মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫

‘সে উন্মাদ’: সিরিয়ায় হামলার পর নেতানিয়াহুকে নিয়ে উদ্বিগ্ন ট্রাম্পের দল

সোমবার, জুলাই ২১, ২০২৫
‘সে উন্মাদ’: সিরিয়ায় হামলার পর নেতানিয়াহুকে নিয়ে উদ্বিগ্ন ট্রাম্পের দল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

সিরিয়ার প্রেসিডেনশিয়াল প্যালেসের আকাশে যখন ধোঁয়া ও ধ্বংসস্তূপের ঘূর্ণি উঠছে, তখন হোয়াইট হাউসের ওয়েস্ট উইংয়ে একটি আলাপ জোরালো হয়ে উঠেছিল—বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আর নিয়ন্ত্রণে নেই।

হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা অ্যাক্সিওস-কে বলেন, 'বিবি (নেতানিয়াহুর ডাকনাম) একেবারে উন্মাদের মতো আচরণ করছেন। তিনি সবকিছুর ওপর বোমা ফেলছেন। এটি ট্রাম্প যা করতে চাইছেন, তা ব্যর্থ করে দিতে পারে।'

যুক্তরাষ্ট্রের আরেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, গাজার একটি গির্জায় ইসরায়েলের গোলাবর্ষণের ঘটনার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে ফোন করে ব্যাখ্যা চান। ওই কর্মকর্তা বলেন, 'প্রতিদিনই যেন নতুন কিছু ঘটে যাচ্ছে।'

তৃতীয় এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের ভেতরে নেতানিয়াহুকে নিয়ে সংশয় ক্রমেই বাড়ছে। অনেকের মতে, তিনি অতি দ্রুত যুদ্ধের পথ বেছে নিচ্ছেন এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে অস্থিরতা সৃষ্টি করছেন। ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন, 'নেতানিয়াহু অনেকটা এমন এক দুষ্টু বালকের মতো, যে কিছুতেই কথা শুনতে চায় না।'

নেতানিয়াহুর মুখপাত্র জিভ আগমন এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।

অ্যাক্সিওস-এর সঙ্গে আলাপে ছয়জন মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও সপ্তাহ শেষে হোয়াইট হাউসে নেতানিয়াহু ও তার আঞ্চলিক নীতির বিষয়ে উদ্বেগ আরও বেড়ে গেছে।

তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখনো পর্যন্ত প্রকাশ্যে নেতানিয়াহুর সমালোচনা করেননি। তিনি উপদেষ্টাদের মতো উদ্বিগ্ন কি না, তা এখনো পরিষ্কার নয়।

মঙ্গলবার, ইসরায়েল সিরিয়ার সুয়েইদা শহরের দিকে এগোতে থাকা সিরীয় সেনাবাহিনীর ট্যাংক বহরে বোমা ফেলে। ওই অঞ্চলে দ্রুজ মিলিশিয়া ও বেদুইনদের মধ্যে সংঘর্ষে শনিবার পর্যন্ত অন্তত ৭০০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস।

ইসরায়েল দাবি করেছে, ট্যাংক বহরটি দক্ষিণ সিরিয়ার এমন এক এলাকায় প্রবেশ করেছিল, যা তারা 'সামরিক কার্যক্রম বহির্ভূত' এলাকা হিসেবে চায়। তাদের অভিযোগ, সিরীয় সেনাবাহিনী দ্রুজ সংখ্যালঘুদের ওপর হামলায় অংশ নিচ্ছে—যা সিরিয়া অস্বীকার করেছে।

মার্কিন দূত টম ব্যারাক মঙ্গলবার ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের কূটনৈতিক সমাধানের জন্য সাময়িক বিরতি নিতে বলেন। এক মার্কিন কর্মকর্তা জানান, ইসরায়েল প্রথমে এতে সম্মতি দিয়েছিল।

কিন্তু বিরতির পর ইসরায়েল হামলা জোরদার করে। বুধবার সিরিয়ার সামরিক সদরদপ্তর ও প্রেসিডেনশিয়াল প্যালেসের আশপাশে বোমা ফেলা হয়।

এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, 'সিরিয়ায় এই বোমাবর্ষণ প্রেসিডেন্ট ও হোয়াইট হাউসকে চমকে দেয়। প্রেসিডেন্ট এমন কোনও দেশে বোমা পড়তে টেলিভিশনে দেখতে পছন্দ করেন না, যেখানে তিনি শান্তি ও পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।'

পররাষ্ট্র সচিব মার্কো রুবিও নেতানিয়াহুকে থামতে বলেন। নেতানিয়াহু এতে সম্মত হন, তবে শর্ত দেন—সিরীয় সেনাবাহিনীকে সুয়েইদা থেকে সরে যেতে হবে।

কিন্তু ততক্ষণে তুরস্ক, সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশ ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড নিয়ে তীব্র ক্ষোভ জানায়। পাশাপাশি, একাধিক মার্কিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সরাসরি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।

অভিযোগকারীদের মধ্যে ছিলেন টম ব্যারাক ও হোয়াইট হাউস দূত স্টিভ উইটকফ—যারা দুজনেই ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলে জানিয়েছেন এক মার্কিন কর্মকর্তা।

