গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি:
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বৌলতলী বাজার চৌরঙ্গীতে প্রতি হাটের দিনে (শুক্রবার ও সোমবার) দেখা মেলে ৯০ বছর বয়সী এক প্রবীণ ব্যবসায়ীর। নাম তার মো:সামচুল ইসলাম (সামচু)। অনেকে তাকে ফেনু বলেও ডাকেন। বাড়ি সদর উপজেলার ভেড়ার বাজার এলাকায়। ৪০ বছরেরও ধরে তিনি নিয়মিত বৌলতলীর হাটে এসে ব্যবসা করছেন।অবাক করার বিষয় হলো, বয়স তার নব্বই পেরোলেও তিনি এখনো স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন।
ছোট্ট একটি জায়গায় বসে তিনি বিক্রি করেন সুই-সুতা, ইঁদুর ও তেলাপোকা মারার ওষুধ, কটন বার্ড, চিরুনি, দাঁতের ব্রাশ,ঘা প্যাচড়া,দাউদ,আশ্চর্য মলম, চুলকানির মলমসহ নানা ধরনের ছোটখাটো পণ্য। চর্ম ও এলার্জি জাতীয় রোগের মলম বিক্রি করার জন্য অনেকের কাছে তার গ্রাম ডাক্তারের পরিচিতি রয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, তাদের বহুদিন ধরে শামসুরকে বৌলতলী বাজারের একই স্থানে ব্যবসা করতে দেখা যায়। গ্রামের অনেকে তাকে বৌলতলী বাজারের অন্যতম পুরোনো মুখ হিসেবে চেনেন। তিনি বৌলতলী বাজার ছাড়াও আরো কয়েকটি হাটে ব্যবসা করেন। সে হাট গুলোর নাম হলো মানিকহার, উলপুর ও ভেড়ার বাজার।
নিয়মিত বাড়িতে বসেও বেচাকেনা করেন। জীবনের নবম দশকেও তিনি নিজের পায়ে হেঁটে হাটে এসে ব্যবসা করে যাচ্ছেন। স্থানীয়রা তার শ্রম ও অধ্যবসায়কে দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখছেন।
ব্যবসায়ী মো:সামচুল ইসলাম (সামচু) বলেন, পরিবারে স্ত্রী,ছেলে-মেয়ে, নাতী-নাতনী আছেন। পরিবারে অনেক খরচ। এগুলো সামলাতে আমাকেই হয়। ব্যাবসার কাজ না করলে তো সংসার চালানো দায়। গরীবের ব্যাথা অনেকে বোঝে না। পেটের দায়ে জীবনতো আর থামে না। তারপরও সৃষ্টিকর্তা যতদিন বাচিয়ে রাখেন,সুস্থ থাকলে আমি ব্যাবসা চালিয়ে যাবো। আমার মন প্রাণ মিশে আছে এ ব্যাবসার সাথে। ক্রেতাদের সাথে আমার প্রতি হাটে দেখা হয়, কথা হয়, তাদের সাথে সাথে বেচাকেনা করি। সব কিছু মিলে আমার ভালো লাগে। বাচার প্রাণ ফিরে পাই।
ওই এলাকার প্রগতিশীল ও সামাজিক সংস্কৃতিমনা ব্যক্তিত্বের অধিকারী শান্তনু রায় বলেন, সময়ের সাথে পাল্টে গেছে বাজারের চিত্র, কিন্তু বদলায়নি তার দৃঢ়তা। সামচুর কাকাকে ছোট বেলা থেকে দেখে আসছি। অনেক ভাল মনের মানুষ। সবারই উচিত ওনার কাছ থেকে কিছু না কিছু কিনে উপকার করা।
বৌলতলী বাজার কমিটির সভাপতি মো: হাফিজ সিকদার জানান, আমাদের এ বাজারে চল্লিশ বছরের বেশি সময় ধরে ব্যবসা করছেন মো:সামচুল ইসলাম (সামচু)। তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। তিনি অত্যন্ত ভাল মনের মানুষ হিসেবে এলাকায় পরিচিত। সমাজে যারা ধনী ব্যক্তি তাদের উচিত সামচুর কাকাকে আর্থিক ভাবে সহযোগিতা করে একটি স্থায়ী দোকান করে দেওয়া। তাকে সরকারিভাবেও সহযোগিতা করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
একে