মো. মিরাজুল ইসলাম, খুবি প্রতিনিধি:
খুলনায় একটি মেলাকে কেন্দ্র করে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও মহানগরের ছাত্র প্রতিনিধি পরিচয়ধারী জহুরুল ইসলাম তানভীর এবং সাজ্জাদুল ইসলাম আজাদের বিরুদ্ধে। রোববার (৬ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই অভিযোগসংবলিত একটি অডিও রেকর্ড ছড়িয়ে পড়ে।
মেলার আয়োজক বগুড়ার মন্টু ইভেন ম্যানেজমেন্টের সত্ত্বাধিকারী মন্টুর কাছে চাঁদা দাবি করে ১ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডের একটি কল রেকর্ড রাতেই ফাঁস হয়।
জানা যায়, জহুরুল ইসলাম তানভীর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিনের অনার্সের শিক্ষার্থী এবং সাজ্জাদুল ইসলাম আজাদ গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। তাঁরা যথাক্রমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, খুলনা মহানগরীর সদস্য সচিব ও মুখ্য সংগঠক। গত বছরের ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে তাঁদের খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও মহানগরের আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাসহ বিভিন্ন সরকারি কর্মসূচিতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। এছাড়া, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নানা কর্মসূচিতেও তাঁরা সক্রিয় অংশ নিয়েছেন।
ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডে সাজ্জাদুল ইসলাম আজাদকে মেলার আয়োজকের কাছে ১০ টাকা দাবি করতে শোনা যায়। নেটিজেনদের ধারণা, ১০ টাকা বলে তিনি ১০ লাখ টাকাই বুঝিয়েছেন।
কল রেকর্ডে আয়োজক মন্টুকে বলতে শোনা যায়, “আমার দ্বারা সবাইকে কি ঠান্ডা করা সম্ভব? আমার কাছে 'দুই টাকা' (দুই লাখ) রেডি আছে, আপনি বললে এখনই দিয়ে যাবো।” জবাবে আজাদ বলেন, “আমি পারবো সবাইকে ঠান্ডা করতে, এ টু জেড, সবাই ঠান্ডা থাকবে, কেউ ওইদিকে ঘুরেও তাকাবে না—যদি ১০ টাকা দেন (১০ লাখ)। আর যদি না দেন, তাহলে আজ এ গ্রুপ যাবে, কাল অন্য গ্রুপ যাবে আপনি কয়জনকে ঠান্ডা করবেন?”
এ সময় মন্টু বলেন, “আমার দ্বারা তো সবাইকে ঠান্ডা করা সম্ভব না।” জবাবে আজাদ বলেন, “আপনার পুলিশ কমিশনারও ঠান্ডা করতে পারবে না, বলে দিয়েন তারে।” পরে মন্টু বলেন, “আপনাদের ছোট ভাইয়েরা এসে তানভীর ভাইয়ের কথা বলছে।” জবাবে আজাদ বলেন, “মেলা ভাঙতে তো আমরা কাউকে পাঠাইনি তাহলে ওদেরই দিয়ে দেন।” মন্টু বলেন, “দুই টাকা দিবার চাচ্ছি, আজকেই আসতেছি ভাই। আর প্রতি গ্রুপে তো দিতে পারবো না ভাই। আপনারা বড় ভাই হয়ে যদি কন্ট্রোল করতে না পারেন!”
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকাকালীন চাঁদাবাজির সাথে সম্পৃক্ততার এমন অভিযোগে শিক্ষার্থীদের মাঝে দেখা দিয়েছে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া। এ প্রসঙ্গে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইশরিয়াক কবির বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়কে অরাজনৈতিক ঘোষণার পরও কিছু তথাকথিত ‘সমন্বয়ক’ নিজেদের পরিচয় ব্যবহার করে চাঁদাবাজি ও নানা অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। ৫ আগস্টের পর দেখা যায়, তাদের জীবনযাত্রায় হঠাৎ পরিবর্তন এসেছে, তাঁরা দামি বাইকে চলাফেরা করছেন। ছাত্রলীগের প্রচারক আজাদ এখন নিজেকে ‘জুলাই আন্দোলনের কান্ডারি’ দাবি করলেও তাঁর ভূমিকা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অপরাধীদের বাঁচাতে তাঁর সক্রিয়তা প্রশ্নবিদ্ধ। এদের প্রধান হাতিয়ার হয়ে উঠেছে ‘জুলাই চেতনা’। ভাইরাল হওয়া অডিওতে তাদের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে। তারা শুরু থেকেই 'জুলাই চেতনা' বিক্রি করে পুরো জাতির সঙ্গে গাদ্দারি করে আসছে। এদের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্টু বলেন, “ফাঁস হওয়া রেকর্ডিংয়ে আমার কন্ঠই শোনা যাচ্ছে। এটি আমার এবং সাজ্জাদের কল রেকর্ডিং। রেকর্ডিংয়ে যা শুনেছেন, সব সত্য। আমি এটা নিশ্চিত করছি। তাঁরা চান্দা দাবি করছিলো এবং চান্দা নিছেও আমার থেকে।”
এ বিষয়ে জানতে চাওয়ার জন্য সাজ্জাদুল ইসলাম আজাদকে একাধিকবার কল দিয়ে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে জহুরুল তানভীর বলেন, এটা অনেক আগের বিষয়। এ বিষয়ে আমাদের সম্পৃক্ততা আছে কীনা সেটা তদন্তের মাধ্যমে জানা যাবে। কেন্দ্রীয় ভাবে এর তদন্ত চলছে তার পর জানা যাবে। বর্তমানে পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগের বিষয়ে কথা উঠছে যা অন্যদিকে নেওয়ার জন্যও হতে পারে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. ইনামুল হাসান বলেন, “নবপর্যায়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি আর্থিক স্বচ্ছতা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করে কোনো অপকর্ম আর সহ্য করা হবে না। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আমরা সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেব এবং প্রশাসনকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাব। গণঅভ্যুত্থানের প্ল্যাটফর্মের পবিত্রতা রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. নাজমুস সাদাত বলেন, "আমি ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ক্যাম্পাসের বাইরে আছি, বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে এ বিষয়ে খোঁজ নিব।”
একে