বাকৃবি প্রতিনিধি:
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ‘জুলাই ৩৬ হল’-এ কতিপয় ছাত্রী কর্তৃক হলের পূর্বের নাম বহাল রাখার দাবিতে সংঘটিত আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ১৫ ছাত্রীকে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বহিষ্কৃতদের মধ্যে একজনকে আজীবনের জন্য হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং বাকিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়াদে একাডেমিক ও আবাসিক হল থেকে বহিষ্কারের শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
গত ২০ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ড. মো. হেলাল উদ্দীনের স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়। আজ (২৩ জুলাই) সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার নিজেই।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এবছরের ৯ জানুয়ারি রাতে ‘জুলাই ৩৬ হল’-এ কয়েকজন ছাত্রী অশোভন আচরণ ও শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়। ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় ‘অর্ডিন্যান্স ফর স্টুডেন্ট ডিসিপ্লিন’-এর ১৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী এবং বোর্ড অব রেসিডেন্স অ্যান্ড ডিসিপ্লিন কমিটির গত ১৩ জুলাইয়ের সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
শাস্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে কৃষিতত্ত্ব বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী সাইদা উম্মে রুমান বন্যাকে আজীবনের জন্য হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
দুই একাডেমিক সেমিস্টারের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম ও হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে ডেইরি সায়েন্স বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী লায়াবিন লতা, অ্যাকোয়াকালচার বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী ইন্তা ইয়াসমিন, সেঁচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী সাদিকা তানজিল মিম এবং বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের শিক্ষার্থী শবনম মুস্তারী।
এক সেমিস্টারের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম এবং দুই সেমিস্টারের জন্য হল থেকে বহিষ্কার হয়েছেন কৃষি অর্থনীতির স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী ইসরাত জামান ইশা এবং অ্যাকোয়াকালচার বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাহ্ তাসনিম।
এছাড়াও এক সেমিস্টারের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম ও হল থেকে বহিষ্কার হয়েছেন কৃষিতত্ত্ব বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মনিরা মেইজাবীন, কীটতত্ত্ব বিভাগের রোবাইয়া শারমিন, পশুপালন অনুষদের স্নাতক শিক্ষার্থী সাবিয়া আফরিন প্রভা, কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের স্নাতক শিক্ষার্থী তাহরীমা আক্তার জয়া, ওয়েটল্যান্ড এগ্রিকালচারের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী নাসরিন সুলতানা এবং মেডিসিন বিভাগের শিক্ষার্থী আফরোজা মজিদ।
এছাড়া শুধুমাত্র এক সেমিস্টারের জন্য হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের শিক্ষার্থী শামীম লাভলী এবং কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী অদিতি বড়ুয়া মীম।
জানা যায়, গত ৯ জানুয়ারি তৎকালীন ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ( বর্তমান জুলাই ৩৬ হল) হলে রাত ৯টা থেকে ১টা পর্যন্ত চলা আন্দেলনের ঘটনায় কতিপয় ছাত্রী হলের পূর্বের নাম বহাল রাখার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে। এছাড়া কিছু ছাত্রী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রাধ্যক্ষ ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করে আপত্তিকর পোস্ট ও মন্তব্য করেছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ন হওয়ার অভিযোগ এনে তা আমলে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশন।
এ ঘটনায় দোষীদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ দিতে গত ২ ফেব্রুয়ারি তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. জোয়াদ্দার ফারুক আহমেদ, সদস্য সচিব কৃষি সম্প্রসারণ শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক ড. সোনিয়া সেহেলী এবং সদস্য হিসেবে জিটিআইয়ের অধ্যাপক ড. মো. মোজাম্মেল হক ছিলেন।
শাস্তির বিষয়ে বাকৃবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ড. মো. হেলাল উদ্দীন বলেন, "ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে পরবর্তীতে বহিষ্কারের আদেশ দেওয়া হয়েছে। ওই ঘটনার পরে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি নিশ্চয় সুষ্ঠুভাবে তদন্ত সম্পন্ন করেছে। এরপরেও এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ তদন্ত কমিটি 'বোর্ড অব রেসিডেন্স এন্ড ডিসিপ্লিন' এ তোলা হয়। পরে তারা দোষীদেরকে শাস্তি বা কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন। সেই মোতাবেক বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার চিঠি ইস্যু করেছে। "
কবে থেকে শাস্তি কার্যকর হবে এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার বলেন, "যারা যারা চিঠি পেয়েছে তাদের চিঠিতে শাস্তির বিষয়ে উল্লেখ আছে। এক এক জনের শাস্তির মেয়াদ ভিন্ন। আর যাদেরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে তারা কারণ দর্শাবে। কেউ যদি দোষী না হয়ে থাকে তারা অবশ্যই কারণ দর্শীয়ে চিঠির উত্তর দিবে। যাদেরকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে এখন পর্যন্ত কেউ আপিল করেনি। আপেল করা তো শিক্ষার্থীদের অধিকার সেটা তো তারা করতেই পারবে।"