মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন:
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী নিশাত তাসনিম, ইন্টারমিডিয়েট শেষে বিয়ে হয় তার। অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত অবস্থায় পারিবারিক চাপে সন্তান ধারণ করতে হয় তাকে। এতে ক্লাস-পরীক্ষায় অনিয়মিত হয়ে পড়েন তিনি। ফলে এক পর্যায়ে মানসিক চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। একই সমস্যা বিশ্ববিদ্যালয়টির কয়েক'শ মেয়ে শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রেও ঘটেছে।
হাবিপ্রবিতে বেশিরভাগ মেয়ে শিক্ষার্থী গ্রামের নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসেন। তাদের প্রায় দুই-পঞ্চমাংশের অনার্স প্রথম বা দ্বিতীয় বর্ষে কিংবা ইন্টারমেডিয়েট পড়ার সময়ই বিয়ে হয়ে যায়। পারিবারিক কারণে আবার দ্রুত সন্তানও নিতে হয় তাদের। এতে পড়াশোনায় ঘাটতি তৈরি হয়। পিছিয়ে পড়ে যান অনেকেই।
ক্লাস, পরীক্ষা ও উপস্থিতি নীতিমালার কারণে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে অনেকে সেমিস্টার ড্রপ দিতে বাধ্য হন, আবার কেউ কেউ মানসিক ও শারীরিক চাপে শিক্ষাজীবন থেকে পিছিয়ে পড়েন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, 'আমি যখন মাতৃত্বকালীন সময় পার করেছি, তখন আমার পড়াশোনায় ব্যাপক ঘাটতি তৈরি হয়েছিল। যা এখনো রিকভার করতে পারিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়টির একাধিক মেয়ে শিক্ষার্থী বলেন, 'মাতৃত্ব কোনো অপরাধ নয়, এটি একটি জীবনের স্বাভাবিক অধ্যায়। অথচ সেই সময়টিতে আমরা একাডেমিক সহানুভূতি থেকে বঞ্চিত হই। মাতৃত্বকালীন ছুটি ও অন্যান্য স্বাস্থ্যগত কারণে ছাত্রীরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে লক্ষ্যে পরীক্ষার সময় নির্ধারণে নমনীয় ও মানবিক নীতি গ্রহণ করা উচিত'।
হাবিপ্রবি মেডিকেল সেন্টারের মেডিকেল অফিসারেরা বলেন, মেয়েদের এই সময়টিতে বিশ্রামের দরকার হয়। কিছু কিছু সময় চলাফেরা, পরিশ্রম বন্ধ রাখতেও হয়। সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর নিজেকে ভাবতে হবে।
এ বিষয়ে ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের সহকারী পরিচালক প্রফেসর ড. মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, 'এটা শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত বিষয়। এ ধরণের সমস্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম-নীতি নেই, কেন্দ্রীয়ভাবে নমনীয় শিক্ষা কার্যক্রমেরও কোনো সুযোগ নেই।'
মাতৃত্বকালীন সময়ে অন্তত এটেন্ডেন্সের ১০-১৫ মার্ক এবং কুইজ, মিড, প্রেজেন্টেশন, রিপোর্ট রাইটিং এ যেন অন্তঃসত্ত্বা শিক্ষার্থীর বিষয় বিবেচনা করা হয় সে দাবিও জানান বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা।