নিজস্ব প্রতিবেদক:
দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও উপকূলীয় জেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলা টানা ভারী বর্ষণে জনজীবন চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফেনী, কক্সবাজার, নোয়াখালী, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও বান্দরবানসহ একাধিক জেলায় সড়ক, বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে গেছে। কোথাও নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে, আবার কোথাও খাল-বিল উপচে শহরের ভেতরেই সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা।
ফেনীতে ২৪ ঘণ্টায় ৪০৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা এ মৌসুমে সর্বোচ্চ। ফলে মুহুরী নদীর পানি ঢুকে পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভেঙে গেছে বাঁধ, ডুবে গেছে রাস্তা ও ধানক্ষেত। শহরের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, স্থগিত করা হয়েছে অন্তর্বর্তী পরীক্ষা।
চট্টগ্রাম শহরের আগ্রাবাদ, হালিশহর ও পোর্ট কানেক্টিং রোড এলাকার বাসাবাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। বরিশালের রুপাতলী, চকবাজার, কাউনিয়া, নথুল্লাবাদ, কাশিপুর ও বটতলায় নালার পানি সড়কে উঠে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করেছে। বরিশাল সরকারি কলেজ, বিএম স্কুল এবং হাসপাতাল চত্বরও পানির নিচে। স্থানীয়রা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে ড্রেনেজ ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনার কারণে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
কক্সবাজারের শহর ও আশপাশের গ্রামে জলাবদ্ধতা চরমে উঠেছে। বাসস্ট্যান্ড, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও আদালত চত্বর পানিতে ডুবে গেছে। রামু ও মহেশখালীতে পাহাড়ধসের আশঙ্কায় শতাধিক পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়েছে প্রশাসন।
নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, বান্দরবান ও অন্যান্য জেলাতেও সড়ক উপচে পানি ঢুকে গ্রামীণ যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। চরাঞ্চল ও নিচু এলাকায় জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে বহু ঘরবাড়ি।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ আরও অন্তত ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকবে। এতে পাহাড়ি ঢল ও জোয়ারের পানি মিলে উপকূলীয় জেলাগুলোতে আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। জেলা প্রশাসন বরিশালসহ অন্তত ৭০টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দিয়েছে এবং খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ শুরু হয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপ্রতুল ও অব্যবস্থাপিত জলাধার, খাল-নালা এবং দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে প্রাকৃতিক এই দুর্যোগ আরও প্রকট হয়ে উঠছে।
একে