অনলাইন ডেস্ক:
রাশিয়া থেকে তেল কেনায় ভারতের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ফলে মোট শুল্কহার বেড়ে ৫০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ভারতের ওপর এমন উচ্চহারে শুল্কারোপ বাংলাদেশের জন্য বাড়তি সুবিধা এনে দিতে পারে। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রে পোশাকসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি এবং দেশে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ার বড় সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের জন্য।
তৈরি পোশাক: প্রধান লাভবান খাত
বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে এবং যুক্তরাষ্ট্র এই খাতের সবচেয়ে বড় একক বাজার। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি প্রায় ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসেই বেড়েছে ২১ শতাংশের বেশি।
ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্কের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতীয় পোশাকের দাম বাড়বে, যা বাংলাদেশের জন্য সুবিধাজনক। বাংলাদেশের ওপর আরোপিত ২০ শতাংশ শুল্ক ভারতের তুলনায় কম হওয়ায় মার্কিন ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি পোশাক আমদানির দিকে ঝুঁকতে পারেন।
চামড়াজাত পণ্য
বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্য, বিশেষ করে জুতা এবং ব্যাগ, আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে। ভারতের চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি মার্কিন বাজারে শুল্কের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে বাংলাদেশ এই শূন্যস্থান পূরণ করতে পারে।
বাংলাদেশ এরই মধ্যে জার্মানি, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশে চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশের জন্য সরকার এবং বেসরকারি খাতের সমন্বিত প্রচেষ্টা এই খাতের রপ্তানি বাড়াতে পারে।
কৃষিপণ্য
বাংলাদেশের কৃষিপণ্য, যেমন- হিমায়িত মাছ, চিংড়ি, শাকসবজি এবং ফলমূল, মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপে রপ্তানি হচ্ছে। ভারতের কৃষিপণ্যের ওপর উচ্চ শুল্কের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে এই পণ্যের চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ সুযোগ পেতে পারে। বিশেষ করে হিমায়িত চিংড়ি এবং মাছের মতো পণ্য মার্কিন বাজারে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে সরবরাহ করা সম্ভব। তবে, এই খাতে রপ্তানি বাড়াতে গুণগত মান এবং আন্তর্জাতিক মানের সার্টিফিকেশন নিশ্চিত করতে হবে।
তথ্যপ্রযুক্তি খাত
বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত দ্রুত বিকাশ লাভ করছে। ফ্রিল্যান্সিং, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট এবং আইটি সেবা রপ্তানি গত দশকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের আইটি সেবা রপ্তানির ওপর উচ্চ শুল্কের প্রভাব পড়লে বাংলাদেশ এই খাতে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর কাছে আকর্ষণীয় বিকল্প হতে পারে। বাংলাদেশের তরুণ জনশক্তি এবং তুলনামূলক কম শ্রমমূল্য এই খাতে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা প্রদান করবে।
এফডিআইতে নতুন গন্তব্য হতে পারে বাংলাদেশ
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতির কারণে বিদেশি কোম্পানিগুলো যদি ভারত থেকে উৎপাদন সরিয়ে নিতে চায়, তবে দক্ষিণ এশিয়ায় বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশকেই গুরুত্ব দেওয়া হতে পারে। আবার, চীন থেকেও ধীরে ধীরে উৎপাদন সরিয়ে আনছে অনেক কোম্পানি। ফলে ভারত-চীন উভয়ের বাইরে তৃতীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এগিয়ে আসতে পারে।
চ্যালেঞ্জ ও করণীয়
যদিও ভারতের ওপর উচ্চহারে শুল্ক বাংলাদেশের জন্য সুযোগ তৈরি করেছে, তবুও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলোও এই সুযোগ কাজে লাগাতে চাইবে। তাই বাংলাদেশকে পণ্যের গুণগত মান, উৎপাদন দক্ষতা এবং শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে বাংলাদেশকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। নীতিগত স্বচ্ছতা, সহজে ব্যবসার পরিবেশ, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ, দক্ষ মানবসম্পদ গঠন ও এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (ইপিজেড)-এর সম্প্রসারণে জোর দিতে হবে।
একে