রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫

ঠাকুরগাঁওয়ে ৮ মাসে ২২১ আত্মহত্যা,নেই মানসিক চিকিৎসা

রোববার, আগস্ট ২৪, ২০২৫
ঠাকুরগাঁওয়ে ৮ মাসে ২২১ আত্মহত্যা,নেই মানসিক চিকিৎসা

জসীম উদ্দিন ইতি, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে বাজারী বেগম (৭০) নামে এক বৃদ্ধা পেটে ব্যথা সহ্য না পেরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। শনিবার (২৩ আগস্ট) সকাল সাড়ে আটটার দিকে উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের কাসাত গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি গ্রামের কিশোর হাফিজুর রহমান (১৬)। মা-বাবার একমাত্র সন্তান। পড়াশোনার পাশাপাশি হাফিজুর স্থানীয় মসজিদে হেফজ পড়ত। মায়ের সঙ্গে ‘অভিমান’ করে ১৭ আগস্ট ঘরে রাখা কীটনাশক পান করে এই কিশোর। দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি তাকে।

হাফিজুরের মৃত্যুর পর ভেঙে পড়েছেন তার মা-বাবা। তার মা বলেন, ‘ও আমাকে একবারও জানাল না কী কষ্টে আছে। যদি জানতাম, বুঝতাম—তাহলে আজ হয়তো বেঁচে থাকত আমার ছেলে।

এমন ঘটনা শুধু একটি নয়। এমন কান্না ঠাকুরগাঁওজুড়েই শোনা যাচ্ছে। ঠাকুরগাঁওয়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জিআরও শাখার তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি থেকে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত জেলায় আত্মহত্যা করেছে ২২১ জন। থানা ও উপজেলাভিত্তিক আত্মহত্যার হিসাব বলছে, পীরগঞ্জ উপজেলায় ৫৮ জন, ঠাকুরগাঁও সদরে ৫৩ জন, রাণীশংকৈলে ২৯ জন, বালিয়াডাঙ্গীতে ২৭ জন, হরিপুরে ২১ জন, ভুল্লি থানায় ২২ জন ও রুহিয়া থানায় ১৪ জন। 

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের জিআরও ফরিদ উজ্জামান বলেন, এই আত্মহত্যাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ গলায় ফাঁস দিয়ে জীবন শেষ করেছে।

পুলিশ বলছে, প্রেমে ব্যর্থতা, মা-বাবার সঙ্গে অভিমান, দারিদ্র্য, ঋণ ও পারিবারিক কলহ এ অঞ্চলে আত্মহত্যার প্রধান কারণ।

২ আগস্ট হরিপুর উপজেলার সাবেক ব্র্যাক ব্যাংক কর্মকর্তা মর্তুজা আলম (৪৫) স্ত্রীর ওপর অভিমান করে গলায় ফাঁস দেন। কয়েক দিন আগে সদর উপজেলায় নবম শ্রেণির এক ছাত্রী পড়াশোনার চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, অনেকে আত্মহত্যার চেষ্টা করে হাসপাতালে আসে। কিন্তু সামাজিক লজ্জার ভয়ে পরিবারগুলো বিষয়টি গোপন রাখে। এতে প্রকৃত সংখ্যাটা আরও বেশি হতে পারে।

এদিকে জেলা সদর হাসপাতাল বা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেই কোনো মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ। বিষণ্নতা, মানসিক চাপ কিংবা আত্মহত্যাপ্রবণ রোগীরা পাচ্ছেন না কোনো বিশেষায়িত চিকিৎসা।

সিভিল সার্জন মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘ঠাকুরগাঁও সীমান্তবর্তী এলাকা। এখানে মাদক সহজলভ্য। মাদকাসক্তি ও পারিবারিক অশান্তি আত্মহত্যার অন্যতম কারণ। এই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা জরুরি। যদিও উপজেলা পর্যায়ে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ নেই, তবে মেডিকেল অফিসারদের রোগীদের কাউন্সেলিং করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঠাকুরগাঁওয়ের সামাজিক সংগঠন সৃজনের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘মানসিক স্বাস্থ্যসেবার অভাব এখানে প্রকট। মানুষ কষ্টের সময় কাউকে পাশে পায় না মনের কথা বলার। একসময় হতাশ হয়ে অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আত্মহত্যার প্রবণতা কমাতে স্কুল কলেজ পর্যায় থেকেই সচেতনতা কার্যক্রম চালানো জরুরি।

পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ঠাকুরগাঁওয়ে আত্মহত্যার ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। আমরা বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছি। আমাদের পরিকল্পনা আছে প্রতিটি ইউনিয়নে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান করার। মানুষকে জানাতে চাই কোনো সমস্যার সমাধান আত্মহত্যা নয়।

একে 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল