খালেদ হোসেন টাপু ,রামু প্রতিনিধি:
বাড়ির সামনে অথৈ পানি। পরিবারের সদস্যরা তাই বাধ্য হয়ে চলাচল করছে কলা গাছের ভেলায় চড়ে। আর কেউ বাড়িতে যাচ্ছেন পানির উপর গাছের গুড়ি বেঁধে। কোন কোন বাড়ির নিচতলা ডুবে যাওয়ায় পরিবারের সদস্যদের ঠাঁই হয়েছে বাড়ির দোতলায়। ডুবে গেছে গ্রামের সড়ক আর অলিগলি। বর্ষাজুড়ে এভাবে বৃষ্টির পানিতে ডুবে আছে রামু উপজেলা প্রশাসনের পাশর্^বর্তী উত্তর শ্রীকুল ও দক্ষিণ শ্রীকুল গ্রাম। পানিতে একাকার হয়ে গেছে এখানকার কবরস্থান ও শ্মশান। ২টি বৌদ্ধ বিহারসহ এসব গ্রামের ২ শতাধিক পরিবারকে চরম জলাবদ্ধতায় পোহাতে হচ্ছে অবর্ণনীয় দূর্ভোগ।
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন- চৌমুহনী বৌদ্ধ মন্দির সড়কে একটি সেতুর দুইপাশে পানি চলাচলের নালা দখল করে গড়ে তুলেছেন অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা। কেবল অবৈধ স্থাপনা নয়, স্থানীয়রা প্রতিনিয়ত সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় ব্যাহত হচ্ছে পানি চলাচল। এ কারণে উত্তর শ্রীকুল ও দক্ষিণ শ্রীকুল গ্রামে বর্ষা মৌসুমে কয়েকবছর ধরে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জুবাইর ভূট্টো, মো. ইউনুচ সিকদার, মৌলানা আবু বক্কর জানিয়েছেন- চলতি বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি হলেই এ দুটি গ্রামের চলাচলের সড়ক ও ২ শতাধিক বসত বাড়ি পানিতে একাকার হয়ে যায়। পানিতে একাকার হওয়ায় অনেক বাড়িতে রান্নাবান্না করা সম্ভব হচ্ছে না। অনেক বাড়িতে উঠোনে কোমর ও হাটু পরিমান পানি জমে থাকায় বাড়িতে আসা যাওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। তাই বাধ্য হয়ে অনেক কলা গাছের ভেলায় চড়ে বাড়িতে যাতায়াত করছেন। জমে থাকা পানি আর ময়লা আবর্জনা একাকার হওয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে রোগব্যাধি। অনেক পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।
জলাবদ্ধতার শিকার গ্রামবাসীর অভিযোগ- প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন জনদূর্ভোগ সৃষ্টি হলেও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন তৎপরতা নেই। এ কারণে বাড়ছে ভূক্তভোগী পরিবারগুলোর উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। কবে নিরসন হবে এ জলাবদ্ধতা, কারা দখলমুক্ত করে সংস্কার করবে পানি চলাচলের একমাত্র নালা। এ প্রশ্ন এখন গ্রামবাসীর মুখে।
এদিকে কারা নালা দখল করেছেন আর কিভাবে কাজ করলে জলাবদ্ধতা নিরসন হবে তা যাচাই করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ^াস দিয়েছেন রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রাশেদুল ইসলাম। তিনি আরও জানিয়েছেন- বিষয়টি সমাধানের জন্য উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) কে নির্দেশ দিয়েছেন। সহসা তিনি (এসিল্যান্ড) ওই এলাকায় যাবেন।
ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন জানিয়েছেন, নালা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ এবং ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে বৃষ্টি পানি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে উত্তর শ্রীকুল ও দক্ষিণ শ্রীকুল বাসি চলতি বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে পানি চলাচলের নালা দখল ও ময়লা-আবর্জনামুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে স্কেভেটর দিয়ে ময়লা-আবর্জনা সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। পরবর্তীতে প্রশাসনের সহায়তা নালা অবৈধ দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হবে। এ জন্য তিনি এলাকাবাসীর সহযোগিতা কামনা করেছেন।
একে