আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
বেলারুশের রাজধানী মিনস্ক থেকে ৭২ কিলোমিটার দূরে বিশাল মাঠে চলছে তুমুল লড়াই। সুখোই-৩৪ বোমারু বিমান থেকে গাইডেড বোমা ফেলা হচ্ছে, আকাশ ভরে যাচ্ছে ধোঁয়ায়।
চারপাশ কেঁপে উঠছে মর্টার ও কামানের গোলার শব্দে। হেলিকপ্টার গানশিপ আকাশ থেকে হামলায় যোগ দিচ্ছে, আর ড্রোন নজরদারি করছে ক্ষয়ক্ষতির। তবে এ সবই আসলে সামরিক মহড়া।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের কয়েকজন সাংবাদিককে বোরিসভস্কি প্রশিক্ষণ মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যেখানে রাশিয়া ও বেলারুশের সেনারা যৌথভাবে মহড়া চালাচ্ছে।
এটি “জাপাদ-২০২৫” (ওয়েস্ট ২০২৫) নামে পরিচিত বার্ষিক মহড়ার অংশ, যা প্রতি চার বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হয়।
২০২২ সালে এ মহড়ায় অংশ নিয়েছিল দুই লাখ সেনা, এ বছরের মহড়ায় সেনা সংখ্যা কম হলেও আয়োজন ছিল সমান জাঁকজমকপূর্ণ।
রাশিয়া ও বেলারুশ বলছে, এ মহড়া পুরোপুরি প্রতিরক্ষামূলক, যার উদ্দেশ্য নিজেদের নিরাপত্তা জোরদার করা এবং সম্ভাব্য বাইরের হুমকি মোকাবেলা করা।
বেলারুশে বিবিসি-র রাশিয়া বিষয়ক সম্পাদক স্টিভ রোজেনবার্গ বলেন, “সাড়ে তিন বছর আগে আমি একইরকম দাবি শুনেছিলাম। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমি বেলারুশে গিয়েছিলাম ইউনিয়ন রিজলভ নামক যৌথ মহড়ার খবর সংগ্রহ করতে।
মহড়া শেষে রুশ সেনারা ঘরে না ফিরে বরং বেলারুশের মাটি ব্যবহার করে ইউক্রেইনে হামলা চালিয়েছিল।” তবে এবার বেলারুশ জোর দিয়েই বলছে, তাদের লুকোনোর কিছু নেই। যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক ও হাঙ্গেরিসহ ২৩টি দেশের প্রতিনিধিরা মহড়া প্রত্যক্ষ করেছেন।
“আমরা মহড়াটিকে নজিরবিহীন স্বচ্ছতার সঙ্গে আয়োজন করেছি। আমরা কাউকে হুমকি দিচ্ছি না, আমরা গঠনমূলক ও প্রায়োগিক সংলাপ চাই,” বলেন বেলারুশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহকারী মেজর জেনারেল ভ্যালেরি রেভেঙ্কো।
তবে পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক একে বলেছেন “খুবই আগ্রাসী মহড়া”। মহড়ার আগেই পোল্যান্ড বেলারুশ সীমান্ত বন্ধ করে দেয়, যা নিয়ে মিনস্ক ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
“জাপাদ-২০২৫” মহড়া এমন সময়ে হচ্ছে, যখন পূর্ব ইউরোপ জুড়ে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। দক্ষিণে ইউক্রেইনে রাশিয়ার যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ নেই। গত সপ্তাহে পোল্যান্ড অভিযোগ করেছে, রাশিয়ার একটি ড্রোন ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে।
নেটো যুদ্ধবিমান কিছু ড্রোন ভূপাতিত করেছে। রাশিয়া পাল্টা দাবি করেছে, পোল্যান্ডে কোনও লক্ষ্যবস্তুতে আঘাতের পরিকল্পনা তাদের ছিল না।
এরপর রোমানিয়াও জানিয়েছে, তাদের আকাশসীমায় ঢুকে পড়েছিল রাশিয়ার একটি ড্রোন। ইউরোপজুড়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে যে, এসব কেবল দুর্ঘটনা নয়, বরং নেটো ও ইউরোপীয় নেতৃত্বের ঐক্য পরীক্ষা করার কৌশল।
মস্কো ও মিনস্ক সম্প্রতি ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার চেষ্টা চালালেও ইউরোপের সঙ্গে তাদের সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে।
বেলারুশ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে মহড়ায় আমন্ত্রণ জানিয়েছে। একদিকে এটিকে স্বচ্ছতার প্রদর্শন হিসেবে দেখা যেতে পারে।
আর অন্যদিকে, বরিসোভস্কির মাঠে সামরিক মহড়ায় বিস্ফোরণ এবং গুলির শব্দ যেন পশ্চিমাদের, বিশেষ করে ইউরোপের উদ্দেশে স্পষ্ট বার্তাও দিচ্ছে— “আমাদের শক্তি চোখের সামনে দেখুন; মস্কোর সঙ্গে সংঘাতে জড়ানো আপনাদের স্বার্থে নয়।”
এমআই