হোয়াইট হাউসের অভ্যন্তরীণ বিশ্লেষণে ধারণা করা হচ্ছে, ইসরায়েলের দ্রুজ সম্প্রদায়ের চাপ এবং ঘরোয়া রাজনৈতিক স্বার্থ থেকেই নেতানিয়াহু সিরিয়ায় হামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এক ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, 'বিবির রাজনৈতিক হিসাবই তাকে চালিত করছে। দীর্ঘমেয়াদে এটি তার জন্য বড় ভুল প্রমাণ হতে পারে।'

আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, 'গত সপ্তাহে ইসরায়েল যেভাবে হোয়াইট হাউসে নিজের অবস্থান দুর্বল করেছে, তাতে তাদেরই টনক নড়েনি। ইসরায়েলিদের উচিত, এবার একটু আত্মসমালোচনা করা।'

এই টানাপড়েন শুরু হয় নেতানিয়াহুর সাম্প্রতিক ওয়াশিংটন সফরের পর। তিনি সেখানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে দুইবার সাক্ষাৎ করেন। ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ-পরবর্তী আবহে উভয়ের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ বলেই মনে হচ্ছিল।

এমনকি গাজায় গির্জায় হামলা ও সিরিয়ায় বোমাবর্ষণের পাশাপাশি, গত সপ্তাহে ইসরায়েলি বসতির বাসিন্দাদের হাতে ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক সাইফ মুসাল্লেত নিহত হওয়ার ঘটনাও নেতানিয়াহুর সরকারকে আরও চাপে ফেলে।

মার্কিন রাজনীতিক মাইক হাকাবি—যিনি নেতানিয়াহুর দুর্নীতির মামলায় সাক্ষী হিসেবে আদালতে হাজির হয়েছিলেন—এই হত্যাকাণ্ডকে 'সন্ত্রাসবাদ' বলে আখ্যা দেন এবং ব্যাখ্যা দাবি করেন।

শনিবার, তিনি পশ্চিম তীরে একটি খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, যারা ইসরায়েলি বসতি-বাসীদের হামলার শিকার হয়েছেন।

ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের সমর্থক হাকাবি এবার খোলাখুলিভাবে ইসরায়েলি সরকারের সমালোচনা করেন—তিনি বলেন, আমেরিকান ইভানজেলিকদের জন্য ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়া কঠিন করে তোলা হয়েছে।

সিরিয়ায় হামলা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র প্রতিক্রিয়ায় বিস্মিত হয় ইসরায়েল।

এক ঊর্ধ্বতন ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে নেতানিয়াহুকে সিরিয়ার কিছু অংশ দখলে নিতে উৎসাহ দিয়েছিলেন এবং আগে কখনও এর বিরোধিতা করেননি।

তিনি জানান, ইসরায়েল শুধু তখনই হস্তক্ষেপ করেছে, যখন নিশ্চিত হয়েছে—সিরীয় সরকার দ্রুজদের ওপর হামলায় জড়িত।

তিনি ঘরোয়া রাজনৈতিক স্বার্থের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র চায়, নতুন সিরীয় সরকার স্থিতিশীল থাকুক। তারা বুঝতে পারছে না, আমরা কেন হামলা করছি। আমরা বোঝানোর চেষ্টা করেছি—ইসরায়েলে বসবাসরত দ্রুজ জনগোষ্ঠীর প্রতি আমাদের অঙ্গীকার রয়েছে।'

সিরিয়ায় চলমান অস্থিরতা ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য অন্যতম বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। শনিবার, পররাষ্ট্র সচিব রুবিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স -এ লিখেছেন, 'দামেস্ক সরকারকে শান্তি ফিরিয়ে আনতে এবং হত্যাযজ্ঞ বন্ধে উদ্যোগ নিতে হবে।'

তবে এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, সিরীয় জনগণের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত ইসরায়েল নিতে পারে না।

তিনি বলেন, 'ইসরায়েলের বর্তমান নীতি সিরিয়াকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলবে। এ অবস্থায় দ্রুজ সম্প্রদায় ও ইসরায়েল—দু'পক্ষই ক্ষতির মুখে পড়বে।'

নেতানিয়াহু ট্রাম্পের ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছেন, এমনটা এই প্রথম নয়। ইরানে হামলার বিষয়ে তার ঝুঁকিপূর্ণ বাজি সফল হয়েছিল।

গাজায় দীর্ঘমেয়াদি অভিযানের ক্ষেত্রেও তিনি ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির আহ্বান উপেক্ষা করে এগিয়ে গেছেন।

এবার সিরিয়াতেও নেতানিয়াহু মনে করছেন—তিনি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট না করেই হামলা চালাতে পারবেন এবং ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্কও ঠিক থাকবে।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা বুঝতে পারছেন, নেতানিয়াহুর জোটে থাকা কট্টরপন্থী ইহুদি জাতীয়তাবাদীরা নীতিনির্ধারণে ব্যাপক প্রভাব ফেলছেন। এই বিষয়টি এখন ম্যাগা আন্দোলনের মধ্যেও দৃশ্যমান।

অ্যাক্সিওস-কে দেওয়া বক্তব্যে মার্কিন কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেন, নেতানিয়াহুর 'ভাগ্য' এবং ট্রাম্পের সহানুভূতি চিরস্থায়ী নাও হতে পারে।

এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল