লিপ্ত নয়।
এই সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তুলসি গ্যাবার্ডের মার্চ মাসের বক্তব্যকে উড়িয়ে দিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, 'ও কী বলেছে, তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমি মনে করি, তারা (ইরান) খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।'
বুধবার ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিভ ব্যানন ইসরায়েলের পাশে থেকে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংসে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানান।
গতকাল বৃহস্পতিবার ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়, এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় তেহরান ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছোড়ে। এর আগে রাতে একটি ইসরায়েলি হাসপাতালে হামলা চালায় ইরান। সপ্তাহব্যাপী এই বিমানযুদ্ধ আরও তীব্র হয়ে উঠেছে এবং দুই পক্ষের কেউই পিছু হটার কোনো ইঙ্গিত দিচ্ছে না।
লেভিট জানান, বৃহস্পতিবারের ইসরায়েলি অভিযানের বিষয়ে ট্রাম্পকে ব্রিফ করা হয়েছে, এবং তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগে রয়েছেন। তার ভাষায়, 'ইরান এখন এক গভীরভাবে দুর্বল অবস্থানে রয়েছে। তারা যদি পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করতে রাজি না হয়, তবে তাদের গুরুতর পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে।'
ইরান তার ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা সংকটের মুখোমুখি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রয়টার্সকে তিনজন কূটনীতিক জানিয়েছেন, ইসরায়েল গত সপ্তাহে হামলা শুরু করার পর থেকে ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি একাধিকবার ফোনে কথা বলেছেন।
এটি ইঙ্গিত দেয়, উত্তেজনা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পর্দার আড়ালে কিছু যোগাযোগ চলছে।