নিজস্ব প্রতিবেদক:
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেছেন, ‘নির্বাচনের জন্য যে শর্ত এবং দাবিগুলো আমরা দিয়েছি সেগুলো এনশিউর করেই নির্বাচনে যেতে হবে সরকারকে। অন্যথায় নির্বাচন হবে না।‘
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাতের পর তিনি সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন।
হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য যে শর্ত এবং দাবিগুলো আমরা দিয়েছি সেগুলো এনশিউর করেই নির্বাচনে যেতে হবে সরকারকে। তাহলে আমরা প্রতিশ্রুতি দিতে পারি নির্বাচন হবে। অন্যথায় নির্বাচন হবে না।’ তিনি বলেন, ‘জনগণ চাইলে পিআর পদ্ধতিতে সরকারকে যেতেই হবে। সময় উত্তর দিবে। এজন্য আমরা জনমত গঠন করবো।’
জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘সংসদীয় আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণের বিষয়ে সবার বক্তব্য আমলে নিতে আহ্বান জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। নির্বাচনে সন্ত্রাস-অনিয়ম বন্ধ করতে হলে পিআর পদ্ধতিতে ভোট করতে হবে। সবাই সবকিছু নাও চাইতে পারে, তত্ত্বাবধায়কও অনেকে চায়নি। জাতির জন্য কল্যাণকর পিআর পদ্ধতির নির্বাচন৷’
এক প্রশ্নের জবাবে হামিদুর রহমান বলেন, জনগণ চাইলে অবশ্যই পিআর পদ্ধতি মানতে হবে। এই দাবি নিয়ে মাঠে থাকবে জামায়াত। পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতিও নেবে। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলে কোনো সমস্যা নাই। তবে এখনও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হয়নি।
জামায়াতের সাংগঠনিক আর্থিক ব্যবস্থাপনায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকার বিষয়ে একজন সাংবাদিক জানতে চাইলে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, এর জবাবটা আপনিই দেন, আমরা ১৫ বছর কোথায় ছিলাম? এ নেতার ভাষ্য, হিসাব পদ্ধতিতে যদি যান আমার বাবা দাদার আমলে, হিসাব পদ্ধতিতে ব্যাংক একাউন্ট কাজ কত জনের ছিল? কোটি কোটি টাকার লেনদেন তো হয় দোকানগুলোয়। এখনও বাংলাদেশের একটা বিরাট নাম্বার আছে যে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই।
বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘গত ১৫ বছর আমরা বাড়িঘরে থাকতে পারি নাই। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে যাবো কেন? ব্যাংক একাউন্ট খুলতে যদি যেতাম আয়নাঘরে ঢুকতে হতো। … সে কারণে যে রিটার্নটা আমরা এখন দিয়েছি সেখানে ব্যাংক উল্লেখ নেই। সামনে আগামী রিটার্নের সময় অবশ্যই পরিবেশ অনুকূল থাকলে আমরা এটা করব।’
‘হিসাবের যদি সিস্টেম আনেন যার যার মত হিসাব রাখতে পারে। ইলেকশন কমিশনও তার কোনো শর্ত আরোপ করে না যে ব্যাংক হিসাব খুলেই দলের হিসাব রাখতে হবে। এটা আমার দলের সিদ্ধান্তের ব্যাপার।, বলেন আযাদ।
হামিদুর রহমান আযাদ জানান, দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ভিত্তিতে ২০০৮ সালের যে রিটার্ন জমা দেওয়া হয়, সেখানে হিসাবের মধ্যে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট উল্লেখ ছিল। তিনি বলেন, ‘সে অনুযায়ী আমরা কাজ করেছি। কিন্তু এরপরে দেশে কী হয়েছে আপনারা জানেন, ব্যাখ্যার দরকার নাই।’
২০১৩ সালে নিবন্ধন বাতিল হওয়ার আগে সর্বশেষ আয়-ব্যয়ের হিসাব দিয়েছিল জামায়াতে ইসলামী। জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চলতি বছর তারা নিবন্ধন ফিরে পায়। সেই বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী এক যুগ পর ফের আয় ব্যয়ের হিসাব দিল দলটি।
জামায়াতে ইসলামীর একটি প্রতিনিধি দল গত ৩১ জুলাই নির্বাচন কমিশনে গিয়ে ২০২৪ পঞ্জিকাবর্ষের আয়-ব্যয়ের যে হিসাব জমা দেয়, সেই হিসাব অনুযায়ী ২০২৪ সালে ২৮ কোটি ৯৭ লাখ ২৯৯ টাকা আয়ের বিপরীতে ২৩ কোটি ৭৩ লাখ ৩৮ হাজার ১৭৭ টাকা ব্যয় দেখিয়েছে জামায়াত। তবে ব্যাংক হিসাবের কোনো তথ্য ছিলো না সেই আর্থিক বিবরণীতে।
নির্বাচন কমিশনের দল নিবন্ধন বিধি অনুযায়ী, প্রত্যেকটি দলের ব্যাংক একাউন্ট নম্বর ও ব্যাংকের নাম থাকা বাধ্যতামূলক।
এমআই