শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫

রাকসু নির্বাচন অনিশ্চয়তায়

শনিবার, আগস্ট ২৩, ২০২৫
রাকসু নির্বাচন অনিশ্চয়তায়

অনলাইন ডেস্ক:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে এক ধরনের অনিশ্চয়তা।‌ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর থেকে ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক তৎপরতা বাড়লেও নানা জটিলতা নির্বাচনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পিএসসিতে নিয়োগ, ছাত্রদলের ‘তড়িঘড়ি নির্বাচন না চাওয়া’ এবং পোষ্য কোটা ফেরানোর দাবিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের কারণে সৃষ্টি হয়েছে ত্রিমুখী চাপ। মনোনয়নপত্র বিতরণের দিনগুলোতেই কর্মবিরতি পালন করছেন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

ছাত্রনেতারা বলছেন, রাকসু নিয়ে প্রশাসনের দেওয়া প্রতিশ্রুতি বারবার পরিবর্তন হচ্ছে। পোষ্য কোটা পুনর্বহালের দাবিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রশাসনকে সময় বেঁধে দিয়েছেন। তপশিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র বিতরণ হয়নি। এখন আবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার থাকছেন না। এসবের কারণে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, এই পরিবর্তনের কারণে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কোনো প্রভাব পড়বে না। নির্ধারিত সময়েই ভোট গ্রহণ হবে।

পোষ্য কোটা ফেরাতে ফের কর্মসূচি 
পোষ্য কোটা পুনর্বহালের দাবিতে আগামী ২৪ থেকে ২৬ আগস্ট পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এই দিনগুলোতে রাকসুর মনোনয়নপত্র বিতরণের নতুন সময় দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এর আগে ২০ আগস্ট মনোনয়নপত্র বিতরণের কথা থাকলেও সেদিন কর্মবিরতির কারণে বিতরণ কর্মসূচি স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। 

এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপিপন্থি জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি ও এগ্রোনমি অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুল আলিম, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার জামায়াতে ইসলামীর আমির ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন, জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আমীরুল ইসলাম, শাখা জামায়াতের সেক্রেটারি ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামরুল আহসান, অফিসার সমিতির বিএনপিপন্থি সভাপতি মোক্তার হোসেন ও জামায়াতপন্থি কোষাধ্যক্ষ মাসুদ রানা। 

শিক্ষার্থীরা বলছেন, এই কর্মসূচি দাবি আদায়ের জন্য নয়, বরং এটি রাকসু নির্বাচন বানচালের একটি ষড়যন্ত্র। তবে এই কর্মসূচির সঙ্গে রাকসুর কার্যক্রমের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক ড. মো. আবদুল আলিম। তিনি বলেন, আমাদের কর্মসূচির সঙ্গে রাকসুর কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা আমাদের অধিকারের যৌক্তিক সমাধান চাই।

তড়িঘড়ি করে নির্বাচন চায় না ছাত্রদল
ছাত্রদল নেতারা বলছেন, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টিতে তাদের দাবিগুলো প্রশাসন আমলে নেয়নি। তারা চান প্রশাসন নিরপেক্ষ থেকে আস্থা অর্জন করুক। তড়িঘড়ি করে নির্বাচন না করে সবকিছু সুষ্ঠুভাবে অনুসরণ করে নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।
একাধিক সূত্র বলছে, কিছুদিন আগেও ছাত্রদলের রাকসু নিয়ে কোনো আগ্রহ ছিল না। তবে বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। ছাত্রদলের সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে ও

যোগ্য প্রার্থী খুঁজে নিতে তারা কিছুদিন সময় নিতে চাচ্ছেন। ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। তবে তড়িঘড়ি করে নয়। শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন করতে হবে।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পিএসসিতে পদায়ন 
মনোনয়নপত্র বিতরণের মাত্র তিন দিন আগে রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. আমজাদ হোসেন সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সদস্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে তাঁকে এই নিয়োগ দেওয়া হয়। 

তিনি দায়িত্ব ছেড়ে দিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছেন। নির্বাচন কমিশনারের আকস্মিক বদলিতে নির্ধারিত সময়ে রাকসু নির্বাচন হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন ছাত্রনেতারা।এ বিষয়ে অধ্যাপক আমজাদ হোসেন বলেন, ‘আমি দায়িত্ব ছেড়ে দিতে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলমান আছে। উপাচার্য দ্রুতই নতুন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেবেন।’

যা বলছেন ছাত্রনেতারা 
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল বলেছেন, ‘রাকসু নির্বাচন ঘিরে এক ধরনের দখলদারিত্বের সংস্কৃতি বিদ্যমান। যাদের দখল করার সুযোগ আছে, তারা দখল করার চেষ্টা করছে। আর যারা আধিপত্যবাদী শক্তি কিন্তু দখল করার সুযোগ নেই, তারা নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করছে।’

ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি মেহেদী মারুফ বলেন, নির্বাচন কমিশনের যদি এখন রদবদল হয়, তবে তপশিল অনুযায়ী নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে কিনা– প্রশ্ন থেকেই যায়। নতুন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ হলে, নতুন বিতর্কের শুরু হতে পারে। সব মিলিয়ে আমাদের মাঝে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।

ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, নির্বাচন কমিশনারের অন্য জায়গায় পদায়ন হতেই পারে। খুব দ্রুত নতুন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিতে হবে। 
বারবার মনোনয়নপত্র তোলার তারিখ পরিবর্তন হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলছেন। এ ছাড়া শিক্ষকরাও আন্দোলন করছেন। এই সংকটের সমাধান করতে হবে প্রশাসনের।
তবে নির্ধারিত তপশিল অনুযায়ী নির্বাচনী কাজ সম্পন্ন হবে উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এনামুল হক বলেন, প্রশাসন দ্রুতই নতুন কাউকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেবে। মনোনয়নপত্রও নির্ধারিত ২৪ তারিখ থেকেই বিতরণ শুরু হবে।

এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে আন্দোলন চলছে। সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করছি। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পিএসসিতে নিয়োগ রাকসুর কাজে কোনো প্রভাব ফেলবে না। 

একে 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল