শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ সংশোধন, সাজা কমিয়ে বাধ্যতামূলক অবসরের বিধান

বৃহস্পতিবার, জুলাই ৩, ২০২৫
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ সংশোধন, সাজা কমিয়ে বাধ্যতামূলক অবসরের বিধান

নিজস্ব প্রতিবেদক:

'সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫' অধিকতর সংশোধন করে কর্মচারীদের অসদাচরণের সর্বোচ্চ শাস্তি 'চাকরিচ্যুতি বা বরখাস্ত' না রেখে 'বাধ্যতামূলক অবসর' করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পাশাপাশি শাস্তিপ্রাপ্ত কর্মচারীর জন্য আপিলের সুযোগ রাখার সিদ্ধান্তও নিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।

আজ (৩ জুলাই) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয় বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

এর আগে, সরকারি চাকরি আইন ২০১৮-তে সংযোজিত ৩৭(ক) ধারা অনুযায়ী গত ২৫ মে যে সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ জারি করা হয়, তাতে অসদাচরণ প্রমাণিত হলে কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত বা বরখাস্ত করার বিধান রাখা হয়েছিল। এতে কোনো বিভাগীয় মামলার দরকার হতো না এবং অভিযুক্তকে শুধু নোটিশ দিয়ে তার জবাবের ভিত্তিতে শাস্তি দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছিল। আপিলের সুযোগও ছিল না।

এই বিধানকে কেন্দ্র করে সচিবালয়সহ সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয়। তারা আন্দোলনে নামেন, বিক্ষোভ, কর্মবিরতি ও স্মারকলিপি প্রদানসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন।

পরে কর্মচারীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অধ্যাদেশটি পর্যালোচনায় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কমিটির অন্য সদস্য ছিলেন জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ। তাদের সহায়তায় ভূমি, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং পরিসংখ্যান বিভাগের সচিবদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কমিটি গত ১৬ জুন প্রথম সভা করে।

এই কমিটি পূর্বের কিছু বিতর্কিত ধারা বাতিল করে ও নতুন কিছু বিষয় সংযোজন করে সংশোধনের সুপারিশ করে। ৩ জুলাই উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সেই সুপারিশ গ্রহণ করে সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এখন রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর নতুনভাবে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। এটি আগামী সপ্তাহে প্রকাশ হতে পারে।

সংশোধিত অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, অসদাচরণ প্রমাণিত হলে কর্মীর চাকরির বয়স নির্বিশেষে তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হবে এবং তার চাকরি জীবনের মেয়াদ অনুযায়ী সরকার নির্ধারিত আর্থিক সুবিধা পাবেন। কাউকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাতে হলে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) মতামত নেওয়া বাধ্যতামূলক হবে।

তদন্ত কমিটির কাঠামোতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগে একজন কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার কথা থাকলেও এখন একজন নারী কর্মকর্তাসহ তিন সদস্যের কমিটি তদন্ত করবে।

অধ্যাদেশে অসদাচরণ হিসেবে অনানুগত্য, কাজে অনুপস্থিতি বা ব্যর্থতা, অন্যকে উসকানি দেওয়া বা কর্তব্য পালনে বাধা দেওয়ার বিষয় উল্লেখ থাকলেও এসবের ব্যাখ্যা ছিল না। সংশোধিত অধ্যাদেশে এসব বিষয়ের বিস্তারিত ও নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা যুক্ত করা হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, কোন কাজ অনানুগত্যের আওতায় পড়বে, তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। ফলে কেউ ইচ্ছেমতো অনানুগত্যের অভিযোগ তুলে ব্যবস্থা নিতে পারবে না।

তবে যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকছে। যদিও ব্যক্তিগত জরুরি কাজে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে অনুপস্থিত থাকলে সরাসরি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না—এ ধরনের ব্যাখ্যা নতুন করে যুক্ত করা হবে।

এ বিষয়ে জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, 'চাকরিচ্যুতি করার বিধান বাতিল করে বাধ্যতামূলক অবসরের বিধান রাখা হয়েছে। আপিলের সুযোগও রাখা হয়েছে। সচিবালয়ের কর্মচারীদের আপত্তি দূর করতেই এ সংশোধন আনা হচ্ছে।'

বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মচারী ঐক্য পরিষদের একাংশের সভাপতি বাদিউল কবির বলেন, 'আমরা জেনেছি উপদেষ্টা পরিষদ অধিকতর সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমাদের দেওয়া প্রস্তাব অনুযায়ী সংশোধন হলে আপত্তি থাকবে না। বরখাস্তের বিধান বাদ দিলে সেটি সকল কর্মচারীর জন্যই ভালো হবে।'

এমআই


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল