জেলা প্রতিনিধি:
পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় আনোয়ার মাঝি নামে এক জেলের জালে ধরা পড়েছে বিরল প্রজাতির সম্রাট অ্যাঞ্জেলফিশ। কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে অন্যান্য মাছের সঙ্গে ধরা পড়া এই রঙিন মাছটি দেখতে স্থানীয়রা ঘাটে ভিড় করেন।
রোববার (১০ আগস্ট) সকালে মহিপুর বন্দরে আনার পর মাছটি দেখতে মৎস্য বন্দরে হৈচৈ শুরু হয়। কেউ কেউ একে অ্যাকুরিয়ামের মাছ বলেও ধারণা করেন। আড়তদার জানান, মাছটি এখনো বিক্রি হয়নি।
জেলে আনোয়ার বলেন, "এফবি জারিফ তারিফ নামের ফিলিং ট্রলারটি নিয়ে আমরা গত এক সপ্তাহ আগে সমুদ্রে যাই। সমুদ্রে সচরাচর এরকম মাছ বিগত দিনে আর পাইনি। এবং এ মাছের দাম সম্পর্কেও কোনো ধারণা নেই। এবার সমুদ্রে গিয়ে ফিশিং করার সময় অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের সঙ্গে এটি পাওয়া যায়।"
ওয়ার্ল্ডফিশ-বাংলাদেশের গবেষণা সহকারী মো. বখতিয়ার রহমান জানান, মাছটির বাংলা নাম 'অ্যাঞ্জেলফিশ' এবং বৈজ্ঞানিক নাম পোমাকান্থাস ইম্পারেটর (Pomacanthus imperator)। তিনি বলেন, "এটি অত্যন্ত রঙিন একটি সামুদ্রিক মাছ। এর প্রাকৃতিক আবাসস্থল ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরের প্রবাল প্রধান অঞ্চল। সর্বোচ্চ প্রায় ৪০ সেমি (প্রায় ১৬ ইঞ্চি) পর্যন্ত বড় হতে পারে। এই মাছটির আকার ১৬ ইঞ্চির মতো। গায়ের গাঢ় নীল পটভূমিতে হলুদ অনুভূমিক দাগ, মুখে নীল-কালো 'মাস্ক' প্যাটার্ন রয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, "মাছটি সাধারণত প্রবাল প্রধান, লবণাক্ত, উষ্ণ সমুদ্র অঞ্চলে থাকে। বঙ্গোপসাগরের উপকূলে এমন মাছ সচরাচর ধরা পড়ে না, কারণ আমাদের উপকূলীয় অংশ মূলত কাদামাটি ও বালুময়, প্রবাল প্রাচীর তেমন নেই। তবে বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে আন্দামান সাগর সংলগ্ন মায়ানমার উপকূলের কাছাকাছি কিছু প্রবাল প্রধান এলাকা আছে।"
বখতিয়ার রহমান বলেন, "সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তন ও স্রোতের ধরণ বদলের কারণে কিছু সামুদ্রিক প্রজাতি তাদের আবাসক্ষেত্র প্রসারিত করছে। এর ফলেই হয়তো এই মাছটি বাংলাদেশি জেলেদের জালে ধরা পড়েছে।"
কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, "মাছটির বাংলা নাম অ্যাঞ্জেলফিশ। এটি একটি বিরল প্রজাতির মাছ। মাছটি উপকূলে সচরাচর দেখা যায় না। মাছটি গভীর সমুদ্রের এবং বিভিন্ন প্রজাতির মাছের সাথে এটি জেলের জালে উঠে এসেছে।"
তিনি যোগ করেন, "এটা জেলেদের জন্য একটি সুখবর। এসব মাছ যত বেশি ধরা পড়বে, জেলেরা অর্থনৈতিকভাবে তত বেশি লাভবান হবে।"
এমআই