আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করলো চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলো। শীর্ষ দুই রুশ তেল কোম্পানি রসনেফট ও লুকওয়েলের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা জারির পর এই সিদ্ধান্ত নিলো চীনা কোম্পানিগুলো। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) একাধিক বাণিজ্যিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
ইউক্রেনে শান্তি চুক্তির জন্য মস্কোকে চাপ দিতেই রাশিয়ার ওই দুটি কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল বলে বলে বুধবার (২২ অক্টোবর) জানিয়েছিলেন মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট।
এর আগে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় সমুদ্রপথের তেল ক্রেতা ভারতও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা মেনে রুশ তেল আমদানি কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। ফলে মস্কোর সবচেয়ে বড় দুই ক্রেতা ভারত ও চীনের এ সিদ্ধান্ত রাশিয়ার তেল রাজস্বে বড় ধাক্কা দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে বৈশ্বিক বাজারে বিকল্প সরবরাহের চাপে তেলের দামও বাড়তে পারে।
সূত্রগুলো জানায়, চীনের জাতীয় তেল কোম্পানি পেট্রোচায়না, সিনোপেক, সিএনওওসি ও ঝেনহুয়া অয়েল আপাতত সমুদ্রপথে রুশ তেল কেনাবেচা থেকে বিরত থাকবে। তারা আশঙ্কা করছে, নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তবে কোম্পানিগুলো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।
চীন প্রতিদিন প্রায় ১৪ লাখ ব্যারেল রুশ তেল সমুদ্রপথে আমদানি করে। তবে এর বেশিরভাগই কেনে বেসরকারি ক্ষুদ্র রিফাইনারি বা তথাকথিত ‘টিপট’ কোম্পানিগুলো। যদিও রাষ্ট্রীয় রিফাইনারিগুলোর আমদানির পরিমাণ নিয়ে বিভিন্ন সংস্থার হিসাব ভিন্ন।
তেল বিশ্লেষণ প্রতিষ্ঠান ভরটেক্সা অ্যানালিটিকস জানায়, ২০২৫ সালের প্রথম নয় মাসে চীনের রাষ্ট্রীয় কোম্পানিগুলোর রুশ তেল ক্রয় দৈনিক ২ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেলের কম ছিল। আর পরামর্শক সংস্থা এনার্জি অ্যাসপেক্টস জানায়, এই সংখ্যা ছিল দৈনিক প্রায় ৫ লাখ ব্যারেল।
সিনোপেকের বাণিজ্যিক শাখা ইউনিপেক গত সপ্তাহে রুশ তেল কেনা বন্ধ করে দেয়। কারণ, যুক্তরাজ্য রসনেফট, লুকওয়েলসহ রুশ ‘শ্যাডো ফ্লিট’ জাহাজ এবং কিছু চীনা প্রতিষ্ঠানকে নিষিদ্ধ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।
বাণিজ্যিক সূত্রগুলো আরও জানায়, রসনেফট ও লুকওয়েল সরাসরি ক্রেতাদের না দিয়ে মূলত মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে চীনে তেল বিক্রি করে থাকে। অন্যদিকে, স্বাধীন রিফাইনারিগুলো আপাতত নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পর্যবেক্ষণ করবে। তবে তারা রুশ তেল কেনা পুরোপুরি বন্ধ করবে না বলেই মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
তবে চীন আরও প্রায় ৯ লাখ ব্যারেল রুশ তেল পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করে, যার পুরোটাই যায় পেট্রোচায়নার কাছে। বাণিজ্যিক সূত্রগুলো বলছে, এই সরবরাহ নিষেধাজ্ঞায় তেমন প্রভাব পড়বে না।
বিশ্লেষকদের মতে, ভারত ও চীন অন্য উৎস থেকে তেল কেনার দিকে ঝুঁকবে। ফলে মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার নিষেধাজ্ঞামুক্ত তেলের দামও বাড়তে পারে।
এমআই