পদোন্নতিতে আবেগাপ্লুত না হয়ে নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হয়েছেন, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ফার্মেসী বিভাগের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান ড. মোঃ আকবর হোসেন। শনিবার (২রা আগস্ট) এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্যারকে নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়। রবিবার (৩রা আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন ক্যাম্পাসে স্যারকে বিনম্র শুভেচ্ছা জানিয়ে এক বিশেষ সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মুহাম্মদ তাওফিকুল হাসান।
প্রশ্ন: ফার্মেসী বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হয়ে আপনার অনুভূতি কেমন স্যার? আর এটাকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
ড. আকবর: সত্যি কথা বলতে, এটা কোনো পদন্নোতি নয়, এটা একটা অতিরিক্ত দায়িত্ব। এই অতিরিক্ত দায়িত্বটা রোটেশনাল, যা সবাইকেই একসময় নিতে হবে। আমার পরবর্তীতে সিনিয়র স্যারেরাও পর্যায়ক্রমিক ভাবে একই দায়িত্ব পালন করবেন। এটা নিয়ে আসলে অনূভুত না হয়ে কার্যকরভাবে দায়িত্ব পালন করাটাই আমার কাজ।
প্রশ্ন: ডিপার্টমেন্টের জন্য আপনার স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা কি কি?
ড. আকবর: স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা হিসেবে "বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল" (BAC) এর ইস্যু টার সমাধান করা, কোনো ধরনের সিডিউল বিপর্যয় যেনো না ঘটে তা দেখা, আর স্টুডেন্টদের রেজাল্ট প্রকাশে যেনো বিলম্ব না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা। এগুলো একেবারেই বেসিক কাজ যা আমাকে করতেই হবে।
আর দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হিসেবে বলতে চাই, আমাদের ফার্মেসী বিভাগের অনুমোদন পাওয়া মাস্টার্স প্রোগ্রামটা এখনো পরিচালিত হচ্ছে না। আমার আপ্রাণ চেষ্টা থাকবে অতিদ্রুতই যেনো এটি সফলভাবে চালু করতে পারি। আর এটি আমার একার পক্ষে পরিচালনা করা সম্ভব না। তাই কার্যক্রম সুষ্ঠুরূপে পরিচালনার জন্য ভার্সিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ, শিক্ষকমণ্ডলী, শিক্ষার্থীবৃন্দ সবাইকে নিয়েই কাজটা শুরু করতে চাই।
প্রশ্ন: শিক্ষার্থীদের একাডেমিক আর গবেষণামূলক অগ্রগতি বাড়াতে কি কি পদক্ষেপ গ্রহন উচিত?
ড. আকবর: এই জায়গায়টায় নতুনভাবে আমার কিছু করার নাই। এই ইউনিভার্সিটি অনেক আগে থেকেই এই বিষয়টার সাথে সংযুক্ত। আমাদের পূর্বের বিভাগীয় প্রধান এই জায়গায় যথেষ্ট ডেভেলপমেন্ট করে গেছেন। আর আমার কাজ হচ্ছে তৈরী করা জিনিসটাকে পরিচালনা করে নিয়ে যাওয়া।
প্রশ্ন: রিসার্চে আগ্রহী স্টুডেন্টদের জন্য ভার্সিটি বা ডিপার্টমেন্ট কিরকম সহায়তা প্রদান করে থাকে?
ড. আকবর: আমাদের এখানে আন্ডারগ্রেডে যেসব থিসিসগুলো হয় সেগুলো যথেষ্ট মানসম্পন্ন। অন্যান্য ভার্সিটিতে মাস্টার্সে যেগুলো করানো হয়, এখানে একজন আন্ডার গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট তার থেকে বেশি সুবিধা পেয়ে থাকে। চলমান রিসার্চ একটিভিটিগুলোতে ল্যাব ফ্যাসিলিটি থেকে শুরু করে দামি ইন্সট্রুমেন্ট এবং চাহিদা অনুযায়ী কেমিক্যালসহ প্রয়োজনীয় সকল ধরণের রিসোর্সেস ভার্সিটি দিয়ে থাকে, যা কিনা মানসম্পন্ন গবেষণা বা পাবলিকেশনে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।
প্রশ্ন: বর্তমানে চলমান OBE কারিকুলাম কি একজন দক্ষ ফার্মাসিস্ট তৈরীতে যথেষ্ট?
ড. আকবর: আমি মনে করি OBE কারিকুলামটা একজন শিক্ষার্থীকে কেবল মানসম্পন্ন ফার্মাসিস্ট হিসেবেই নয় বরং তাকে বিশ্বের দরবারে যোগ্যতাম্পন্ন শিক্ষার্থী হিসেবে গড়ে তুলতেও যথেষ্ট।
OBE কারিকুলামটা শুধু ফার্মেসীর জন্য না, সকল ডিসিপ্লিনের জন্য এটা ফলো করা উচিত। কারণ, এটা একটা গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ড; আর আমরা কেন এই গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ড মানবোনা।
প্রশ্ন: অ্যালামনাইদের নিয়ে কোনো ধরণের আয়োজন করা হয়না, এ প্রসঙ্গে যদি কিছু বলতেন!
ড. আকবর: যদি বলি করা হয়না, এটা একেবারে যে সত্য তা বলবোনা। গতবছর অলরেডি একটা গ্র্যান্ড প্রোগ্রাম করা হয়েছে। যদিও অ্যালামনাইরা অনেকেই কর্মব্যস্তার কারণে আসতে পারেননি। তারপরেও আমি বলবো আমাদের ডিপার্টমেন্টের স্বার্থে এবং ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্টদের সাথে অ্যালামনাইরা যথেষ্ট কোঅপারেটিভ। আমরা তাদেরকে স্মরণ করলেই তারা চলে আসেন এবং শুধু তাইনা স্টুডেন্টদের চাকুরীর ক্ষেত্রেও তারা যথেষ্ট সহোযোগিতা করে থাকেন। আমি মনে করি, তারা আমাদের সাথে যথেষ্ট সংযুক্ত আছেন তবে এর পরিসরটা আরো কিছুটা বাড়ানো যেতে পারে।
প্রশ্ন: ডিপার্টমেন্টে কোনো ধরণের ক্যারিয়ার ফেস্ট বা জব ফেস্ট হয়না কিংবা কোনো কোম্পানির স্পন্সরশীপ দেখতে পাওয়া যায়না কেন?
ড. আকবর: এগুলোর জন্য আমাদের দুটো ফাংশন এক্টিভলি তৈরি করতে হবে। প্রথমত, অ্যালামনাইদের সাথে নেটওয়ার্কিং (Alumni accumulation) যা আছে তার থেকে আরেকটু বাড়াতে হবে। দ্বিতীয়ত, আমাদের সুসংগঠিত ক্লাবটি যদিও বিগত দুই বছর ধরে চলমান রয়েছে, কিন্তু তারা ইন্টার্নালি এক্টিভ। এখন কোম্পানির স্পন্সরশীপ পাওয়ার জন্য তাদেরকে ইন্টার্নালি ক্লাবে যুক্ত থাকার পাশাপাশি এক্সটার্নালি সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। এতে ভবিষ্যতে ক্যারিয়ার প্রোগ্রাম বা জব ফেস্ট আয়োজন করাটাও সহজ হবে। আর আপাততঃ কিছু MOE প্রক্রিয়াধীন রয়েছে যার ফলাফল খুব শীঘ্রই পাওয়া যাবে বলে আমি আশা করছি।
প্রশ্ন: Square, Beximco, Incepta সহ লিডিং কোম্পানিগুলোতে অ্যালামনাইদের অবস্থান নেই কেনো?
ড. আকবর: আমার মনে হয়, এই জায়গাটাতে একটু কারেকশন করতে হবে। আমাদের অ্যালামনাইরা Beximco তে আছেন, Incepta তেও আছেন। এছাড়া Aristopharma, Renata, Healthcare, Opsonin সহ টপ ১৫ টা কোম্পানির প্রত্যেকটাতেই আমাদের অ্যালামনাইরা আছেন। হয়ত সংখ্যায় কম হতে পারে, কিন্তু আছেন। আর শুধু তাই না, Bristol এর মতন কোম্পানিতেও, ইংল্যান্ডে আমাদের অ্যালামনাই আছেন।
প্রশ্ন: সর্বশেষ ফার্মেসী বিভাগের শিক্ষার্থীদের প্রতি আপনার বার্তা কি থাকবে স্যার?
ড.আকবর: সবশেষে আমি বলবো আমাদের স্টুডেন্টরা যথেষ্ট ভদ্র এবং তারা পড়াশোনার ব্যাপারে কম্পিটিটিভ। এখন এই চার বছরে তাদেরকে মানসম্পন্ন ও দক্ষ ফার্মাসিস্ট হিসেবে গড়ে তোলাটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। যোগ্য করাটা আমাদের লক্ষ্য কিন্তু যোগ্যতা অর্জন করার পর তাদের উচিত স্বাধীনভাবে নিজেদের মান উন্নয়ন করা; যেনো তারা পিপল সার্ভিস (যেমন: হসপিটাল ফার্মাসিস্ট, মার্কেটিং ম্যানেজমেন্ট) এ দক্ষ হয়ে উঠতে পারে। দেশজুড়ে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ফার্মাসিস্ট নিয়োগ শুরু হলে, আমাদের শিক্ষার্থীদের উচিত এই সেক্টরটা দখল করে নেয়া। তাই এখন থেকেই আমি তাদের সোশিয়াল ইন্টারেকশন বাড়াতে বলবো, যেনো তারা ভালোভাবে পাবলিক ডিল করতে পারে এবং ধৈর্য্যের সাথে সার্ভিস দিয়ে যেতে পারে। যোগ্য করার দায়িত্বটা আমাদের, পিপল সার্ভিস দেয়াটা তাদের ব্যাপার।
একে