নিজস্ব প্রতিবেদক:
জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমনের সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের আগেই অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সরকারপ্রধান হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে-১ এ শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সুপেরিয়র রেসপন্সিবিলিটি হিসেবে দায়ের করা মামলায় ৪৭তম সাক্ষীর জবানবন্দি পেশ করার দ্বিতীয় অর্থাৎ শেষ দিন এ কথা বলেন তিনি।
আজ বেলা সোয়া ১১টা থেকে দুপুর সোয়া ১টা পর্যন্ত তিনি জবানবন্দি দেন ট্রাইব্যুনালে। এরপর জেরার জন্য বিরতির পর আজ দুপুর ২টার সময় নির্ধারণ করেন আদালত।
ট্রাইব্যুনালের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্রিফিংয়ে নাহিদ ইসলাম জানান, গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগেই অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নতুন সরকারের প্রধান হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।
তিনি বলেন, আমরা ৩ আগস্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে ভাবছিলাম ড. ইউনূসকে সরকারপ্রধান করবো। আমরা আমাদের ভাষায় ৩৫ জুলাই এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা করি। একইসঙ্গে তাকে নতুন সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালনে প্রস্তাব দেওয়া হয়।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, গত বছর ৫ আগস্ট সংবাদ সম্মেলন করে সব রাজনৈতিক বন্দির মুক্তির দাবি জানাই এবং অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার গঠনের দাবি জানানো হয়। আমরা আরও দাবি জানাই যে, কোনো ধরনের সেনাশাসন বা সেনা সমর্থিত শাসন আমরা মেনে নেব না।
জবানবন্দিতে নাহিদ ইসলাম বলেন, আন্দোলনজুড়ে পুলিশ ও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আন্দোলনকারীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। এমনকি হেলিকপ্টার থেকেও গুলি চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে গুলি চালায় ও নির্যাতন করে।
এনসিপির আহ্বায়ক উল্লেখ করেন, এসব হত্যাকাণ্ড নৃশংস ঘটনার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশ ও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান যারা ছিলেন তাদের দায়ী করছি। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্দেশে এসব হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছিল। তারা ক্ষমতা পাকাপোক্ত ও নিরঙ্কুশ করতেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
নাহিদ বলেন, পরে আমরা বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছি, আন্দোলনকারীদের ওপর শেখ হাসিনা হেলিকপ্টার ও লেথাল ওয়েপন ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এ পর্যায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাছে তিনি প্রার্থনা জানান, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের যেন কঠোর শাস্তি হয়।
জবানবন্দির একপর্যায়ে এনসিপির এই আহ্বায়ক বলেন, পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আমরা গত বছরের ৪ আগস্ট শাহবাগে অবস্থান ও বিক্ষোভ করি। ওই দিনই ৬ আগস্ট মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি ঘোষণা করি। তবে সেদিন কারফিউ ঘোষণা করে দেশব্যাপী ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায় সরকার। আমরা জানতে পারি ৬ আগস্ট মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি ব্যর্থ করার উদ্দেশে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। একইসঙ্গে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হবে। এছাড়া আমাদের হত্যা বা গুম করা হতে পারে। এজন্য আমরা মার্চ ঢাকা কর্মসূচি একদিন এগিয়ে ৫ আগস্ট নির্ধারণ করি।
তিনি বলেন, ৫ আগস্ট মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি সফল করার উদ্দেশে সমন্বয়কদের পক্ষে অন্যান্য ছাত্র সংগঠন ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে লিয়াজোঁ করেছিলেন মাহফুজ আলম। আমরা নতুন সরকার গঠনের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা করি। তাকে নতুন সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালনের প্রস্তাবও দেওয়া হয়।
এর আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর বিকেল ২টা ৫৫ মিনিট থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত সাক্ষী হিসেবে নাহিদ ইসলামের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। অবশিষ্ট জবানবন্দি আজ গ্রহণ করেন ট্রাইব্যুনাল।
এমআই