বুধবার, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৫
অ আ আবীর আকাশ, লক্ষ্মীপুর:
লক্ষ্মীপুর-বেগমগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক ফোর লেন করার জন্য সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় ৩ শত ৭৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও দরপত্র জটিলতার অজুহাত দেখিয়ে কাজটি চালু করা হচ্ছে না। সড়কটি খারাপ হওয়ার কারণে বিগত ৩ বছরে এই সড়কে ৫৯জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলের মহাসড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ঝুঁকি নিয়ে এ সড়ক দিয়ে যানবাহনসহ লোকজনকে চলাচল করতে হচ্ছে। মৃত্যুর সারি লম্বা হওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যানবাহন। আহত বা পঙ্গুত্ব বরণ করেছে অনেকে।
লক্ষ্মীপুর পৌর বাসটার্মিনাল থেকে সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ১৮ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্নস্থানে দেখা দিয়েছে বড় বড় গর্ত। বিশেষ করে শহরের উত্তর তেমুহনী থেকে জকসিন পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা এমন হয়েছে যে, পিচ ঢালাই এবং মেকাডম সরে গিয়ে এ অংশে গর্ত ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। বৃষ্টিতে জমে থাকে পানি, আর রোদে ধূলোবালিতে একাকার হয়ে উঠে। দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।
সড়কটি চার লেনে উন্নীত করনের আশার বানী শুনিয়ে আসছে লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ। কিন্তু বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছে স্থানীয় বাসিন্দা, গাড়ি চালক, রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ। কাজ বাস্তবায়নের দাবিতে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন, সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। সম্প্রতি ক্ষোভ এবং প্রতিবাদ জানিয়ে সওজ’র নির্বাহী প্রকৌশলীর গায়েবানা জানাযাও পড়েছে স্থানীয় লোকজন। দ্রুত সড়কের কাজ শুরু না হলে কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে জেলার বাসিন্দা এবং রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ। তার পরও দৃশ্যমান কোন পরিবর্তনের খবর নেই।
জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর-নোয়াখলাী মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার যানবাহন চলাচল করে। ঢাকা, চট্রগ্রাম, কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, চাঁদপুর, ফরিদপুর এবং দেশের দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলা ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর সহ ১৫ থেকে ২০টি জেলার মানুষদের এ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে হয়। কয়েক লক্ষ লোকের চলাচলের মাধ্যম এ সড়কটি। এছাড়া মজুচৌধুরীর হাট থেকে প্রতিদিন শত শত বালুবাহী ভারী ড্রাম ট্রাকও এ সড়কের উপর দিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর বাস টার্মিনাল থেকে চন্দ্রগঞ্জ বাজার পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর অংশে ১৮ কিলোমিটার সড়কের চার লেনের ‘উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি)’ পাশ হয়। প্রকল্পে চার লেনের একপাশে ২৪ ফুট করে ৪৮ ফুট এবং মাঝখানে ডিভাইডার হবে। গত ফেব্রুয়ারী মাসের শুরুতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে ঠিকাদার নিয়োগের টেন্ডার প্রক্রিয়া যেন থেমে আছে। তবে, সড়ক ও জনপদ বিভাগ বলছে, টেন্ডার যাচাই-বাছাইয়ের বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ইসলাম মার্কেট এলাকার বাসিন্দা আবদুল মতিন বলেন, গত কয়েক বছর ধরে সড়কটির অবস্থা একেবারে নাজুক। স্থায়ীভাবে সংস্কার করা হচ্ছে না। মাঝেমধ্যে জোড়াতালি দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু সেটাও কোন কাজে আসছে না। কয়েকদিনের মধ্যে পূর্বের অবস্থা দেখা যায়। সংস্কারের নামে যেন ‘তামাশা’ করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। মহাসড়ক ইট দিয়ে সংস্কারকে ‘হাস্যকর’ বলে মনে করছেন তিনি।
গত ১৪ জুলাই সড়ক ও জনপদ অফিসের সামনে মানববন্ধন পরবর্তী গায়েবানা জানাজায় অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন অংশগ্রহণকারীরা।
চার লেনের কাজ দ্রুত শুরু করার দাবি জানিয়ে গত ২০ আগস্ট লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে জামায়াত। এসময় গুরুত্বপূর্ণ এ মহাসড়কটির দুর্ভোগ তুলে ধরে দ্রুত কাজ শুরু করার দাবি জানিয়েছেন জামায়াতের নেতৃবৃন্দ। দ্রুত কাজ শুরু না হলে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের হুঁশিয়ারি দেন তারা।
জামায়াত নেতা ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ভোলা-বরিশালসহ দেশের অধিকাংশ জেলার সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম লক্ষ্মীপুর-নোয়াখালী মহাসড়ক। গত ফেব্রুয়ারি মাসে এ সড়কটি চার লেনের জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়। কিন্তু অদৃশ্য কারণে কাজ শুরু হচ্ছে না। লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারাও কোন নির্দিষ্ট কারণ জানাতে পারছে না। মূলত আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে কাজটি শুরু হচ্ছে না বলে জানতে পেরেছি।
লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. আতাউর রহমান অ আ আবীর আকাশকে বলেন, চার লেনের জন্য ২ টি প্যাকেজে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার জন্য কুমিল্লা অফিস থেকে মূল্যায়ন করা হয় বড় প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগে যাচাই-বাছাইতে সময় লাগে। কুমিল্লা অফিসে যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে।
এমআই