রাফি উজ্জামান, রাবি প্রতিনিধি:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে দিনভর অনশন, ধস্তাধস্তি আর উপ-উপাচার্যকে অবরুদ্ধ রাখার পর মধ্যরাতে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করেছেন শিক্ষার্থীরা। রোববার রাত সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা একযোগে বিক্ষোভ মিছিল বের করে জুবেরী ভবনে আসেন। পরে সেখান থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।
এসময় শিক্ষার্থীরা ‘শিক্ষা আর ভিক্ষা, একসাথে চলে না’, ‘অন টু থ্রি ফোর, পোষ্য কোটা নো মোর’, ‘রক্ত লাগলে রক্ত নিন, পোষ্য কোটা বাদ দিন’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী সুপ্রভা বিনতে রফিক বলেন, ‘আমরা ১৪ জুলাইয়ের মতোই আজ আবার রাজপথে নেমেছি। পোষ্য কোটার চূড়ান্ত বিলুপ্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না।’
দিনভর উত্তেজনা ও হাতাহাতি
এর আগে দুপুর আড়াইটা থেকে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তারা উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করেন এবং উপ-উপাচার্যের গাড়িতে টাকা ছুড়ে মেরে প্রতিবাদ জানান।
বিক্ষোভকারীরা উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাইন উদ্দিনের বাসভবনে তালা ঝুলিয়ে দিলে তিনি ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি। পরে তিনি প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমানকে নিয়ে জুবেরী ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে শিক্ষার্থীরা তাদের বাধা দেন। এসময় শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে, এতে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক আহত হন।বিকেল সোয়া ৪টা থেকে উপ-উপাচার্যসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক-কর্মকর্তাকে জুবেরী ভবনে অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা।
অনশন এবং অসুস্থতা
এর আগে গত ৩২ ঘণ্টা ধরে একদল শিক্ষার্থী প্রশাসন ভবনের সামনে অনশন কর্মসূচি পালন করছিলেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং উপাচার্যের বাসভবনের ফটকে লাথি মেরে ভাঙার চেষ্টা করেন। এসময় অনশনরত দুই শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থরা হলেন- ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী সজিবুর রহমান এবং অজ্ঞাতনামা আরেকজন। তাদের দুজনকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে।
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব মুঠোফোনে বলেন, ‘আগে আমি আমার প্রো-ভিসি, রেজিস্ট্রার এবং প্রক্টরকে ফেরত চাই, তারপরই আলোচনায় বসবো। আমরা এখন পর্যন্ত অত্যন্ত ধৈর্যের পরিচয় দিচ্ছি। কিন্তু এভাবে জিম্মি করে কোনো সিদ্ধান্ত হতে পারে না। আজকে তারা যা করেছে, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাকসু নির্বাচন হবে কিনা, তা শিক্ষার্থীদের আচরণের ওপর নির্ভর করবে। তবে আমি ডাকসু নির্বাচন নিয়ে খুবই আন্তরিক।’
রাত সোয়া ১২ টায় রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করছিলেন এবং পুরো ক্যাম্পাসে উত্তেজনা করছিল।
এমআই