শিমুল আলী, লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি:
নাটোরের লালপুরে মোল্লাপাড়া চরে শীর্ষ সন্ত্রাসী কাকন বাহিনীর ডেরায় দিনব্যাপী অভিযান চালিয়ে অস্ত্র, মাদক, নগদ টাকা, মানুষের মাথার খুলি, ও ঘুষ বণ্টনের গোপন তালিকা সহ ২ জনকে আটক করেছে সেনাবাহিনী।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) ভোর পাঁচটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সেনাবাহিনীর নাটোর ও পাবনা ক্যাম্পের যৌথ অভিযানে লালপুর উপজেলার মোল্লাপাড়া পদ্মার চর এলাকার সন্ত্রাসী সংগঠন কাকন গ্রুপ এর প্রধান কাকন এর ভায়রা আশরাফুল ইসলাম বাপ্পি (২৮), মেহফুজ হক সোহাগ (৩৯) কে আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে নগদ ১২ লক্ষ ৫৬ হাজার ৩১২টাকা, ১টি পাকিস্তানি রিভলভার, ১টি ভারতীয় পিস্তল, ১টি ডাবল ব্যারেল শাটার গান, ৩৯ রাউন্ড ৭.৬৫ মিমি বল অ্যামো, ৯ রাউন্ড (২২ মিমি) বল অ্যামো,১টি ৭.৬৫ মিমি এফসিসি, ১টি ১২ মিমি গেজ শট শেল এফসিসি, ৮৬টি ইয়াবা,১৭টি দেশীয় রামদা, ১টি ফোল্ডিং সুইস নাইফ, ৫ বোতল ফেন্সিডিল, ২টি গাঁজার গাছ, ৬ গ্রাম গাঁজা, মাদক সেবনের উপকরণ, ৪টি অ্যান্ড্রয়েড ফোন, ৫টি বাটন ফোন, ১টি সেচ পাম্প, ১টি জেনারেটর, ১টি ক্রেডিট কার্ড, ১টি ড্রাইভিং লাইসেন্স, ১টি এনআইডি কার্ড, ৩টি চেক বই, ১টি মানুষের খুলি, ৩টি ইঞ্জিনচালিত নৌকা জব্দ করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী কাকন গ্রুপের অত্যাচারে নিষ্পেশিত ছিল সাধারন জনগন। কৃষকদের মারধর করে ফসল কেড়ে নেওয়া, জেলেদের অস্ত্রের মুখে মাছ ছিনিয়ে নেয়া, প্রতিটি বালুবাহী নৌকা থেকে চাঁদাবাজি, চরে ত্রাস সৃষ্টি করা সহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগ রয়েছে এই কাকন গ্রুপের বিরুদ্ধে।
সূত্রে জানা যায়, বালু মহাল থেকে কাকন গ্রুপের আয়কৃত টাকা বিভিন্ন ব্যক্তির মধ্যে ভাগ করা হয়। অর্থ বণ্টনের তালিকায় উঠে এসেছে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম।
অভিযান কালে উদ্ধারকৃত ঘুষ বণ্টনের তথ্যে আরও উঠে আসে, নাটোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রতি মাসে দেওয়া হয় ১ লাখ টাকা, লালপুর সার্কেল অফিসে ৫০ হাজার, বাগাতিপাড়া থানার ওসি ২৫ হাজার, টহল পুলিশ প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা করে ঘুষ পায়। নৌপুলিশকে বালুভর্তি প্রতিটি ট্রলারের জন্য দিতে হয় ৩০০ টাকা। এছাড়া বিভিন্ন সাংবাদিকদের কাছেও অর্থ পৌঁছে দেওয়ার হয় বলে জানা যায়।
আইনশৃঙ্খলা সদস্যরা কাকন বাহিনীর কাছে ঘুষ নিয়েছে গ্রেপ্তারদের এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, ‘নামগুলো আমরা উড়িয়ে দিচ্ছিনা। নামগুলো কারা লিখছে এগুলো আমরা যাচাই-বাছাই করছি। কিছু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, কিছু সাংবাদিক, বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, সবগুলো লিস্ট আমাদের কাছে আসছে। বিভাগীয় তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মাথার খুলি উদ্ধারের বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, “ওখানেতো অভয়ারণ্য ছিল। দীর্ঘদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ওখানে যায়ওনি, যেতেও পারেনি। সেটাকে ওভারকাম করার জন্য মূলত আমরা ধাক্কা দিছি। এই অভিযানটা আরও চলবে। তখন বোঝা যাবে বিষয়টা কি দাঁড়ায়।
মূলত বালুমহালের আধিপত্য নিয়ে অপরাধ ও সন্ত্রাসের রাজত্ব তৈরি হয়েছিল বলে জানান, জেলার শীর্ষ ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
একে