জাকারিয়া শেখ ফুলবাড়ি, (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি :
চলতি আমন মৌসুমে কুড়িগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে। সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত দামে কৃষকদের সার কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। এতে কৃষক সমাজ চরম বিপাকে পড়েছে। এই অমানবিক পরিস্থিতির প্রতিবাদে রাষ্ট্র সংস্কার কৃষক আন্দোলন কুড়িগ্রাম জেলা শাখার উদ্যোগে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় জেলা শহরের শাপলা চত্বরে ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। কর্মসূচিতে অংশ নেন শত শত কৃষক, কৃষক পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
বক্তারা বলেন, একটি প্রভাবশালী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ইচ্ছাকৃতভাবে সার মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে। ফলে কৃষকদের সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ১৫০-২০০ টাকা বেশি দিয়ে প্রতি বস্তা সার কিনতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে, যা কৃষকদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাষ্ট্র সংস্কার কৃষক আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আরিফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, “আমাদের কৃষকরা দেশের প্রাণ। অথচ তারা আজ সারের জন্য হাহাকার করছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে কৃষকরা ন্যায্যমূল্যে সার পাচ্ছে না। প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।”
কুড়িগ্রাম জেলা শাখার আহ্বায়ক মো. মন্তাজ আলী বলেন, “অবিলম্বে সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে এবং কালোবাজারি নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় কৃষকরা আরও বড় আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে।”
সভায় আরও বক্তব্য দেন জেলা সদস্য সচিব রেজাউল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মোর্শেদ আলম, ভোগডাঙ্গা ইউনিয়ন শাখার মো. ফারুক হোসেন, এবং কৃষক নেতা মামুনুর রশীদ মামুন ও এনাম রাজু। সভাপতিত্ব করেন মো. রফিকুল ইসলাম এবং সঞ্চালনা করেন মো. সাইফুল ইসলাম।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ফুলবাড়ী উপজেলার কৃষক আব্দুল মালেক বলেন, “গত সপ্তাহে ইউরিয়ার এক বস্তার দাম সরকারি রেটে ১০৫০ টাকা হলেও আমাদের ১৮০০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে আমরা চাষাবাদ চালাতে পারব না।”
ভুরুঙ্গামারীর কৃষক রহিম উদ্দিন বলেন, “আমাদের ধান রোপণের মৌসুম চলছে। এই সময় যদি সারের সংকট হয়, তবে উৎপাদন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা চাই প্রশাসন মাঠে নেমে ডিলারদের কার্যক্রম তদারকি করুক।”
বিক্ষোভ শেষে রাষ্ট্র সংস্কার কৃষক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ তিন দফা দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন। দাবিগুলো হলো—
১. জেলায় ডিলারের সংখ্যা বৃদ্ধি করা,
২. কালোবাজারি নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা,
৩. সারের সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া।
বক্তারা কৃষকবান্ধব নীতি বাস্তবায়ন এবং সারের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এমআই